আপনি কি করলেন?
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম–কিছু না। কিছু হয়নি। তখন ও রামাঘরের দরজা দেখিয়ে চেঁচাতে লাগল–ঐ যে দাঁড়িয়ে আছে দরজার কাছে, ঐ যে।
ডাঃ ডেভিড শুকনো গলায় বললেন, খুবই অদ্ভুত কেস। আচ্ছা মিসেস ম্যাকনীল, সে-সময় রেগানের গায়ে জ্বর ছিল?
আমি জানি না। আমি বলতে পারবো না।
চোখ লাল ছিল?
এসব আমাকে শুধু শুধু জিজ্ঞেস করছেন। আমার কিছুই খেয়াল নেই।
ডাঃ ক্লীন বললেন, তারপর কি হল বলুন।
ক্রিস ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। ডাঃ ক্লীন তার ব্যাগ খুলে একটা ট্যাবলেট বের করলেন, এটা খেয়ে নিন, ভাল বোধ করবেন।
ট্রাংকুলাইজার?
হ্যাঁ।
ক্রিস ট্যাবলেটটা হাতে নিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে তাকাল, তারপর মৃদুস্বরে বলল, রেগান তখন অন্য রকম গলায় কথা বলতে লাগল।
পুরুষের গলায়?
হ্যাঁ। খুব ভারি গলা। যেন রাগী কোন পুরুষের কণ্ঠ।
স্পাইনাল ফ্লুইড নেয়া হল সহজেই। রেগান কোন রকম নড়াচড়া করল না। ডাঃ ক্লীন বললেন, সারা রাতে আর জাগবে বলে মনে হয় না। তবুও যদি জেগে ওঠে তাহলে ওকে থােরাজাইন ইনজেকশান দিতে হবে। আমি প্রেসক্রিপশন লিখে যাচ্ছি, আনিয়ে রাখবেন। আর একজন নার্স রাখা দরকার ইনজেকশান দেয়ার জন্যে।
শ্যারন বলল, ইনজেকশান আমি দিতে পারি, ডাক্তার।
খুব লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে সিরিঞ্জে কোন বাতাসের বুদ্বুদ না থাকে।
আমি অনেক ইনজেকশন দিয়েছি। আমি জানি।
তাহলে তো ভালই হল।
রসলিন মেডিকেল বিল্ডিং-এর একটা ঘরে ডাঃ ক্লীন রেগানের স্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা করছিলেন। প্রথমে দেখলেন প্রোটিনের পরিমাণ কত।
স্বাভাবিক।
ব্লাড সেলের সংখ্যা? স্বাভাবিক।
কোনো ফাংগাস ইনফেকশন হয়েছে কি?
না, তা কিছু হয়নি।
আর চিনির পরিমাণ?
ঠিকই আছে। রক্তের দুই-তৃতীয়াংশ পরিমাণ চিনি আছে।
ডাঃ ক্লীন গম্ভীর হয়ে গেলেন। ক্রিস সারাক্ষণই পাশে ছিল। ডাক্তারের ভাবান্তর ওর চোখ এড়াল না। বলল, কিছু বলবেন কি?
মিসেস ম্যাকনীল, আপনার ঘরে কি ড্রাগস আছে? এল এস ডি জাতীয় ড্রাগস? কিংবা এমফিটামিন ট্যাবলেট?
না, ডাক্তার। এগুলো আমি রাখি না।
ডাঃ ক্লীন শুকনো মুখে বললেন, আমার মনে হয়, এখন আমাদের একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমরা কিছু ধরতে পারছি না।
ক্রিস বাড়ি ফিরল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। ক্লান্ত, বিরক্তও কিছুটা। বাড়িতে কেউ নেই। কয়েকবার শ্যারন, শ্যারন বলে ডাকল, কোন জবাব নেই। উইলি আর কালকে ছুটি দেয়া হয়েছে। ওরা ফিরবে রাত আটটার দিকে। কিন্তু শ্যারন রেগানকে ফেলে কোথায় গেল?
দোতালার ঘরে গিয়ে ক্রিস দেখে, রেগান গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন। ঘরের বড় জানালাটি হাট করে খোলা। ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে। নিশ্চয়ই শ্যারনের কাজ। জানালাটা খুলে রাখা ওর উচিত হয়নি। জানালা বন্ধ করে ক্রিস নিচে নেমে এসে দেখে, উইলি ফিরেছে।
কোথায় গিয়েছিলে উইলী?
ম্যডাম, কিছু কেনাকাটা ছিল। তারপর একটা ছবি দেখলাম। কাল আজকে আমাকে বিটলসদের ছবিটা দেখতে দিয়েছে। ও অবশ্য অন্য একটা ছবি দেখতে গেছে।
ভালো, কার্লের তাহলে সুবুদ্ধি হচ্ছে।
ক্রিস টেলিফোন করতে বসল ওর এজেন্টকে। এ কদিনে সবার সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আফ্রিকায় ছবি পরিচালনার ব্যাপারটার কতদূর কি হল সে খোজ নেয়া দরকার। এজেন্টকে পাওয়া গেল না। রাত আটটায় শ্যারন ঘরে ফিরল।
কোথায় ছিলে, শ্যারন?
ও তোমাকে কিছু বলে নি?
কে? কি বলবে?
বার্ক–বার্ক ডেনিংস।
বার্ক! সে আবার এল কোত্থেকে? আমি তো এসে কাউকে দেখলাম না।
শ্যারন অবাক হয়ে বলল, বার্ক এসেছিল তোমার খোজে। আমি তাকে বসিয়ে রেখে ফার্মেসিতে গেলাম থােরাজাইন ইনজেকশান কিনতে। বলে গেলাম, আমি না আসা পর্যন্ত যেন কোথাও না যায়।
ক্রিস অত্যন্ত বিরক্ত হল। কঠিন স্বরে বলল, বার্ককে তুমি এখনো চিনতে পারলে না? ওর মত লোককে কোন দায়িত্ব দিতে আছে কখনো? তুমি যেই বেরিয়েছ অমনি হয়ত সে-ও বেরিয়ে গেছে।
ক্রিস আবার এজেন্টকে টেলিফোন করল। এবারও তাকে পাওয়া গেল না।
উইলি বলল, ম্যাডাম, আপনি কিছু খাবেন? স্যাণ্ডউইচ?
হ্যাঁ, তা আনতে পারো।
কফি দেবো সঙ্গে?
দাও।
অনেকদিন পর ক্রিস টেলিভিশনের সামনে বসল। অতি বাজে প্রোগ্রাম, তবু সে নড়ল না। কার্ল ফিরল রাত সাড়ে নটার পর। তার মুখের ভাব কি কারণে যেন খানিকটা বিষণ্ণ। ক্রিস ঘুমুতে যাওয়ার জন্যে টিভি বন্ধ করে যখন উঠে দাঁড়াল তখন ঘড়িতে রাত পৌনে বারোটা, আর ঠিক তখনি টেলিফোন বেজে উঠল।
ফোন করেছে বার্ক ডেনিংসের ইউনিটের এক সহকারী পরিচালক। তার গলার স্বর ভাঙা।
ক্রিস, খবর পেয়েছো?
কি খবর?
খুব খারাপ খবর। বার্ক ডেনিংস মারা গেছে।
কি বললে?
বাক মারা গেছে, ক্রিস। তোমার বাড়ির উল্টো দিকের রাস্তায় এম স্ট্রীটে তার লাশ পাওয়া গেছে। ঘাড় ভাঙা। তোমার বাড়ির পেছনে যে খাড়া সিঁড়ি আছে, মনে হয় সেখান থেকে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল।
ক্রিসের হাত থেকে রিসিভারটা পড়ে গেল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রেগানের ঘর থেকে ক্রুদ্ধ কর্কশ আওয়াজ ভেসে এল। তারপর মনে হল সিড়ি বেয়ে কেউ যেন ভারী পায়ে নেমে আসছে। ক্রিস ভয়ে আতংকে চেঁচিয়ে উঠল, ডাঃ ক্লীনকে টেলিফোন করো। শ্যারন, ডাঃ ক্লীনকে বল তিনি যেন এখনই আসেন। এখখনি!
কিন্তু শ্যারনের দিকে তাকিয়ে আর কথা বলতে পারল না ক্রিস, একটু নড়তেও পারল না। যেন জমাট বেঁধে গেছে ওর সারা শরীর। শ্যারনের পেছনে রেগান কখন এসে পড়েছে! ধনুকের মত তার সারা শরীর বাকা, মাকড়শার মত হাতে পায়ে হেঁটে ও শ্যারনকে অনুসরণ করে চলছে। লকলক করছে রেগানের জিভ, আর হিস হিস জাতীয় শব্দ করছে।