বড় মামা বললেন, তুই এক্ষুনি বের হ। বেশ্যা মাগি। মানুষকে বিপদে ফেলে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা। যা তুই পত্রিকাওয়ালাদের খবর দে!
সকিনা স্যান্ডেল নিয়ে ঝড়ের বেগে বের হয়ে গেল। পরিস্থিতি সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা হওয়ার কথা। তা হলো না। বড় মামা বললেন, আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি শিশি খাওয়া পাবলিক না। আমি বুঝি।
বাবা বললেন, কী ষড়যন্ত্র? কে করছে?
বড় মামা বললেন, ষড়যন্ত্র করছে তোমার মেয়ে। আমার ঘরে রক্ত ফেলে রাখা, সকিনার স্যান্ডেল ট্রাংকে ভরে রাখা–সব তার কাজ। আমার জমির দলিল চুরি করা হয়েছে। এই বাড়ি আমি তন্নতন্ন করে খুঁজব।
বাবা বললেন, অবশ্যই খুঁজবেন। আপনার সঙ্গে আমিও খুঁজব। জমির দলিল হারানো সহজ কথা! ছিঃ ছিঃ কী কেলেঙ্কারি!
বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও দলিলপত্রের কোনো হদিস পাওয়া গেল না। বড় মামা বললেন, কাগজপত্র কোথায় আছে আমি জানি।
বাবা বললেন, কোথায়?
বড় মামা বললেন, তোমার মেয়ে কাগজপত্র রেখেছে বাড়িওয়ালা আহসান সাহেবের কাছে।
বাবা বললেন, তার কাছে কাগজ রাখবে কেন?
বড় মামা বললেন, আমি শিশি খাওয়া লোক না। আমি সব বুঝি।
মা বললেন, কী বুঝেন?
বড় মামা বললেন, তোমার এই মেয়ে আহসান সাহেবের রক্ষিতা। আহসান সাহেব এই মেয়ের জন্যে ঘর খামাখা সাজায়ে দেন? ফ্রি লাঞ্চ বলে জগতে কিছু আছে? জেনেশুনে মেয়েকে দিয়ে বেশ্যাবৃত্তি। ছিঃ ছিঃ!
কথাবার্তার এই পর্যায়ে মা মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে গেলেন।
হতভম্ব বাবা, বড় মামার দিকে তাকিয়ে আছেন। মা যে মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন সেদিকে তার লক্ষও নেই।
ঘরে আমি আর মা। অনেক কষ্টে মাকে বিছানায় তুলেছি। বাবা এবং বড় মামা ব্যস্ত দ্বিতীয় দফা জমির দলিল অনুসন্ধানে। এখন আমার রুমে অনুসন্ধান চলছে। বড় মামা বেতের চেয়ারে বসে আছেন, বাবা খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
সকিনা আবার ফিরে এসেছে। বাড়ির সামনে রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে দুনিয়ার নোংরা কথা বলে যাচ্ছে। প্রতিমা শুনলে খুব মজা পেত। সকিনাকে ঘিরে জনতার যে অংশ দাঁড়িয়েছে তারা খুবই মজা পাচ্ছে। অনেকেই দেখি মোবাইল ফোন উঁচু করে সকিনার ভিডিও করছে। তাকে ঘিরে ভিড় যেভাবে বাড়ছে তাতে মনে হয় কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রাফিক জ্যাম লেগে যাবে। সকিনার কথাবার্তার কিছু নমুনা।
ওই মামা। তুই আমারে কী করছস? সব পাবলিকরে বলব। পাবলিক তুরে কাঁচা খাইয়া ফেলব। টান দিয়া তোর … ছিঁড়ব। তখন কী করবি? কারে …?
.
মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, কী হচ্ছে রে?
আমি বললাম, নাটক হচ্ছে। এই নাটকে আমরা যার যার অংশে অভিনয় করে যাচ্ছি। তোমার ভূমিকা হলো মৃত সৈনিকের। তুমি চুপচাপ শুয়ে থাকো।
মা বিড়বিড় করে কী যেন বললেন। আমি বললাম, সত্যি কথা বলো তো, তুমি বড় মামাকে বাড়ির ওয়ারিশ ছেড়ে দিয়েছ, এমন দলিল কেন করলে? মহৎ সাজার জন্যে? মা, আমরা কেউ মহৎ না।
মা বললেন, ওই দলিলের কথা তুই জানলি কীভাবে? তোকে কে বলেছে?
আমি বললাম, জ্বিন গাইলান এসে বলে গেছে মা।
মা বললেন, তোর মামার ট্রাংক তুই খুলেছিস?
না। গাইলান খুলেছে। ওই প্রসঙ্গ থাক, তুমি রেস্ট নাও।
.
অনুসন্ধান পর্ব সমাপ্ত। বাবা ক্লান্ত শুকনা মুখে চেয়ারে বসে আছেন। বড় মামা বললেন, আমি আহসান বদটার ঘর পরীক্ষা করব। আমি ছাড়ব না। তোমরা চলো আমার সাথে। তোমাদের সামনে মোকাবেলা হবে। লুকাছাপার মধ্যে আমি নাই। লিপি! তুইও চল আমাদের সঙ্গে।
আমি, বাবা আর বড় মামা আহসান সাহেবের ঘরে উপস্থিত হলাম। বাবা ক্রমাগত চোখের পানি মুছছেন। বড় মামার চোখমুখ শক্ত। শুধু আমি শান্ত। আহসান সাহেব অবাক হয়ে বললেন, কী ব্যাপার?
বড় মামা বললেন, আমার কিছু জরুরি কাগজপত্র চুরি হয়েছে। আমার ভাগ্নি লিপি চুরি করেছে। সে লুকিয়ে রেখেছে আপনার এখানে। কাগজপত্রগুলো না পেলে আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে।
আহসান সাহেব শান্ত স্বরে বললেন, লিপি কি বলেছে যে আমার এখানে লুকিয়ে রেখেছে?
বড় মামা বললেন, এখনো স্বীকার করে নি। তবে তার ভাবভঙ্গি এ রকম।
আহসান সাহেব বললেন, অবশ্যই খুঁজে দেখবেন। আমার দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি লিপির সঙ্গে আলাদা কথা বলে জানতে চেষ্টা করি, সে আমার এখানে রেখেছে কি না।
বড় মামা বললেন, জিজ্ঞাস করেন। আমি এখানেই থাকব। আপনার ঘর পরীক্ষা না করে যাব না।
আহসান সাহেব বললেন, অবশ্যই।
আমি এবং আহসান সাহেব ছাদের এক কোনায় এসে দাঁড়িয়েছি। আহসান সাহেবের মুখ হাসি হাসি। হাসি সংক্রামক, কাজেই আমিও হাসলাম। আহসান বললেন, কাগজপত্র চুরি করেছ?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
আমার এখানে রেখেছ?
না।
কোথায় রেখেছ?
লেখক হুমায়ুন স্যারের বাসায়। সেখানে মোস্তফা নামের আমার পরিচিত একজন আছে। হুমায়ূন স্যারের পিওন। তাকে রাখতে দিয়েছি।
আহসান সাহেব বললেন, ভেরি স্মার্ট।
আমি বললাম, আপনাকে যে সাংকেতিক চিঠি পাঠিয়েছি তার অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছেন?
তিনি বললেন, তুমি কোনো সাংকেতিক চিঠি পাঠাও নি। এলোমেলো কিছু কথা লিখে আমাকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছ।
বিভ্রান্ত হয়েছেন?
আমি বিভ্রান্ত হওয়ার মানুষ না। তোমার বাবা কাঁদছেন কেন?
মনের দুঃখে কাঁদছেন। বড় মামা আমাকে বলেছেন আমি নাকি আপনার রক্ষিতা।