বেশিও হতে পারে।
ইদরিস টেনশন কমানোর জন্যে রান্নাঘরে ঢুকে পরপর দুকাপ চা এবং এককাপ কফি খেল। রনির বাবা (বর্তমান বাবা) ঘুমুবার আগে কড়া এককাপ কফি খান। কড়া কফি খেলে সবার ঘুম কাটে উনার নাকি ভালো ঘুম হয়। সেই কফি ইদরিস নিজেই নিয়ে যায়। আজো তাই হলো। ইদরিস কফি হাতে উপস্থিত হলো। মজিদ সাহেব বললেন, খবর সব ভালো?
ইদরিস বলল, জি।
রনি ঘুমিয়ে পড়েছে?
জানি না। বাতি নিভা।
বাতি নেভা থাকলেও খেয়াল রাখবে। এই বয়সের বাচ্চারা মাঝরাতে জেগে উঠে কম্পিউটারে গেমস খেলে।
জি আচ্ছা খেয়াল রাখব।
ইদরিসের চলে যাবার কথা। সে চলে গেল না। মজিদ সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে লাগল। মজিদ সাহেব বললেন, কিছু বলবে ইদরিস?
ইদরিস নিচু গলায় বলল, জি।
বলো।
ইদরিস মাথা চুলকাতে লাগল। কিছু বলল না। মজিদ সাহেব অসহিষ্ণু গলায় বললেন, চুপ করে আছ কেন? কথা বলো। কিছু কি ঘটেছে?
জি ঘটেছে।
কী ঘটেছে?
বললে আপনে বিশ্বাস যাইবেন না। ভাববেন আমার মাথা খারাপ।
আমি কী ভাবব সেটা পরের ব্যাপার। তুমি ঘটনা বলো।
ইদরিস পুরো ঘটনা বলল। মজিদ সাহেব ভুরু কুঁচকে ফেললেন। তার মানে তিনি বিশ্বাস করছেন না। ইদরিস বলল, আপনে কোরান মজিদ আনেন, কোরান মজিদ চুঁইয়া বলব আমি যা বলেছি সবই সত্য।
তুমি দেখেছ রনির মৃত বাবা রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে?
জি।
তিনিও তোমাকে দেখলেন?
জি আমার দিকে তাকায়া হাসছেন।
শুধু হেসেছেন? কথা বলেন নি?
কথাও বলেছেন। (এখন ইদরিস কিছু মিথ্যা বলা শুরু করেছে। গল্প বলার সময় সামান্য কিছু মিথ্যা বলা যায়। এতে দোষ হয় না।
মজিদ সাহেব কঠিন গলায় বললেন, উনি তোমার সঙ্গে কী কথা বলেছেন?
উনি বলেছেন, ইদরিস ভালো আছ?
তুমি কী বললে?
আমি কিছু বলতে পারি নাই। আমার তখন জবান বন্ধ। (এই কথা সত্যি। ইদরিসের মুখের কথা আসলেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রথম মিথ্যার পর সত্যি বলায় দোষ কাটা গেল।
মজিদ সাহেব বললেন, তারপর কী হলো?
তখন আমার মাথা চক্কর দিয়া উঠল।
উনি আর কিছু বললেন না?
জি, শেষ একটা কথা বলেছেন।
শেষ কথাটা কী?
শেষ কথাটা হইল–ইদরিস আমার ছেলের দিকে লক্ষ রাখবা। তার যেন কিছু না হয়।
কথা এইটুকুই?
জি না, আরো আছে।
পুরো কথা শেষ কর।
উনার শেষ কথা ছিল, আমার ছেলের যদি কিছু হয়, তোমাদের খবর আছে। আমি শাস্তি দিব।
মজিদ সাহেব বললেন, তোমাদের মধ্যে যখন এত আলাপ-আলোচনা হচ্ছিল, তখন রনি কোথায় ছিল?
হাত মুখ ধুইতে ছিল।
তুমি কি এই ঘটনা নিয়ে রনির সঙ্গে আলাপ করেছ?
জি না।
যাক এই একটা কাজ ভালো করেছ। খবরদার! এই ঘটনা নিয়ে কারো সঙ্গেই কথা বলবে না।
জি আচ্ছা।
তোমার যা হয়েছে তার নাম মাথা গরম। এর বেশি কিছু না। বুঝেছ?
জি বুঝেছি।
এই বিষয় নিয়ে তুমি কারো সঙ্গেই কোনো কথা বলবে না। বাঙালির স্বভাব হলো, একজন ভুত দেখলে বাকিরাও ভূত দেখতে থাকে।
ইদরিস বলল, আমার জবান বন্ধ। আমি কারো সঙ্গেই কোনো কথা বলব না।
সবচেয়ে ভালো হয় যদি তুমি কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে দেশ থেকে ঘুরে আসো। এতে মাথা ঠাণ্ডা হবে।
জি আচ্ছা।
এখন সামনে থেকে যাও। যা বলেছি মনে রাখো, কারো সঙ্গে এই আলাপ করবে না।
ইদরিস বলল, আমি যদি এই আলাপ করি তাহলে কাঁচা গু খাই।
মজিদ সাহেব বললেন, কাঁচা গু পাকা গু কোনোটাই খেতে হবে না। ওই প্রসঙ্গে আলাপ না করলেই হলো।
[সেই রাতেই মজিদ আলাপটা করল বাবুর্চির সঙ্গে। তাকে কিরা কসম কাটালো সে যেন কাউকে না বলে। তার পরপরই আলাপ করল বাড়ির দুই ড্রাইভারের সঙ্গে। তাদেরকে আগে কিরা কসম কাটিয়ে নিল। সবার শেষে আলাপ করল বাড়ির দারোয়ানদের সঙ্গে। বাড়ির দুই দারোয়ানই বলল, এখানে যে ভৌতিক কিছু আছে তা তারা
হাঁটাহাঁটির শব্দ পাওয়া যায়। একজন
একবার রাত তিনটার সময় পরিষ্কার দে
দিয়ে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তার মু
গায়ে টর্চের আলো ফেলতেই লোকটা মিটি]–[এই প্যারাতে একটু মিসিং আছে]
লুতপাইন আজ ক্লাসে এসেছে
লুতপাইন আজ ক্লাসে এসেছে। চারদিন ক্লাস মিস দিয়ে আজ এসেছে। নিশ্চয় কোনো অসুখ-বিসুখ হয়েছে। তাকে দেখাচ্ছেও ফ্যাকাশে। মাথায় স্কার্ফ বাঁধা। স্কার্ফ বাঁধার জন্যেই হয়তো বেশি রোগা রোগা লাগছে। লুতপাইন বারবার তাকাচ্ছে রনির দিকে কিন্তু রনি এমন ভাব করছে যে সে দেখতে পাচ্ছে না। লুতপাইন যে চারদিন স্কুলে আসে নি তাতেও রনির কিছু আসে যায় নি। এখন বৈশাখ মাস। অতিরিক্ত গরমে অনেকের অসুখ-বিসুখ হয়। লুতপাইনেরও হয়েছে। তাতে কিছু যায় আসে না।
লুতপাইন রনির দিকে ঝুঁকে এসে বলল, এই শোনো, আমার জ্বর আর গলা ব্যথা হয়েছিল।
রনি ভাব করল যেন সে শুনতে পায়নি। সে চেয়ার ছেড়ে মিসের কাছে গিয়ে বলল, মিস বাথরুমে যাব।
মিস বললেন, যাও।
এই মিস ভালো। রনি যদি অনেক দেরি করে ফিরে, তাহলেও তিনি কিছু বলবেন না। রনির আসলে বাথরুম পায়নি। লুতপাইনের কথা না শোনার জন্যেই সে বের হয়েছে। এই মেয়েটির ওপর আজ তার খুব রাগ লাগছে। মেয়েটির জন্যে সে সরি কার্ড লিখেছিল, মেয়েটি আসে নি বলে কার্ড দিতে পারে নি। কার্ডটা এখনো আছে। কিন্তু রনির আর দিতে ইচ্ছে করছে না। এলিয়েনদের ছবিটাও আছে। ছবিটা অবশ্যি দেয়া যায়।
রনি স্কুল করিডোরে হাঁটছে। তার বেশ মজা লাগছে। সব ছাত্রছাত্রী ক্লাসে বসে আছে। সে শুধু হেঁটে বেড়াচ্ছে। কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সে একজন অদৃশ্য মানব। মাঝে মাঝে তার অদৃশ্য মানব হতে ইচ্ছা করে। অদৃশ্য মানব হবার কোনো মন্ত্র থাকলে ভালো হতো। এইচ জি ওয়েলস-এর ইনভিসিবল ম্যান বইটা আরেকবার পড়ে দেখতে হবে।