ও, ফাদার কারাস।
কি করেন উনি?
উনি আমাদের একজন উপদেষ্টা। বেচারা খুব আঘাত পেয়েছে।
কেন, কি হয়েছে?
সেদিন তাঁর মা মারা গেছেন হঠাৎ।
ও।
ব্যাপারটা খুব দুঃখজনক। ভদ্রমহিলা কখন কিভাবে মারা গেছেন কেউ জানতো না। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ঘরে রেডিও বাজছে বলে পাশের অ্যাপার্টমেন্টের কে যেন পুলিশে খবর দিয়েছিল। পুলিশ এসে দেখে এই ব্যাপার।
ক্রিসের সত্যি সত্যি খারাপ লাগল। নিঃসঙ্গ মৃত্যুর চেয়ে কষ্টকর কি আর কিছু আছে?
এই মার্ক, হিটলারের স্পাই। তোর পাছায় আমি একটা আস্ত বাঁশ …
ক্রিসের মুখ ছাইয়ের মত সাদা হয়ে গেল। বার্ক ডেনিংস এসে গেছে। বদ্ধ মাতাল। তেড়িয়া মূর্তি ধরে হলঘরে ঢোকার চেষ্টা করছে। কার্ল আর শ্যারন তাকে সামলাতে গিয়ে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে। ক্রিস প্রায় দৌড়ে ছুটে গেল। বাকের মুখে খিস্তি-খেউড়ের বান ডেকেছে।
এসব কি হচ্ছে, বার্ক?
বার্ক হাসিমুখে বলল, কিছুই না।
এ-রকম অসভ্য কথাবার্তা কি করে বল তুমি?
হা-হা-হা, সাহস করে বলে ফেলি।
বাক, তুমি তো মনে হচ্ছে বদ্ধ মাতাল।
আমি খুব ক্ষুধার্ত ক্রিস।
ক্রিস শান্ত স্বরে বলল, লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার। এখানে দুজন ফাদার এসেছেন।
বাবাজীরাও এসেছেন তাহলে?
দয়া করে ভদ্র ব্যবহার কর। প্লীজ। শ্যারন তোমাকে খাবার দিচ্ছে। রান্নাঘরে বসে খাও। আমি রেগানকে শুইয়ে দিয়ে এসে তোমার খোঁজ নেবো।
রেগান আজ সারাদিন নিচের তলার ঘরে একা একা খেলেছে। হৈচৈ চেঁচামেচি কিছুই করেনি। ক্রিস গিয়ে দেখল, একটা চেয়ারে মাথা নিচু করে রেগান চুপচাপ বসে আছে। চোখ-মুখ কেমন যেন অন্য রকম। ওর এমন গুমোট ভাবটা দূর করবার জন্যেই ক্রিস তাকে বসার ঘরে নিয়ে এল। অতিথিদের একজন অবাক হয়ে বললেন বাহ, কি মিষ্টি মেয়ে!
রেগান সবার সঙ্গে কল্পনাতীত ভাল ব্যবহার করল। শুধু মিসেস জোর সামনে এসে কাঠের পুতুলের মত দাঁড়িয়ে থাকল। মেরি জো হাত বাড়ালেন, কিন্তু কেমন সরু চোখে তাকিয়ে রইল রেগান, নিজে হাত বাড়াল।
মেরি জো হাসতে হাসতে বললেন, খুব সম্ভব আপনার মেয়ে টের পেয়ে গেছে, আমি একজন ভণ্ড মিডিয়াম। হাসিমুখে এই কথা বলে মিসেস জো নিজেই এগিয়ে এসে রেগানের হাত ধরলেন। ক্রিস লক্ষ্য করল, হাতটা ধরেই কেমন যেন অবাক হয়ে গেলেন মেরি জো। রেগানকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছেন। যেন কিছু একটা বুঝতে চেষ্টা করছেন। ক্রিস ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল, ওর শরীরটা ভাল নেই।
হ্যাঁ, যান– ওকে শুইয়ে দিন।
রেগানকে নিয়ে ক্রিস দোতলায় উঠে গেল। মিসেস জো অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলেন রেগানের দিকে। তাঁর চোখে-মুখে কেমন এক আশংকার ছায়া ফুটে উঠছে, ভুরু কুঁচকে আছে।
ক্রিস রেগানকে বিছানায় শুইয়ে গায়ে চাদর টেনে দিল। কোমল স্বরে বলল, ঘুমুতে পারবে তো, মা-মণি?
দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রেগান শান্ত স্বরে বলল, ঘুম? আমি জানি না, মা। ইদানিং আমার ঘুম আসে না।
রেগানের মাথায় চুমু খেয়ে ক্রিস বলল, ঘুমাও, মা-মণি।
ক্রিস ঘরের আলো নিভিয়ে দিল। এখন শুধু জিরো পাওয়ারের একটি নীল আলো জ্বলছে। রেগান মুহূর্তের মধ্যেই কেমন নিঃসাড় হয়ে গেল। ক্রিস ভাবল, হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু নিঃশব্দে ঘর থেকে যখন ও বেরিয়েছে ঠিক তখনই রেগান ফিস ফিস করে বলল, আমার কি হয়েছে মা?
ক্রিস কয়েক মুহূর্ত কোন কথা বলতে পারল না। কি গাঢ় বিষাদ রেগানের কণ্ঠস্বরে! কি শূন্যতা! অনেক সময় লাগল ক্রিসের নিজেকে সামলাতে। এক সময় থেমে থেমে বলল, কিছু হয়নি। নার্ভের অসুখ। সেরে যাবে মা-মণি। এইতো, অনেকখানি সেরেছে।
রেগান জবাব দিল না। ক্রিস ডাকল, মা, মা-মণি!
কোন জবাব নেই। ঘুমিয়ে পড়েছে রেগান। ক্রিস হঠাৎ খেয়াল করল, ঘরটি ভীষণ ঠাণ্ডা। হিটিং কাজ করছে না তাহলে?
মা-মণি, তোমার ঠাণ্ডা লাগছে না তো?
কোন জবাব নেই। রেগান গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। নিচে হলঘরে তখন খুব ফুর্তির ব্যাপার হচ্ছে। ফাদার ডাইয়ার মাখা দুলিয়ে দুলিয়ে গান ধরেছেন,
আবার যখন দেখা হবে দুজনাতে
দেখা হবে দুজনাতে, দেখা হবে …
ক্রিস ফাদার ডাইয়ারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু সিনেটর আর তার বউ পথরোধ করে দাঁড়ালেন। তাঁদের এখন যেতে হচ্ছে।
এত সকাল সকাল যাবেন?
খুব দুঃখিত, ক্রিস। যেতেই হচ্ছে, মার্থার প্রচণ্ড মাথা ধরেছে।
ক্রিস দরজা পর্যন্ত তাঁদের এগিয়ে দিতে গেল। সেখান থেকেই দেখতে পেল, কাল আর শ্যারন ঠেলাঠেলি করে বার্ককে ট্যাক্সিতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছে। বার্ক হাত-পা ছুঁড়ে সমানে চেঁচাচ্ছে। কলি ধাক্কা দিয়ে তাকে ট্যাক্সির মধ্যে ধপাস করে ফেলে দিতেই সে গলা বের করে দাঁত মুখ খিচিয়ে উঠল, শালা, তোর মাকে আমি …
ক্রিস দ্রুত ঘরে চলে এল। ফাদার ডাইয়ার ওকে দেখে হাসিমুখে বললেন, তোমার জন্যে কি গান গাইবো, ক্রিস? আমি এখন শুরু করেছি অনুরোধের আসর।
ক্রিস হাসতে হাসতে বলল, শয়তানের উপাসনা নিয়ে কোন গান যদি আপনার জানা থাকে তাহলে গাইতে পারেন।
ফাদার একটু অবাক হয়েই বললেন, এইসব নিয়ে হঠাৎ তুমি মাথা খারাপ করছ কেন, বল তো?
কে যেন বলছিল অদ্ভুত অদ্ভুত সব জিনিস পাওয়া গেছে ওই হলি ট্রিনিটিতে।
অদ্ভুত না নোংরা? নোংরা সব জিনিসপত্র!
ক্রিস বলল, এই নোংরা জিনিসপত্র দিয়ে কি হয় ওখানে, ফাদার?
আমি ঠিক জানি না। ফাদার কারাস জানেন কিছু-কিছু।