শ্যারন! কোন রকমে উচ্চারণ করল ক্রিস, ওর দৃষ্টি তখনো স্থির হয়ে আছে রেগানের দিকে।
টেলিফোনের দিকে হাত বাড়াতে গিয়ে থামল শ্যারন, দাঁড়িয়ে পড়ল। পেছন ফিরে তাকিয়ে অবশ্য কিছু দেখতে পেল না সে, কিন্তু পরক্ষণেই ওর পায়ের গোড়ালির কাছে রেগানের জিভের ছোবল এসে পড়ল। শ্যারন আর্তস্বরে চেঁচিয়ে উঠল।
ক্রিস ব্যাকুল হয়ে চিৎকার করছে, ডাক্তারকে ডাকো, আসতে বল তাকে–এখনই।
যখন যেদিকে শ্যারন চলতে থাকে, রেগানও অনুসরণ করে চলে সেদিকে। কি ভয়ংকর দৃশ্য।
২.৪
শুক্রবার। ২৯ এপ্রিল।
একজন অত্যন্ত বিখ্যাত নিউরোসাইকিয়াট্রিস্ট এবং ডাঃ ক্লীন রেগানকে পরীক্ষা করছেন। ক্রিস তার বসার ঘরে বসে আছে।
ডাক্তাররা প্রায় আধঘণ্টা ধরে পরীক্ষা করলেন। এই আধঘণ্টাই রেগান বিকট চিৎকার করল। মাঝে মাঝে কুৎসিত গালাগাল। দুবার নিজের দুকান চাপ দিয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগল, যেন হঠাৎ কোন প্রচণ্ড শব্দ শুনছে। দুচোখ ওর গাঢ় রক্তবর্ণ।
সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ ক্লীনকে বললেন, মেয়েটাকে ট্রাংকুইলাইজার দিন। তারপর আমি ওর সঙ্গে কথা বলবো।
রেগানকে পঞ্চাশ মিলিগ্রাম থােরাজাইন দেয়া হল। তেমন কাজ হল না। আরো পঞ্চাশ মিলিগ্রাম দেয়ার পর সে অনেকটা আচ্ছন্নের মত হয়ে পড়ল। অবাক হয়ে তাকাল ডাক্তারদের দিকে। ভয় পাওয়া গলায় বলল, আমার মা কোথায়?
উনি আসবেন এখখুনি। আমরা দুজন ডাক্তার।
কান্না কান্না গলায় রেগান ডাকল, মা! মা! কাঁদছে কেন? তোমার কি ব্যথা লাগছে?
লাগছে।
কোথায় বল তো?
সবখানে–সারা শরীরে আমার ব্যথা! উহ কি যন্ত্রণা!
ক্রিস এসে মেয়েকে কোলে তুলে নিল। ফুপাতে ফুপাতে রেগান বলল, ও আমাকে খুব ব্যথা দেয়। মা ওকে তোমরা থামাও, প্লীজ!
সাইকিয়াট্রিস্ট অত্যন্ত নরম গলায় বললেন, ব্যাপারটা কি বল তো, রেগান?
আমি জানি না। আগে ও আমাকে কত পছন্দ করতো, এখন খালি ব্যথা দেয়।
কে সে?
ক্যাপ্টেন হাউডি। আর … আর …
বল রেগান। বল, আর কি?
মনে হয় আরো কে যেন আমার ভেতরে আছে, আমাকে দিয়ে সে অনেক কিছু করায়!
সে কি ক্যাপ্টেন হাউডি?
জানি না।
অন্য কেউ?
জানি না। আমি সত্যি জানি না!
সাইকিয়াট্রিস্ট এগিয়ে এসে রেগানের হাত ধরলেন। মিষ্টি গলায় বললেন, রেগান, আমি একটা বেশ মজার খেলা জানি। তুমি কি সিনেমাতে কখনো হিপনোটাইজ করা দেখেছো?
হ্যাঁ।
আমি খুব সহজেই মানুষকে হিপনোটাইজ করতে পারি। এখন তোমাকে হিপনোটাইজ করবো। কেমন? এতে তুমি ভাল হয়ে যাবে। এই দেখো তোমার মা বসে আছেন, ভয়ের কিছু নেই।
ক্রিস বলল, ভয়ের কিছু নেই, মা-মণি, ডাক্তার যা বলছেন শোন। লক্ষ্মী, মা আমার।
রেগান আর কোন আপত্তি জানাল না।
জানালায় পর্দা টেনে ঘরকে অন্ধকার করা হল। সাইকিয়াট্রিস্ট পকেট থেকে বের করলেন একটা সোনার চেন। চেনের মাথায় গোল একটা চকচকে জিনিস। সেটা দেখিয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট রেগানকে বললেন, এই চেনটা আমি দোলাবো, তুমি চেয়ে থাকবে এই গোল জিনিসটার দিকে। কেমন?
রেগান মাথা নাড়ল।
তিনি এক হাতে দোলাতে লাগলেন চেনটা, আর অন্য হাতে ছোট্ট একটা পেন টর্চ লাইটের আলো ফেললেন রেগানের চোখে। ভারী ও গম্ভীর গলায় বলতে লাগলেন সম্মােহিত করার কথাগুলো, রেগান, তাকিয়ে থাকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে তোমার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসবে। ঘুম পাবে। খুব ঘুম। খুব শান্তির ঘুম …
রেগান মুহূর্তের মধ্যে ঘুমে নেতিয়ে পড়ল। সাইকিয়াট্রিস্ট অবাক হয়ে বললেন, এত সহজে ঘুমিয়ে পড়বে ভাবিনি।
রেগান বড় বড় শ্বাস নিতে লাগল। ক্রিস পাশেই পাংশু মুখে বসে। ডঃ ক্লীন সিগারেট ধরালেন। সইকিয়াট্রিস্ট বললেন, এখন তোমার ভাল লাগছে, রেগান?
হ্যাঁ। ওর গলার আওয়াজ স্পষ্ট ও নরম, যেন অনেক দূর থেকে ভেসে আসছে।
তোমার বরস কত, রেগান?
বারো।
তোমার ভেতরে কি কেউ থাকে?
মাঝে মাঝে থাকে।
সে কি কোন লোক?
হ্যাঁ।
সে কে?
জানি না।
সে কি ক্যাপ্টেন হাউডি?
জানি না।
সে কি একজন পুরুষ?
জানি না।
এখন কি সে তোমার মধ্যে আছে?
জানি না।
রেগান, আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই। তুমি কি তার সঙ্গে কথা বলতে দেবে আমাকে?
না।
কেন দেবে না?
আমায় ভয় করে।
কিসের ভয়?
জানি না।
আমি যদি ওর সাথে কথা বলি তাহলে ও তোমাকে ছেড়ে দেবে। তুমি কি চাও ও তোমাকে ছেড়ে দিক?
হ্যাঁ, চাই।
বেশ, তাহলে ওকে কথা বলতে দাও।
না।
দাও, লক্ষী মেয়ে। তোমার ভাল হবে। ও ছেড়ে যাবে তোমাকে।
আচ্ছা।
সাইকিয়াট্রিস্ট বিরতি নিলেন কিছুক্ষণের। তারপর গম্ভীর গলায় বললেন, রেগানের ভেতরে যে আছে আমি এখন তার সঙ্গে কথা বলছি। তুমি যদি থেকে থাকো তাহলে তুমিও এখন সম্মােহিত হয়ে আছে। তাহলে অবশ্যই আমার সব প্রশ্নের জবাব তোমাকে দিতে হবে।
রেগানের ঠোঁট নড়ল, কিন্তু কোন শব্দ হল না। সাইকিয়াট্রিস্ট আবার বললেন, তুমি যদি থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তোমাকে আমার সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। তুমি আছো? জবাব দাও, তুমি কি আছ?
নীরবতা। একটা অদ্ভুত কিছু যেন হচ্ছে রেগানের মধ্যে। ওর ঠোঁট দুটো বেঁকে যাচ্ছে। গালের চামড়া কুঁচকে উঠছে। প্রকাণ্ড একটি হাঁ করল রেগান। ওর জিভ ক্রমশ বের হয়ে আসছে। কাঁপছে। ধীরে ধীরে দূষিত হয়ে উঠছে ঘরের বাতাস। পচা উগ্র একটা গন্ধ বেরিয়ে আসছে রেগানের হাঁ-করা মুখ থেকে।
ক্রিসের নড়বার শক্তি নেই। ফিসফিস করে শুধু বলল—
হা ঈশ্বর, হা ঈশ্বর!
সাইকিয়াট্রিস্ট এবার প্রশ্ন করতে লাগলেন অনেকটা ক্রুদ্ধ ভঙ্গিতে, তুমিই কি থাকো রেগানের মধ্যে?