ডাক্তার দুজন নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলেন। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল নিউরোলজিস্টের কপালে। ডঃ ক্লীন বার বার ঢোক গিলছেন।
ক্রিস দুহাতে চোখ ঢেকে রুদ্ধ স্বরে বলল, ডাক্তার, দয়া করে বলুন–এসব কি।
ক্রিসের কথা শেষ হওয়ামাত্র হঠাৎই যেন অদ্ভুত ব্যাপারটা থেমে গেল। রেগান কুণ্ডলী পাকিয়ে পড়ে গিয়ে কেমন নিঃস্পন্দ হয়ে গেল। তার কঁপা গলা শোনা গেল, আমাকে পুড়িয়ে ফেলছে। উহ, আমাকে পোড়াচ্ছে। মা—মা–
ডাক্তার দূজন এগিয়ে গেলেন। রেগান তখন বিড় বিড় করে কি যেন বলতে লাগল–সম্পূর্ণ অপরিচিতি কোন ভাষায়, বিচিত্র এক সাপ খেলানো সুরে, মিয়ানখয়েছিয়ে … মিয়ানখয়েছিয়ে …
ডাঃ ক্লীন নিচু হয়ে রেগানের হাত ধরলেন। কোমল স্বরে বললেন, লক্ষ্মী মেয়ে, দেখি এখন তোমার অসুবিধাটা কোথায়?
সঙ্গে সঙ্গে রেগান ঝটকা মেরে সোজা হয়ে উঠে বসল। দেখতে দেখতে তার সুন্দর মুখে কদাকার একটা ছাপ পড়ল। কথা বলে উঠল কর্কশ পুরুষ কণ্ঠে। ভারী ও গম্ভীর স্বর, তাতে ঘৃণা আর বিদ্বেষ মেশানো। এই মেয়েটা আমার। এই মেয়ে আমার।
বলতে বলতে হা হা করে হাসল রেগান। বীভৎস এক কুৎসিত হাসি। পর মুহূর্তেই মুখ থুবড়ে বিছানায় পড়ে গেল, যেন কেউ ওকে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
তারপর একটানে নাইট গাউন খুলে ফেলে মুহূর্তের মধ্যে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে পড়ল। ডাক্তার দুজনের দিকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাকাল। হিস হিস করে বলল, কি, কেমন দেখছিস আমাকে? শুতে চাস আমার সঙ্গে? আয়। কাপড় খুলে বিছানায় আয়। খুব মজা পাবি। হি হি হি।
ক্রিস এ দৃশ্য আর সহ্য করতে পারল না। ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল। ডাঃ ক্লীন সহজ ভঙ্গিতে রেগানের হাত ধরতেই ও ফুঁপিয়ে উঠে বলল, প্লীজ, ওকে থামান। ও আমাকে মেরে ফেলছে। ওকে থামান। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। প্লীজ, প্লীজ!
ডাঃ ক্লীন ব্যাগ খুললেন। ইনজেকশান দিয়ে রেগানকে ঘুম পাড়ানো দরকার। নিউরোলজিস্ট দেখলেন, রোগানের সারা শরীর অদ্ভুত ভঙ্গিতে বাঁকা হতে শুরু করেছে। এ রকম দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এটা অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার। রেগানের মুখ থেকে আবারো সেই বিচিত্র ভাষার তুবড়ি ছুটল। ডাঃ ক্লীন বললেন, ওকে আমি লিব্রিয়াম দিচ্ছি। পঞ্চাশ মিলিগ্রাম। আপনি শক্ত করে ধরুন।
লিব্রিয়াম দেয়ার আগেই রেগন জ্ঞান হারাল।
ডাঃ ক্লীন বললেন, মূৰ্ছ গেছে, তাই না?
হ্যাঁ, সেরকমই লাগছে।
কি মনে হয় আপনার?
নিউরাসথেনিয়া হতে পারে।
হিস্টিরিয়া নয়। হিস্টিরিয়াতে শরীর এরকম বার্কতে পারে না।
এটা প্যাথলজির কেস।
আমারো তাই ধারণা। লক্ষণ মিলে যাচ্ছে।
ইনজেকশান শেষ করে ডাঃ ক্লীন কপালের ঘাম মুছলেন। থেমে থেমে বললেন; আমি একটা এল পি করাবো, এখনই এই অজ্ঞান থাকতে থাকতেই। এল পি থেকে কিছু নিশ্চয় বোঝা যাবে।
নিউরোলজিস্ট মাথা নাড়লেন। চলুন, আগে ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলি।
ক্রিস চোখে রুমাল দিয়ে তখনো কাদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। ডাক্তারদের আসতে দেখে নিজেকে কতকটা সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল।
মিসেস ম্যাকনীল, আপনার মেয়ে এখন ঘুমিয়ে আছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের। ওকে বেশি মাত্রায় ঘুমের ওষুধ দিয়েছি। চব্বিশ ঘন্টার মত ঘুমুবে।
ভাল করেছেন, ডাক্তার। আমি লজ্জিত, এ-রকম ছেলেমানুষের মত কান্নাকাটি করেছি। দয়া করে কিছু মনে করবেন না।
না– না। এতে লজ্জিত হওয়ার কি আছে? মা কঁদবেন স্বাভাবিক কারণেই। গোটা ব্যাপারটাই কেমন অদ্ভুত। আমি আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। ইনি ডাক্তার ডেভিড। নিউরোলজিস্ট।
ক্রিস বলল, বলুন ডাক্তার, আপনি কি দেখলেন? আমার মেয়ে এখন পুরো উন্মাদ। ওকে কি কোন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিতে হবে?
ডাঃ ডেভিড শান্ত স্বরে বললেন, আপনার মেয়ের অসুখটা অস্বাভাবিক। এই রকম অবস্থায় সবার আগে সাইকিয়াট্রিস্টের কথাই মনে পড়ে। তবে আমার ধারণা এটা প্যাথলজিরই একটা ব্যাপার।
ঠিক আছে, কিন্তু এখন কি করতে চান?
আমরা একটা এল পি মানে লাম্বার ট্যাপ করবো?
কি করবেন?
স্পাইনাল কর্ড থেকে রস নিয়ে সেটা পরীক্ষা করে দেখবো।
ক্রিস হঠাৎ খাপছাড়া ভাবে বলল, আমাকে একটা কথা শুধু বোঝান। কি করে ও বিছানা থেকে অমন ওপরে ওঠে আর নিচে নামে?
জবাব দিলেন ডাক্তার ক্লীন, এর উত্তর তো আপনাকে আগেও দিয়েছি। এক্সিলারেটেড মটর ফাংশান।
এর কারণ আপনারা জানেন?
না, আমরা জানি না।
লাম্বার ট্যাপ কখন করতে চান?
এখনই। আপনার আপত্তি নেই তো?
আপনাদের যা ইচ্ছা করুন। শুধু আমার মেয়েটাকে ভাল করে দিন। আমি আর কিছুই চাই না।
আমি যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে টেলিফোন করছি।
ক্রিস বলল, কফি খান। কফি দিতে বলি।
হ্যাঁ, বলুন।
লাম্বার ট্যাপের ফলাফল কখন জানবো?
আজই।
ডাক্তার ক্লীন টেলিফোনে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে স্টাডিতে এসে বসলেন। কফির কাপে চুমুক দিয়ে ক্রিসের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেন। রেগানের এই অবস্থা হল কখন থেকে তা জানতে চাইলেন। ক্রিস শান্ত স্বরে বলতে শুরু করল। আজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এর আগের দুদিন ও বেশ ভালই ছিল। আমি ভাবলাম ওষুধ কাজ করছে। তারপর মঙ্গলবার দিন সকালে, আমি রান্নাঘরে বসে কফি খাচ্ছি, তখন হঠাৎ ছুটে এল রেগান। ওকে নাকি তাড়া করছে ক্যাপ্টেন হাউডি। কাঁদতে কাঁদতে বলল, ও বিছানায় শুয়েছিল, হঠাৎ ক্যাপ্টেন হাউডি এসে ওকে চিমটি কাটতে লাগল, তারপর নাকি ওর প্যান্ট টেনে খুলে ফেলতে লাগল। ও তখন আমার কাছে ছুটে পালিয়ে এল।