মামার কাছে সপ্তাহে তিন দিন গোঁফওয়ালা অত্যন্ত বলশালী বেঁটে এক লোক আসছে। বড় মামাকে প্রায় নেংটো করে সারা গায়ে তেল মালিশ করে দলাই মলাই করছে। এই সময় মামা আহ্ উহ্ করে ব্যথা এবং আরামের মিলিত ধ্বনি তুলছেন। অতি কুৎসিত দৃশ্য।
আমি মামাকে একদিন বললাম, বড় মামা! তুমি তো ঘোড়া হয়ে যাচ্ছ।
বড় মামা খরখরে গলায় বললেন, ঘোড়া হয়ে যাচ্ছি মানে কী?
ঘোড়াকে প্রতিদিন দলাই-মলাই করতে হয়, তোমাকেও করতে হয়, এইজন্যে বললাম। সরি, ঠাট্টা করেছি।
আমি কি তোমার ঠাট্টা-সম্পৰ্কীয় কেউ?
জি-না মামা।
নিজের চরকায় তেল দাও। পরের চরকায় না।
জি আচ্ছা মামা।
বড় মামা মনে হয় কলেজের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছেন। কলেজে যান না। কলেজের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্যেই হয়তো আগের মতো মাস্টারি প্রশ্ন করেন না।
বড় মামার বিষয়ে আমি এখন ভয়ংকর একটা কথা বলব। পুরোপুরি ভোলাসা করে বলব না। রাখঢাক করে বলব। যার বোঝার সে বুঝবে। না বুঝলে নাই।
না বুঝলে নাই
তাই তাই তাই।
বড় মামার ড্রয়ারে আমি একটা প্যাকেট দেখেছি। কিসের প্যাকেট? এই তো হলো সমস্যা। একটা বড় প্যাকেটে অনেকগুলো ছোট ছোট প্যাকেট। ছোট প্যাকেটে বেলুনের মতো একটা জিনিস থাকে। ফুঁ দিলে বেলুন হয়ে যায়। এখনো পরিষ্কার হয় নি? না হলে কিছু করার নাই।
প্রথম যেদিন প্যাকেট দেখলাম সেদিন তেরটা ছোট প্যাকেট ছিল। এখন আছে এগারটা। অর্থাৎ দুটো ব্যবহার হয়েছে। খুবই ভয়ংকর।
প্যাকেটের সন্ধান কীভাবে পেলাম বলি। মামা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ঘর সবসময় তালা দিয়ে যান। বেশ ভারী তালা।
আমি আমার ঘরের তালাচাবি ঠিক করার সময় একজন চাবিওয়ালাকে খবর দিলাম। মামা তখন ঘরে ছিলেন না। আমি চাবিওয়ালাকে দিয়ে মামার ঘরের তালার চাবি বানিয়ে নিলাম। এখন ইচ্ছা করলেই মামার ঘরে আমি ঢুকতে পারি। মাঝে মাঝে ঢুকি। মামার ঘরে বড় একটা স্টিলের ট্রাংক আছে। সেটাতেও তালা। চাবিওয়ালাকে দিয়ে আমি এই ট্রাংকও খোলাব। সুযোগ পাচ্ছি না। চাবিওয়ালাকে তাহলে মামার ঘরে ঢোকাতে হবে। মা বা সকিনা দেখে ফেলবে।
আমি অপেক্ষা করছি কোনো একদিন মা তার এক বান্ধবীর বাসায় যাবেন। মার এই বান্ধবী মিরপুরে থাকেন। মা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে সকিনাকে সঙ্গে নিয়ে যান এবং সারা দিন থাকেন। মার এই বান্ধবীর নাম মরিয়ম। তিনি নাকি মহিলা পীর। দুনিয়ার মহিলা তাকে ঘিরে থাকে। যেদিন দেখব মা নেই, সকিনা নেই, তারা গেছে মহিলা পীরের দরবারে এবং বড় মামা বাইরে গেছেন, সঙ্গে সঙ্গে চাবিওয়ালাকে টেলিফোন করব। চাবিওয়ালার মোবাইল ফোনের নম্বর আমি রেখে দিয়েছি। বাংলাদেশে বাস করার এই সুবিধা, এখন সবার কাছে মোবাইল ফোন। একসময় দেখা যাবে সব ভিক্ষুকের হাতেও মোবাইল ফোন। তারা ভিক্ষা করতে আসার আগে মোবাইলে কল দিবে–মা, ভিক্ষা নিতে কি। আসব? কিছু মিলবে?
বড় মামাকে আমি ভৌতিক ট্রিটমেন্ট দেব বলে ঠিক করেছি। তিনি চাবি খুলে ঘরে ঢুকে দেখবেন–বিছানায়, মেঝেতে এবং বাথরুমে টাটকা রক্ত। কয়েকবার এ রকম দেখলে তার খবর হয়ে যাবে। এখন টাটকা রক্ত পাওয়াই সমস্যা। বাজারে তো আর মানুষের রক্ত প্যাকেট করে বিক্রি করে না। তবে মানুষের রক্তই যে লাগবে তা না, গরু-ছাগলের রক্ত হলেও চলবে।
আমি লেখক হুমায়ূন স্যারের পিওনকে দিয়ে রক্ত জোগাড় করার পরিকল্পনা করেছি। তার সঙ্গে ভালো খাতির জমিয়েছি। তার নিজের মোবাইল নম্বর সে আমাকে দিয়েছে। মাঝে মাঝে খেজুরেটাইপ কথা বলে খাতির বজায় রাখছি। গতকাল রাত নটার সময় টেলিফোন করে বললাম, মোস্তফা ভাই, কেমন আছেন? সে বিগলিত গলায় বলল, ভালো আছি আপা।
আপনার স্যার কি রেস্টে আছেন?
না। স্যার ম্যাডামের সঙ্গে মুভি দেখেন।
মুভির নাম কী?
নাম তো জানি না।
মোস্তফা ভাই! নামটা জেনে দিবেন। আমিও ওই মুভিটা দেখব। আপনি মনে হয় জানেন না, আমিও আপনার স্যারের মতো লেখক। উনি যেসব মুভি দেখেন। আমারও সেসব দেখা প্রয়োজন। বুঝেছেন?
জি আপা!
আপনার ছেলে কেমন আছে?
ভালো আছে।
নাম বাবু, তাই না?
তার মা বাবু ডাকে। আমি ডাকি হিমু। স্যারের বই থেকে নাম নিয়েছি।
ভালো করেছেন। আপনার কোনো মেয়ে হলে আমাকে বলবেন। আমি আমার বই থেকে নাম দিয়ে দিব।
জি আচ্ছা।
আপনার ছেলে হিমুর ডায়রিয়া হয়েছিল বলেছিলেন, এখন সেরেছে?
জি।
ওরস্যালাইন খাওয়াচ্ছেন? ডায়রিয়ায় বডি ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। ওরস্যালাইন খেয়ে ঠিক করতে হয়। বুঝেছেন?
জি আপা।
পরেরবার যখন দেশে যাবেন আমার সঙ্গে দেখা করে যাবেন। আমি হিমুর জন্যে একটা গিফট কিনে রেখেছি। গিফট নিয়ে যাবেন। হলুদ পাঞ্জাবি, হলুদ পায়জামা।
জি আচ্ছা আপা।
ভালো কথা মোস্তফা ভাই আমাদের স্কুলের একটা সায়েন্স প্রজেক্টে গরু বা ছাগলের রক্ত লাগে। জোগাড় করে দিতে পারবেন?
রক্ত কই পাব আপা?
কী আশ্চর্য মোস্তফা ভাই! আপনি এমন একজন বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, রক্ত কই পাব? আমি জানি নাকি? নিউ মার্কেটের কসাইদের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখেন।
জি আচ্ছা আপা। কতটুক রক্ত লাগবে?
প্রথম দফায় এক লিটার লাগবে। পরে আবার লাগবে। রক্ত জোগাড় হলেই মোবাইলে আমাকে মিসকল দিবেন।
জি আচ্ছা আপা।