তিনি রনিকে জিজ্ঞেস করলেন, এই খেলনাটা কি ব্যাটারিতে চলে?
রনি বলল, না।
আফসারউদ্দিন বললেন, ব্যাটারি ছাড়া এটা কীভাবে হচ্ছে?
রনি বলল, আপনি তো ডিটেকটিভ। আপনি বের করুন।
সায়েন্সের ব্যাপার তো বুঝতে পারছি না। জিনিসটা খুবই ইন্টারেস্টিং।
পাখিটার পানি খাওয়া বন্ধ করার কোনো উপায় আছে?
হাত দিয়ে ধরলে পানি খাওয়া বন্ধ হবে। ছেড়ে দিলে আবার পানি খাওয়া শুরু করবে।
আফসারউদ্দিন এসেছেন রনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। এখন তার কাজ হচ্ছে কিছুক্ষণ পর পর হাত দিয়ে ধরে পাখির পানি খাওয়া বন্ধ করা, আবার হাত ছেড়ে দিয়ে পানি খাওয়ানো শুরু করা। রনি রকিং চেয়ারে দোল খেতে খেতে ভদ্রলোকের কাণ্ড দেখছে এবং বেশ মজা পাচ্ছে। কোনো বয়স্ক মানুষকে সে বাচ্চাদের খেলনা নিয়ে এভাবে খেলতে দেখে নি।
রনি বলল, আপনার একটা জিনিস কিন্তু আমার কাছে আছে।
আফসারউদ্দিন বললেন, কী জিনিস?
আপনার নকল দাড়ি। আজ যাবার সময় নিয়ে যাবেন।
আমার নকল দাড়ি তোমার কাছে গেল কীভাবে?
আপনি চিন্তা করে বের করুন কীভাবে আমার কাছে গিয়েছে। আপনি ডিটেকটিভ মানুষ। ডিটেকটিভদের অনেক বুদ্ধি হয়। ফেলুদার অনেক বুদ্ধি?
ফেলুদা কে?
ফেলুদা কে আপনি জানেন না?
না তো।
খুব নাম করা ডিটেকটিভ।
জানি না তো।
ফেলুদার খুবই বুদ্ধি। যত বড় ক্রিমিনাল হোক ফেলুদার হাতে ধরা পড়বেই। আপনি না এসে আমার কাছে যদি ফেলুদা আসতেন, তাহলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বলতে পারতেন কোন সবুজ গাড়িটা নাজমা ম্যাডামের রিকশাকে ধাক্কা দিয়েছে। উনি সঙ্গে সঙ্গে সবুজ গাড়ি ড্রাইভারকে অ্যারেস্ট করে ফেলতেন।
আফসারউদ্দিন অবাক হয়ে বললেন, সবুজ গাড়ির ব্যাপারটা কী? এখানে সবুজ গাড়ি কোত্থেকে এল?
রনি বলল, সেটা আমি আপনাকে বলব না। আপনি খুঁজে বের করুন।
আর শুনুন, পাখির এই খেলনাটা আপনি নিয়ে যান। এটা আমি আপনাকে দিলাম। উপহার।
আরে না, তোমার খেলনা আমি কেন নেব? কী বলো তুমি!
আপনাকে এই খেলনাটা নিতেই হবে। আপনি যদি না নেন, আমি আপনার সঙ্গে কোনো কথাই বলব না।
আশ্চর্য ছেলে তো!
আমি মোটেই আশ্চর্য ছেলে না। আমি আমার বাবার মতো হয়েছি।
তোমার বাবা কি সবাইকে খেলনা দিয়ে বেড়াতেন?
বাবার কোনো জিনিস দেখে কেউ যদি বলতো–সুন্দর! বাবা তাকে সঙ্গে সঙ্গে সেই জিনিস উপহার হিসেবে দিয়ে দিতেন। ইদরিস চাচা আমাকে বলেছেন।
খোকা শোনো, তুমি খুবই ভালো ছেলে, তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তোমার খেলনা আমি নেব না। আমার যখন খেলনাটা দেখতে ইচ্ছা করবে, তখন এসে দেখে যাব। এখন আমার প্রশ্নের জবাব দাও।
প্রশ্নের জবাব দিতে আমার ভালো লাগে না।
ভালো লাগে না এমন অনেক কাজ আমাদের কিন্তু করতে হয়। তোমার দুধ খেতে ভালো লাগে না, তোমাকে কিন্তু দুধ খেতে হয়। তাই না?
হ্যাঁ।
যা প্রশ্ন করি সত্যি জবাব দিও। তুমি তো প্রচুর মিথ্যা বলো।
মিথ্যা বলি?
অবশ্যই। আজ যে লোকটার কথা বললে, মাথায় ক্রিকেটারদের হ্যাট, তার গায়ে লাল চাদর, সবই মিথ্যা। তোমাকে ছড়া বলেছে–টাবে টাবে দুটা ভাত খাবে। এই ছড়ার ব্যাপারটা তুমি জানো। ইদরিস মিয়া তোমার বাবার বিষয়ে গল্প করার সময় এই ছড়ার কথা বলেছে। লোকটার বর্ণনাও তুমি ইদরিসের কথা অনুযায়ী করেছ। যাতে সবাই মনে করে তুমি তোমার বাবাকেই রিকশায় দেখেছ। তুমি তোমার বাবাকে নিয়ে একধরনের রহস্য তৈরি করার চেষ্টা করছ।
রনি রকিং চেয়ারে দুলুনি বন্ধ করে তাকিয়ে আছে। এখন তার কাছে মনে হচ্ছে লোকটার বুদ্ধি ফেলুদার মতো না হলেও খুব কমও না।
রনি।
জি।
ইদরিস মিয়া যে বলে তোমার ঘরে সে তোমার বাবাকে দেখেছে তা কি তুমি জানো?
জানি।
সে কী দেখেছে সেটা জানো?
কী দেখেছে?
সে তোমাকেই দেখেছে। তুমি আমার নকল দাড়ি পরে চাদর গায়ে এখন যেভাবে দোল খাচ্ছ সেইভাবে দোল খাচ্ছিলে। ভালো কথা, লাল চাদরটা কোথায়?
রনি বলল, কাবার্ডে আছে।
আফসারউদ্দিন বললেন, আমার ধারণা একই লোক তোমাকে রিকশায় করে দুবার ঘুরেছে। লোকটার নাম বলো।
নাম জানি না।
তার উদ্দেশ্যটা কী তুমি কি জানো?
না।
উদ্দেশ্য খারাপ না এইটুকু বোঝা যাচ্ছে। লোকটা একটা খেলা খেলার চেষ্টা করছে। সে তার খেলাতে তোমাকে নিয়ে নিয়েছে। তুমি নিজেও খেলছ। কেন খেলছ তুমি জানো না।
রনি বলল, আপনার বুদ্ধি ফেলুদার মতোই।
আফসারউদ্দিন ভুরু কুঁচকে বললেন, ফেলুদা ব্যাপারটা কী আমাকে বুঝিয়ে বলো তো।
রনি বলল, আপনাকে একটা বই দিয়ে দেব। বইটার নাম গ্যাংটকে গণ্ডগোল, বইটা পড়লেই আপনি বুঝবেন।
বইটা কি এখন দেবে?
হ্যাঁ।
বেশ তাহলে দাও আমি চলে যাই।
আর প্রশ্ন করবেন না?
না, বেশি প্রশ্ন করতে আমার ভালো লাগে না।
আফসারউদ্দিন আবারো পাখিটা নিয়ে খেলতে শুরু করলেন। রনি এসে তার পাশে দাঁড়াল। আফসারউদ্দিন লজ্জিত মুখে বললেন, পাখির পানি খাওয়ার বিষয়টা বুঝতে পারছি না বলে এটা নিয়ে খেলে যাচ্ছি। কোনো জিনিস না বুঝতে পারলে আমার অস্থির লাগে। তোমার ব্যাপারটাও বুঝতে পারছি না বলে অস্থির লাগছে।
রনি বলল, শুরুতে আমি ভেবেছিলাম আপনি ভালো ডিটেকটিভ না, এখন মনে হচ্ছে ভালো ডিটেকটিভ।
আফসারউদ্দিন বললেন, আমি যে ভালো ডিটেকটিভ তার প্রমাণ দেব? তুমি যে লোকটির সঙ্গে রিকশায় করে ঘুরেছ, তার নাম তুমি জানো, তাকে তুমি চেনো। মিথ্যা করে বলেছ তাকে তুমি চেনো না। লোকটার নাম হাব্বত আলি। এই বাড়িতে আগে এসেছিল।