এই ছেলে। এই।
রনি থমকে দাঁড়াল। প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের গলা। রনিদের স্কুলের সব ম্যাডামকেই আপা বলা যায় কিংবা মিস বলা যায়। শুধু প্রিন্সিপ্যালকে ম্যাডাম বলতে হয়। ইনি খুবই রাগী।
নাম কী তোমার?
রনি।
কোন ক্লাস?
ফোর্থ গ্রেড।
কোন গ্রুপ?
বি গ্রুপ।
বারান্দায় হাঁটছ কেন?
বাথরুমে যাচ্ছি ম্যাডাম।
বাথরুমে যাচ্ছ মানে? বাথরুম তো এদিকে না।
সরি, আমি ভুলে গেছি।
বাথরুম কোন দিকে ভুলে গেছ? এর মানে কী?
Is anything wrong with you?
No Madam.
এসো আমার ঘরে এসো।
রনি প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডামের সঙ্গে হাঁটতে শুরু করল। তার ভয় লাগা উচিত কিন্তু কেন জানি মোটেই ভয় লাগছে না। বরং মজা লাগছে। মজা লাগার কারণ হচ্ছে, প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম রনির মিথ্যা কথাটা বিশ্বাস করেছেন। রনি যখন বলেছে, বাথরুম কোথায় আমি ভুলে গেছি, তখন প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম রাগ করার বদলে অবাক হয়ে তাকিয়েছেন। এই যে এখন ম্যাডাম তার সামনে বসে আছেন, ম্যাডামের চোখে কোনো রাগ নেই। তাঁর চোখ অবাক অবাক।
বাথরুম কোথায় তুমি ভুলে গেছ?
জি ম্যাডাম।
এখন কি মনে পড়েছে?
ইয়েস ম্যাডাম।
এরকম ভুল কি তোমার প্রায়ই হয়?
জি।
কী রকম ভুল হয় বলো তো?
ক্লাসের ছেলেমেয়েদের আমি মাঝে মাঝে চিনতে পারি না।
বুঝতে পারছি না। উদাহরণ দিয়ে বলো।
আমাদের ক্লাসে একটা মেয়ে আছে, তার নাম লুতপা, তাকে আমি মাঝে মাঝে চিনতে পারি না।
বলো কী! তুমি এই ব্যাপারটা তোমার বাবা-মাকে বলেছ?
না।
বলো নি কেন?
বাবা-মা তো আমার সঙ্গে থাকে না। কীভাবে বলব?
তারা কোথায় থাকেন?
তারা মারা গেছেন।
মাই গড! তুমি এসব কী বলছ? তোমার নাম কী? আবার বলো তো।
রনি।
ও আচ্ছা, তুমি সেই ছেলে। তোমাকে তো চিনি। দুদিন পর পর তোমাকে নিয়েই থানা পুলিশ নানা সমস্যা।
সরি ম্যাডাম।
তুমি সরি হচ্ছ কেন। সমস্যা তো তুমি কর নি। তুমি কি কিছু খাবে? কোক পেপসি সেভেন আপ?
কোক খাব।
আমার ফ্রিজেই কোকের একটা ক্যান থাকার কথা। দাঁড়াও তোমাকে দিচ্ছি। ক্লাসে বসে খেও না। টিফিন পিরিয়ড়ে খাবে।
ইয়েস ম্যাডাম।
যাও এখন ক্লাসে যাও।
রনি ক্লাসে ঢুকল। সে এত দেরি করেছে, তারপরেও মিস কিছুই বললেন না। তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলেন। সে যখন বসতে যাচ্ছে তখন লুতপাইন বলল, এতক্ষণ লাগল কেন?
রনি জবাব দিল না। লুতপাইন অকারণে কথা বলে, তার সব কথার জবাব দেবার কোনো দরকার নেই। বরং ম্যাডাম বোর্ডে কী লিখছেন সেটা দেখা অনেক দরকার।
লুতপাইন আবারো কথা বলল, এই তোমার কি শরীর খারাপ?
রনি সেই প্রশ্নেরও জবাব না দিয়ে টেবিলে তার খাতা খুলতে গিয়ে দেখে টেবিলের এক কোনায় একটা কার্ড। কার্ড খুলে দেখল সেখানে লেখা
Please forgive me
Lutopa
এটা একটা সরি কার্ড। রনি লুতপাইনকে দেবার জন্যে একটা সরি কার্ড ব্যাগে নিয়ে ঘুরছে আর উল্টা লুতপাইনই একটা সরি কার্ড দিয়েছে। তারটা দেয়া হয়নি। রনি বলল, তুমি সরি কার্ড দিয়েছ কেন?
লুতপাইন বলল, আমি যে সবসময় তোমাকে বিরক্ত করি এই জন্যে।
রনি বলল, তুমি সবসময় আমাকে বিরক্ত কর কেন?
লুতপাইন খুব সহজ গলায় বলল, Mity be আমি তোমাকে Love করি এইজন্যে।
রনির খুবই মেজাজ খারাপ হলো। মেয়েটা কী অসভ্য কথাই না বলছে। মিসের কাছে নালিশ করে দিলে কেমন হয়?
রনি ফিসফিস করে বলল, এইসব অসভ্য কথা আমাকে বলবে না। এইসব খুব খারাপ কথা।
লুতপাইন বলল, Love করা খারাপ?
হ্যাঁ খারাপ, এইসব বড়দের ব্যাপার।
আমি যখন বড় হব তখন তোমাকে Love করতে পারব?
আমার সঙ্গে আর কথা বলবে না। প্লিজ।
লুতপাইন ফিসফিস করে বলল, বড় হয়ে আমি কী করব জানো? বড় হয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করব।
রনি একদৃষ্টিতে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ভাব করছে যে সে লুতপাইনের কোনো কথাই শুনতে পাচ্ছে না।
লুতপাইন বলল, আমি বাবাকে বলেছি যে বড় হয়ে তোমাকে বিয়ে করব। বাবা বলেছেন, Ok.
রনি কঠিন গলায় বলল, চুপ।
মিস তখন রনির দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যালো রনি, তুমি দেখি ক্রমাগত কথা বলে যাচ্ছ। ক্লাসের সময় কথা বলা ঠিক না রনি।
রনি বলল, সরি মিস।
মিস লুতপাইনকে কিছুই বলেন নি, তারপরেও লুতপাইন দাঁড়িয়ে অবিকল রনির মতো বলল, সরি মিস।
ক্লাসের সবাই হেসে ফেলল। এমনকি মিস নিজেও হাসলেন।
টিফিন টাইমটা রনির খুব খারাপ কাটে। তখন তার প্রধান চেষ্টা থাকে লুতপাইনের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকা। সেটা কখনো সম্ভব হয় না। লুতপাইন খুঁজে খুঁজে বের করে ফেলে। আজ রনি ঠিক করেছে সে এমনভাবে লুকিয়ে থাকবে যেন লুতপাইন কিছুতেই তাকে খুঁজে না পায়। টিফিনের ঘণ্টা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রনি বইয়ের ব্যাগ নিয়ে ছুটে বের হয়ে গেল।
চট করে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল। যা ভাবছে তাই। লুতপাইন তার দিকে তাকিয়ে দ্রুত ব্যাগ গোছাচ্ছে। কী সর্বনাশ!
স্কুল কম্পাউন্ডে থাকা যাবে না। যেখানেই যাবে লুতপাইন তাকে খুঁজে বের করবে। স্কুল কম্পাউন্ডের বাইরে চলে যেতে হবে। দারোয়ান সেটা করতে দেবে না। গেটে আটকাবে। দারোয়ানকে বলতে হবে গেটের বাইরে আমার গাড়ি আছে, গাড়িতে আমার স্কেল। আমি স্কেল আনব। দারোয়ান রনির ড্রাইভারকে চেনে। রনি দেখেছে এই দুজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করতে করতে চা খাচ্ছে। কাজেই দারোয়ান তাকে ছেড়ে দেবে। সে করবে কী টিফিনের সময়টা গাড়িতে বসে থাকবে। টিফিন পিরিয়ড শেষ হলে স্কুল কম্পাউন্ডে ঢুকবে। একটা সমস্যা অবশ্যি থেকেই যায়–লুতপাইন তাকে খুঁজে না পেয়ে দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতে পারে। এই মেয়ের যা বুদ্ধি!