তোমার মা বলছিল সে নাকি কি তোমাকে শিখিয়েছে। কী শিখিয়েছে?
ঘোঁৎ বিদ্যা।
তার মানে? রনি কয়েকবার ঘোঁৎ ঘোঁৎ শব্দ করল।
রনির বাবার চোখ কপালে উঠে গেল।
রাত নটার সময় সত্যিকার একজন পুলিশ অফিসার রনির সঙ্গে কথা বলতে এলেন। তিনি আবার কারো সামনে কথা বলবেন না। কথাবার্তার সময় রনি ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবে না। কাজেই রনি তাকে তার ঘরে নিয়ে গেল। তিনি হাসি হাসি মুখে কথা বললেন, খোকা তুমি কেমন আছ?
ভালো আছি।
তুমি কি সবসময় সত্যি কথা বলো, নাকি মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলো?
মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলি।
আমার সঙ্গে সত্যি কথা বলবে, নাকি মিথ্যা কথা বলবে?
জানি না।
না জানলে হবে না। আমার সঙ্গে সত্যি কথা বলতে হবে।
কেন?
কারণ আমি পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে সত্যি কথা বলতে হয়। আচ্ছা এখন লোকটা সম্পর্কে বলো। লোকটার বয়স কত?
বয়স কত আমি জানি না। জিজ্ঞেস করিনি।
অনুমান করে বলো।
আমি অনুমান করতে পারি না।
লোকটা কি তোমার বাবার বয়সী না তার চেয়ে বড়?
কোন বাবা? আসল বাবা না নকল বাবা।
পুলিশ অফিসার অবাক হয়ে বললেন, কী বলছ এসব! আসল বাবা নকল বাবা কী?
আমি যে বাবার সঙ্গে থাকি তিনি নকল বাবা। আসল বাবা মারা গেছেন।
বলো কী।
রনি বলল, আমার যে মাকে দেখছেন উনিও নকল।
পুলিশ অফিসার হতভম্ব গলায় বললেন, ভালো যন্ত্রণায় পড়লাম তো!
রনির খুব মজা লাগছে। পুলিশ অফিসারকে যন্ত্রণায় ফেলে দেয়া সহজ কাজ না। সে অবশ্যি এরকম একটা সিনেমা দেখেছিল যেখানে বাচ্চা একটা ছেলে ঘাপ্ত পুলিশ অফিসারকে নানান যন্ত্রণায় ফেলে দেয়। শেষে পুলিশ অফিসারের সঙ্গে ছেলেটার খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এই পুলিশ অফিসারের সঙ্গেও হয়তো রনির বন্ধুত্ব হবে। এই পুলিশ অফিসার হাসিখুশি মানুষ। আর সবচে মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি হাসতে হাসতে হঠাৎ হাসি বন্ধ করে অবাক হয়ে তাকাতে পারেন।
রনি বলল, আপনার নাম কী?
পুলিশ অফিসার বললেন, আমার নাম আফসার। আফসার উদ্দিন।
আপনি কি খুব বড় অফিসার?
আমি ছোট অফিসার। পুলিশ ইন্সপেক্টর, গোয়েন্দা বিভাগের লোক।
গোয়েন্দা বিভাগ মানে কী?
আমরা সাদা পোশাকে থাকি।
সাদা পোশাকে থাকেন কেন?
কেউ যেন আমাদের চিনতে না পারে।
কেউ চিনতে পারলে কী হবে?
আফসার উদ্দিন দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, উফ খোকা, চুপ করো!
চুপ করব কেন?
আমি চুপ করতে বলছি এইজন্যে চুপ করবে।
আপনি চুপ করতে বলছেন কেন?
তোমার প্রশ্ন শুনতে ভালো লাগছে না, এইজন্যে চুপ করতে বলছি।
আমার প্রশ্ন শুনতে আপনার ভালো লাগছে না কেন?
আফসার উদ্দিন হতাশ চোখে তাকিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলেন। রনির মজা লাগছে। এই পুলিশ অফিসারের সঙ্গে সে একটা খেলা খেলছে। খেলার নাম–প্রশ্ন প্রশ্ন খেলা। এই খেলাটা সে শিখেছে লুতপাইনের কাছে।
রনির দাদাজান এলেন অফিসার চলে যাবার পর পর। তিনি রনিকে আড়ালে ডেকে থমথমে গলায় বললেন, ঘটনা কী?
রনি বলল, জানি না।
সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র হচ্ছে বুঝতে পারছিস?
সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র কাকে বলে?
আরে গাধা, সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রও বুঝিস না!
ইংরেজিতে বলো, ইংরেজিতে বললে বুঝব।
রনির দাদা অতি বিরক্ত হয়ে বললেন, ফালতু ইংরেজি স্কুলগুলি তো বড় যন্ত্রণা করে। মাতৃভাষা কিছুই শেখায় না। এখন আমি সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের ইংরেজি পাব কই! মূল ব্যাপার হচ্ছে, ওরাই সাপ ওরাই ওঝা।
কারা সাপ কারা ওঝা?
তোর ফলস বাবা-মা। ওরাই নিজের লোক পাঠিয়ে তোকে কিডন্যাপ করিয়েছে, আবার ফেরত দিয়ে গেছে।
কেন করেছে?
কেন করেছে এখনো আমার কাছে ক্লিয়ার না, তবে ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আমার জন্যে অবশ্যি সুবিধা হলো।
কী সুবিধা?
কাস্টডি মামলা করব। তোর ফলস বাবা-মা তোকে ঠিকমতো রাখতে পারছে না। সন্ত্রাসী কিডন্যাপ করে নিয়ে যাচ্ছে…
রনি বলল, যিনি নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি তো সন্ত্রাসী না। আর কিডন্যাপ করেও নেন নি।
তুই চুপ থাক। নিজ থেকে খবরদার একটি কথাও বলবি না। ব্যারিস্টার যা শিখিয়ে দেবে তাই বলবি। এর বাইরে কিছু বললে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব।
দাদাজান তুমি দুষ্ট বুড়ো।
দুষ্টামির তুই দেখেছিস কি? আসল দুষ্টামি তো শুরুই হয়নি।
তিনি আনন্দে হাসতে লাগলেন। পা দোলাতে লাগলেন। রনির মনটা খারাপ হলো–আবার মামলা-মোকদ্দমা শুরু হবে। আবার কোর্টে যেতে হবে। জজ সাহেব মায়া মায়া গলায় বলবেন–খোকা, তুমি কার সঙ্গে থাকতে চাও?
রনির দাদাজান যাবার আগে রনির কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন, তোর ফলস পিতা-মাতা এখন বুঝবে–হাউ মেনি রাইস হাউ মেনি পেডি।
রনি বলল, হাউ মেনি রাইস হাউ মেনি পেডির মানে কী?
দাদাজান অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন, ইংরেজি স্কুলে পড়ে তোর লাভটা কী হলো? সহজ ইংরেজিও তো জানিস না। হাউ মেনি রাইস হাউ
মেনি পেডির মানে হলো কত ধানে কত চাল।
রনি বলল, কত ধানে কত চালের মানে কী?
এত কথা বলতে পারব না। এখন থেকে তোর পেছনে থাকবে ডাবল স্পাই। একটা কালো রঙের ভক্সওয়াগন গাড়ি তোকে ছায়ার মতো ফলো করবে।
দরকার নেই দাদাজান।
দরকার আছে কি না সেটা আমি দেখব। মোদ্দাকথা ফুটবল এখন আমার কোর্টে।
মোদ্দাকথার মানে কী দাদাজান?
এত মানে বলতে পারব না। তোদের স্কুলগুলি আছে কী জন্যে? এরা দেখি কিছুই শিখায় না। কাড়ি কাড়ি টাকা নেয়, পড়াশোনা লবডংকা।
লবড়ংকা মানে কী?
চুপ।
রনি স্কুলে গেল মন খারাপ করে। স্কুলে রওনা হবার সময় দেখে, একটা কালো রঙের ভক্সওয়াগন গাড়ি সত্যি সত্যি তাদের পেছনে পেছনে আসছে।