ফাদার কারাস? যাঁর মা মারা গেছেন?
হ্যাঁ।
উনি জানেন?
জানেন। উনি কিছুদিন আগে সাইকোলজিস্টদের এক সেমিনারে এ বিষয়ে একটা পেপার পড়েছিলেন।
উনি কি সাইকোলজিস্ট?
হ্যাঁ।
শয়তানের উপাসনাটা কি রকম, ফাদার?
ফাদার ডাইয়ার কিছু বলার আগেই মিসেস জো বললেন, ক্রিস, দেখুন কে এসেছে।
ক্রিস তাকিয়েই স্তম্ভিত হয়ে গেল। কেমন ঘোরলাগা অবস্থায় রেগান দাঁড়িয়ে আছে। গায়ের পাতলা নাইট গাউন ভেজা। কার্পেটের অনেকটাও ভিজে গেছে। ক্রিসের মুখে রক্ত উঠে গেল। রেগান কি এইখানে এসে প্রস্রাব করলো? হ্যাঁ, ঈশ্বর। কি হচ্ছে এসব!
ক্রিস দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল মেয়েকে। কি হয়েছে, মা-মণি তোমার? আসো, আমার সঙ্গে আসো।
অতিথিদের কারো মুখেই কথা নেই।
ক্রিস ধরা গলায় বলল, আমার মেয়েটি অসুস্থ, দয়া করে কিছু মনে করবেন।
রেগান হঠাৎ একজনকে লক্ষ্য করে তীব্র গলায় চেঁচিয়ে উঠল, তুমি মরবে, তুমি মারা যাবে আকাশে!
যাকে বলা হল তিনি অ্যাপোলো মিশনের একজন নভোচারী। খুব শিগগিরই তিনি একটা মিশনে যাচ্ছেন। ভদ্রলোকের মুখ ছাইবর্ণ হয়ে গেল। ক্রিস মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, এই কথা তুমি কেন বললে, রেগান? কেন এই কথা বললে?
উত্তরে রেগান বিড় বিড় করে কি যেন বলল। তারপর মনে হল সে ঘুমিয়ে পড়ছে। ক্রিস তাকে নিয়ে উপরে উঠে গেল। অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল রেগানের ঘরে। তারপর একসময় নিচে ফিরে এসে দেখে, অনেকেই বিদায় না জানিয়েই চলে গেছে। যারা আছে তারা ক্রিসকে সমবেদনা জানাতে রয়ে গেছে। রেগান যে এমন অসুস্থ তা তারা জানতো না।
রেগানের কি ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস আছে, মিসেস ম্যাকনীল?
না, কখনোই না। আজই প্রথম দেখলাম।
ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ-বয়সটায় এরকম হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
মিসেস জো কিন্তু কোন কথা বললেন না। তিনি ফায়ারপ্লেসের সামনে চুপচাপ বসে রইলেন। তাঁর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিল তিনি যেন আগুনের মধ্যে কোন এক আলৌকিক দৃশ্য দেখছেন।
নভোচারী ভদ্রলোক এক সময় বিদায় নিলেন। তাঁকে যেতে দেখে অনেকেই উঠে দাঁড়ালেন যাওয়ার জন্যে। পার্টির সুর কোথায় যেন কেটে গেছে। সবার মুখ গম্ভীর। একমাত্র হাসিমুখ ফাদার ডাইয়ারের। তিনি বিদায় নেয়ার আগে রহস্যময় ভঙ্গিতে বললেন, আপনার কোন ছবিতে যদি এমন কোন পাত্রীর দরকার হয় যে খুব খাটো আর পিয়ানো বাজাতে পারে, তাহলে দয়া করে কিন্তু আমাকে জানাবেন!
সবার শেষে উঠলেন মেরি জো পেরিন। ক্রিসের মনে হল তিনি যেন কি একটা বলতে চান। কিন্তু বলতে ইতস্তত করছেন খুব। ক্রিস এক সময় বলল, রেগান যে প্রায়ই প্ল্যানচেট নিয়ে মেতে থাকে ওতে কি কোন ক্ষতি হতে পারে ওর?
মিসেস মেরি দৃঢ় স্বরে বললেন, রেগানের কাছ থেকে ওইজা বোর্ডটা অবশ্যই নিয়ে নেবেন। ছেলেকে গাড়ির চাবি দিয়ে মিসেস জে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললেন। বাইরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গরম করা প্রয়োজন। চাবি নিয়ে ছেলেটা চলে যেতেই মেরি জো বললেন, ক্রিস, আমার সম্পর্কে আপনি কি ভাবেন জানি না, তবে অনেকেই মনে করে আমার কিছু অলৌকিক ক্ষমতা আছে। কথাটা হয়ত সত্যি। আমার মনে হয়, মাঝে মাঝে আমি অনেক কিছু বুঝতে পারি। আমি কখনো পরকাল নিয়ে চর্চা করি না। ওটা খুব বিপদজনক। প্ল্যানচেটও কিন্তু এক ধরনের পরকাল বিষয়ক সাধনা।
ক্রিস সহজ স্বরে বলল, মিসেস জে, প্ল্যানচেট একটা ছেলেমানুষী খেলা। মানুষের অবচেতন মনের কাণ্ড কারখানা।
হয়ত তাই, মিসেস ম্যাকনীল। পরকালের সব চর্চাই হয়ত আসলে অবচেতন মনেরই একটা কিছু, তবু কিছু একটা হয়–কিছু একটা আছে এর মধ্যে। হয়ত এই খেলা থেকেই অবচেতন মনের একটা নিষিদ্ধ দরজা খুলে যায়। অনেক অদ্ভুত ব্যাপার হয় তখন।
আপনি আমাকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন।
ছি ছি, ভয় পাবেন কেন? আমি আজ আসি। খুব চমৎকার পার্টি হয়েছে আপনার। আর রেগান কেমন থাকে জানাবেন।
ক্রিস ক্লান্ত হয়ে ঘুমুতে গেল অনেক রাতে। বসার ঘরে কার্ল তখন কার্পেটের ভেজা জায়গাটা ভিনেগার দিয়ে ঘষছে। উইলি দাঁড়িয়ে আছে পাশে। সে বলল, কার্ল, থাক আজকের মতো। রাত হয়েছে, চলো ঘুমুতে যাই।
কার্ল ঘষতেই থাকল।
ক্রিস নাইট গাউন পরে বিছানায় এলিয়ে পড়ার আগে রেগানের ঘরে উকি দিলো। অকাতরে ঘুমাচ্ছে রেগান। ওইজা বোর্ডটি পাশের টেবিলে পড়ে আছে। ওটা সরিয়ে ফেলা কি উচিত হবে? মেরি জো পেরিন ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। ক্রিস ইতস্তত করতে লাগল। বোধহয় এখন না নেয়াই উচিত। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার। হঠাৎ করে সরিয়ে ফেললে রেগানের মনের ওপর চাপ পড়তে পারে। বেশ খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ক্রিস নিজের ঘরে ফিরে গেল। ঘুমিয়েও পড়ল প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু ধরফড় করে জেগে উঠতে হল পরমুহূর্তেই। পাশের ঘর থেকে আর্তস্বর ভেসে আসছে। অদ্ভুত জান্তব স্বরে রেগান চিৎকার করে চলেছে। ভয়ংকর চিৎকার।
ক্রিস প্রায় অন্ধের মত ছুটে গেল। রেগানের ঘরে আবছা অন্ধকার। প্রথমে ক্রিস ভাল করে কিছু দেখতেই পেল না।
কি হয়েছে মা-মণি? কি হয়েছে?
ক্রিস কাছে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে দেখল, উপুড় হয়ে রেগান বিছানায় শুয়ে সমানে কাঁপছে। মাকে দেখে সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, বিছানাটা কাঁপছে। থামাও মা, থামাও। প্লীজ।
রেগানের ছোট্ট বিছানাটা সত্যিই ভয়ংকর ভাবে কাঁপছে।
প্রান্ত-স্পর্শ
২.১