একটা সময় আসবে যখন আমি উনার মতোই জানব। শব্দ খেলায় প্রতিবার উনাকে হারাব। শব্দ খেলাটা হচ্ছে–শব্দের মানে বলা। ডিকশনারি দেখে উনি আমাকে পাঁচটা শব্দের মানে জিজ্ঞেস করবেন। প্রতিটি ঠিক উত্তরের জন্যে আমি এক পয়েন্ট করে পাব।
তারপর আমার পালা। আমি ডিকশনারি দেখে তাঁকে পাঁচটা প্রশ্ন করব।
আহসান সাহেব বলেছিলেন বাংলায় অনেক শব্দ আছে যা শুধু ডিকশনারিতে পাওয়া যায় বাস্তবে ব্যবহার নেই। যেমন,
দুশ্চর : যেখানে যাওয়া দুঃসাধ্য।
দৃষ্টরজা : প্রাপ্ত যৌবনা। যেমন, তুমি।
এই বলেই তিনি খুবই লজ্জা পেয়ে গেলেন। তাঁর লজ্জা দেখে আমি পেলাম আনন্দ।
প্রতিমাকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে
প্রতিমাকে নিয়ে আমি সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে এসেছি। ওয়েটিং রুমে বসে আছি। প্রতিমা আমাকে বলেছে, আমি এমন সব কথা বলব যে সাইকিয়াট্রিস্টের মাথা ভনভন করে ঘুরবে।
আমি বললাম, তাতে লাভ কী?
কাউকে ভড়কে দিতে পারলে আমার ভালো লাগে, এইটাই লাভ। আমি তোর আহসান সাহেবকে কী পরিমাণ ভড়কে দিয়েছি এটা জানিস?
না।
তোর মনে নাই তোকে উনি সাভারে নিতে চাইলেন? তুই রাজি হলি না, গটগট করে চলে গেলি। আর আমি উনার গাড়িতে উঠে বসলাম। আমার এক কথা–চাচা, আমি সাভার যাব। আমাকে নিয়ে যেতেই হবে।
আমি শুরু করলাম কান্না। উনি পড়লেন মহাবিপদে। গাড়ির চারপাশে লোক জমে গেল। সবাই জানতে চায় ঘটনা কী?
তারপর?
তারপর কী হলো বলব না। তুই তোর আহসান সাহেবের কাছে জেনে নিস। তবে এই লোক কিন্তু ভালো। একজন ভালো মানুষকে খারাপ বানানো খুব শক্ত।
খারাপ বানানোর চেষ্টা করেছিলি?
হুঁ।
কীভাবে চেষ্টা করলি?
বলব না।
তুই এরকম কেন?
প্রতিমা হাসতে হাসতে বলল, জানি না কেন? সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাচ্ছি, উনি হয়তো বলতে পারবেন আমি এরকম কেন।
আমি বললাম, সাইকিয়াট্রিস্টকে ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা না করে চিকিৎসা নিয়ে তুই ঠিক হয়ে যা।
প্রতিমা বলল, আমি ঠিক হব না। যা আছি তারচেয়ে আরও খারাপ হব। একসময় পাগল হয়ে যাব। পাগল হয়ে গুলিস্তানে লাঠি হাতে ট্রাফিক কনট্রোল করব।
এই বলেই প্রতিমা উঠে দাঁড়াল। কঠিন গলায় বলল, সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাব। চল বাসায় যাই।
দেখাবি না কেন?
প্রতিমা বলল, সাইকিয়াট্রিস্ট যা জানে আমি তারচেয়ে বেশি জানি এইজন্যে দেখাব না। আমার কথা কি তোর বিশ্বাস হয়?
হয়।
আমরা সাইকিয়াট্রিস্টের ঘর থেকে বের হয়ে রিকশায় উঠতে যাব, হঠাৎ দেখি আহসান সাহেবের গাড়ি। তিনি আমাদের জন্যে গাড়ি পাঠিয়েছেন। আমি যে প্রতিমাকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে আসব তা তাঁকে জানাই নি। আমার মনে হয় উনার সাইকিয়াট্রিস্ট বন্ধু জানিয়েছেন।
আমরা দুই বন্ধু তাঁর গাড়িতে উঠে অনেক রাত পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালাম। প্রতিমা সারাক্ষণই আমার ঘাড়ে মাথা রেখে কাঁদল। কেন কাঁদল আমি জানি না।
বড় মামা হোটেলে চলে যাবেন
আজ বুধবার। বড় মামা হোটেলে চলে যাবেন। তার সঙ্গে কী সব যাবে তা আলাদা করা হচ্ছে। মামা ট্রাংক এত হালকা কেন দেখার জন্য তালা খুলেছেন। ট্রাঙ্ক খুলে তার জবান বন্ধের মতো হয়ে গেল। শূন্যট্রাংকে সকিনার এক জোড়া স্যান্ডেল এবং মামার টেবিলের ড্রয়ারে রাখা কনডমের প্যাকেট। এই যা, কিসের প্যাকেট বলে ফেলেছি। সরি।
মামা প্রথমেই আমাকে ডেকে পাঠালেন। থমথমে গলায় বললেন, আমার ট্রাংক কে খুলেছে?
আমি বললাম, তোমার ঘর তালা দেওয়া, ট্রাংক তালা দেওয়া। চাবি তোমার কাছে। কে খুলবে?
মামা বললেন, জরুরি সব কাগজপত্র, জমির দলিল ছিল ট্রাংকে, কিছুই নেই–আছে এক জোড়া স্যান্ডেল।
কার স্যান্ডেল মামা?
কার স্যান্ডেল আমি জানব কীভাবে? এই যে স্যান্ডেল।
আমি বললাম, মনে হচ্ছে সকিনার স্যান্ডেল। ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করি?
মামা মূর্তির মুখ করে বসে রইলেন। সকিনা এসে স্যান্ডেল শনাক্ত করল। তার মুখ আনন্দে উদ্ভাসিত। সে বলল, আপনার এইখানে স্যান্ডেল! আমি কয়দিন ধইরা খুঁজতেছি।
মামা বললেন, তুই আমার ট্রাংকে তোর স্যান্ডেল রেখেছিস?
সকিনা বলল, তুই তুকারি করেন ক্যান?
মামা বললেন, থাবড়ায়ে তোর দাঁত ফেলে দেব হারামজাদি। তুই আমার ট্রাংক খুলেছিস?
সকিনা বলল, হারামজাদি ডাকা শুরু করছেন। রাইতে যখন ঘরে ডাইকা মহব্বত করেন, তখন হারামজাদি ডাক কই ছিল?
মামা বললেন, মাগি চুপ!
সকিনা বড় মামার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল। অকল্পনীয় দৃশ্য। আমি ছুটে ঘর থেকে বের হলাম। মাকে বললাম, ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে মা। গাইলান চলে এসেছে। বাবাকে আজান দিতে বলো।
কী বলছিস তুই!
আমি বললাম, গাইলান সকিনার ওপর ভর করছে। এই কারণে সকিনা বড় মামার গালে চড় দিয়েছে। একটু আগে দেখেছি সকিনা হাতে স্যান্ডেল নিয়েছে, মনে হয় বড় মামাকে স্যান্ডেল দিয়ে মারবে।
ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সকিনা ক্রমাগত চেঁচাচ্ছে। আমারে বিয়া করণ লাগব। বিয়া না করলে আমি ছাড়ুম না। পত্রিকায় নিউজ দিমু। বলুম, আমার পেটে সন্তান। আমি গফরগাঁয়ের মেয়ে। আমারে চিনে না। আফনেরে মামা ডাকি। মামা এমুন হয়?
মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, সকিনা, এইসব কী বলছিস!
সকিনা বলল, আফনের ভাইজানেরে জিগান কী বলতেছি। যদি প্রমাণ হয় আমি মিথ্যা বলেছি, তাইলে আমি মামার কাঁচা গু খামু।