আমি বললাম, না। সে মাঝে মাঝে আমার এখানে বেড়াতে আসে।
এর কি কোনো নাম আছে?
আমি তাকে একটা নামে ডাকি। আপনি আপনার পছন্দমতো নাম দিতে পারেন।
আমি নাম রাখলাম, অম্বু।
অম্বু তো পানির আরেক নাম। হাতির নাম পানি মিয়া রাখা কি ঠিক?
ঠিক হোক না-হোক এর নাম অন্তু।
মৃন্ময়ী এখন কী করছে জানিস? অম্বুকে গোসল দিচ্ছে। তার গায়ে বালতি বালতি পানি ঢালা হচ্ছে এবং স্পঞ্জ দিয়ে ডুলা হচ্ছে। বিষয়টাতে অঙ্কুর তেমন আপত্তি আছে বলেও মনে হচ্ছে না। সে চারপায়ে খুঁটি গেড়ে দাঁড়িয়ে মহানন্দে শুঁড় দোলাচ্ছে।
আমি বারান্দায় বসে লিখছি এবং এই মজার দৃশ্য দেখছি। লেখা বন্ধ করে মনায়ীকে বললাম, হাতিদের গায়ে মাটির যে প্রলেপ থাকে সেটা হাতিদের জন্যে জরুরি। তারা ইচ্ছে করেই গায়ে কাদা মাখায়। শরীরের তাপ ধরে রাখার জন্যেই এই ব্যবস্থা।
মৃন্ময়ী বলল, আমার কাছে জ্ঞান ফলাবেন না।
কাজেই জ্ঞান ফলানো বন্ধ। আমি মৃন্ময়ীর আশেপাশে ঘুরছি অজ্ঞানী মূর্খসম।
আচ্ছা মায়ীকে যে আমার খুব পছন্দ হয়েছে–এটা কি তুই আমার চিঠি পড়ে বুঝতে পারছিস? বুঝতে পারার তো কথা।
মৃন্ময়ীর যে আমাকে খুব পছন্দ এটা কি স্পষ্ট হয়েছে?
তোকে অন্ধকারে রেখে লাভ নেই, আসল কথা শোন–মৃন্ময়ী ঠিক করেছে সে আর শহরে ফিরে যাবে না। এইখানেই থাকবে। বিয়ে ছাড়া আমাদের এখন আর উপায় কী? হা হা হা।
মৃন্ময়ীর সঙ্গে বিয়ের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শেষ করে আমি ট্রি হাউসে উঠে বিকট চিৎকার দিয়েছি। আমি বলেছি–
I am the happyest man
in the whole universe.
আমার চিৎকার শুনে গাছের সব পাখি উড়ে চলে গেছে। ওরা আর ফিরে আসবে এরকম মনে হয় না।
এতক্ষণ নিজেকে নিয়েই বকবক করলাম, এখন তোর কথা শুনি। নিশুর মামলা সালেহ ইমরান নামের এক ব্যারিস্টার পরিচালনা করতে আসছেন শুনে ভালো লাগল। তোর কি মনে আছে বলাকা সিনেমাহলে জাজমেন্ট অ্যাট নুরেমবার্গ ছবি দেখে আমরা দুজন কী মুগ্ধই না হয়েছিলাম! বিখ্যাত সব আইনজ্ঞ। কী কঠিন তাদের জেরা!
নিশুর মামলার জেরাপর্ব দেখার শখ আছে। আমি চলে আসব। কিছুদিন নগরের ধুলাময়লা গায়ে মেখে প্রত্যাবর্তন।
মৃন্ময়ীরও অনেক গৃহস্থালী কেনাকাটা আছে। সে আবার বলে দিয়েছে তার প্রতিটি কেনাকাটার সময় আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে।
নতুন কিছু কি লিখছিস? সায়েন্সফিকশানের চমৎকার একটা আইডিয়া আমার মাথায় আছে। ধার নিবি? দশ এগারো বছরের একটি কিশোর। তার মামা জার্মানি থেকে তার জন্যে উপহার হিসেবে একটা ক্যামেরা এনেছেন। বিশেষ ধরনের ক্যামেরা… বাকিটা সাক্ষাতে বলব।
ভালো থাকিস। পৃথিবীর সবচে মায়াবতী মেয়েটিকে আমার কাছে পাঠানোর জন্যে ধন্যবাদ।
ইতি–
কঠিন গাধা
সালেহ ইমরান কাঠগড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন
সালেহ ইমরান কাঠগড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার ভঙ্গি শান্ত। মতিনের কাছে মনে হচ্ছে, কলেজের প্রফেসর কালো কোট পরে ডায়াসে উঠছেন। বক্তৃতা দেবেন। বক্তৃতার বিষয়বস্তু সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা। কিংবা প্রেমের কবিতায় রূপকের ব্যবহার।
নিশুর একপাশে মতিন বসে আছে। অন্যপাশে মৃন্ময়ী। মতিনের পাশে কঠিন গাধা আশরাফ। নিশুকে অস্থির মনে হচ্ছে। মৃন্ময়ী নিশুর হাত ধরে আছে। মৃন্ময়ীর চোখ স্থির। সে পলক পর্যন্ত ফেলছে না। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
সালেহ ইমরান শান্তভঙ্গিতে বললেন, আপনার নাম খলিল?
প্রধান আসামি খলিল বলল, জি স্যার, ডাকনাম চুন্ন।
আসামিকে মোটেই নার্ভাস মনে হচ্ছে না। তার মাথার চুল আঁচড়ানো। মুখ ক্লিনড শেভড। তবে নতুন উকিল দেখেই হয়তো সরু চোখে তাকাচ্ছে।
আপনি জবানবন্দিতে বলেছেন, নিশু আপনাকে আপোসের প্রস্তাব দিয়েছে?
জি স্যার।
প্রস্তাব কোথায় দিয়েছে?
হোটেলে। বাড়ির সামনেই হোটেল আছে। বিসমিল্লাহ হোটেল।
হোটেলে আপনি কী করছিলেন?
খানা খাচ্ছিলাম।
বাড়ির সামনেই হোটেল। বাড়িতে খানা না খেয়ে হোটেলে খাচ্ছিলেন কেন?
সাথে আমার দুই বন্ধু ছিল। এদের নিয়ে একসঙ্গে খানা খেলাম। বন্ধুবান্ধব নিয়ে সবসময় বাড়িতে যাওয়া যায় না।
কী দিয়ে খানা খাচ্ছিলেন? আইটেম কী কী ছিল?
আইটেম স্যার মনে নাই।
আপনার প্রতিটি ঘটনা মনে আছে। নিশু কী কী প্রস্তাব দিল মনে আছে, আইটেম মনে নাই কেন?
স্যার এখন মনে পড়েছে। ঝাল চিকেন ফ্রাই। বিফ ভুনা, ডাল।
মাছের কোনো আইটেম ছিল না?
জি-না।
পেট ভরে খেয়েছেন?
জি।
রানা ভালো ছিল?
ঐ হোটেলের রান্না স্যার ভালো।
সালেহ ইমরানের ঠোঁটের কোনায় সামান্য হাসির আভাস দেখা দিল। সেই হাসি তিনি দ্রুত মুছে ফেলে বললেন, আপনি জবানবন্দি দিয়েছেন যে, নিশুর ঘরে তিন বন্ধু নিয়ে ঢুকেছেন। খাওয়া-দাওয়া করেছেন। আপনি কিছুক্ষণ আগে বিসমিল্লাহ হোটেলে ঝাল চিকেন ফ্রাই, বিফ ভুনা এবং ডাল দিয়ে ভরপেট খেয়েছেন। আবার খেতে বসে গেলেন? আধাঘণ্টার ভেতর দুইবার লাঞ্চ!
খলিল সামান্য হকচকিয়ে গেল।
মতিন নিশুর কানের কাছে মুখ নিয়ে চাপা গলায় বলল, বাঘের বাচ্চার হাতে পড়েছে। আমার সিক্সথ সেন্স বলছে, ইমরান সাহেব এই হারামজাদাকে ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলবেন। হারামজাদার রক্ত চেটে খাবেন।
খলিল নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, নিয়ম রক্ষার মতো দুই এক লোকমা মুখে দিলাম। দাওয়াত করে এনেছে, না খেলে খারাপ দেখায়।
তারপর আপনার জবানবন্দিতে যা দেখলাম, আপনার ভাষাতেই বলছি, আপনি সেক্স করলেন।