টেলিফোনে কাল রাতে আমি মার সঙ্গে কথা বলেছি। মা টেলিফোন করেছিলেন, আমি টেলিফোন ধরেছি। মার সঙ্গে আমার কী কী কথা হলো আমি এখন তা লিখব। আমার সবকিছু মনে থাকে। আজ থেকে একমাস পরেও যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আমি বলতে পারব। একমাস পার হয়ে গেলে বলতে পারব। কি-না জানি না। পরীক্ষা করে দেখি নি। মা বলল, হ্যালো।
আমি বললাম, হ্যালো।
মা বলল, কী করছ?
আমি বললাম, কিছু করছি না।
মা বলল, আমি যে এতদিন বাইরে থাকছি তোমার খারাপ লাগছে না?
আমি বললাম, না।
মা বলল, তুমি কি আমাকে মিস করো না?
আমি বললাম, না।
মা বলল, আমি কিন্তু তোমাকে মিস করি।
আমি বললাম, তুমি কি বাবাকেও মিস করো?
মা বলল, হ্যাঁ।
আমি বললাম, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। বাবাকে মিস করলে তুমি বাবাকে ছেড়ে যেতে না।
মা বলল, তোমার বয়স কম, তুমি অনেক কিছু বুঝবে না।
আমি বললাম, বুঝিয়ে দাও। Be my teacher.
মা টেলিফোন রেখে দিল। আমি রুবিক কিউব নিয়ে খেলতে বসলাম। রুবিক কিউব হলো–
A puzzle consisting of a plastic cube covered with coloured squares that you turn to make each side of the cube a different colour.
রুবিক কিউবটি আমাকে দিয়েছেন ফারুক। তিনি বলেছেন, এই পাজল। সমাধানের সর্বনিম্ন সময় তিন মিনিট। ভিয়েতনামের একটি ছেলে এই রেকর্ড করেছে। তার নাম গিনিজ বুক অফ রেকর্ডসে উঠেছে।
আমি বললাম, ছেলেটার নাম কী?
উনি নাম বলতে পারলেন না।
আমার রেকর্ড পাঁচ মিনিট তিন সেকেন্ড। আমি প্রতিদিনই পাঁচবার এই পাজলের সমাধান করি। মার সঙ্গে কথা বলে টেলিফোন রাখার পর আমি যে পাঁচবার সমাধান করেছি তার সময় হলো–
৬ মিনিট ১০ সেকেন্ড
৬ মিনিট ০ সেকেন্ড
৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ড
৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ড
৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড
আমার বাবা (কিংবা বাবা না) সালেহ ইমরান একজন ব্যারিস্টার। তিনি যতক্ষণ বাসায় থাকেন ততক্ষণ বই পড়েন। আগে তাঁর সঙ্গে সপ্তাহে দুইদিন আমি মুভি দেখতাম। এখন একদিন দেখি। গত সপ্তাহে যে মুভি দেখেছি তার নাম–
A sound of Thunder.
টাইম ট্রাভেলের গল্প। লেখকের নাম Ray Bradbury.
বাবা (কিংবা বাবা না) বলেছেন ইনি খুব বড় একজন সায়েন্সফিকশান লেখক। আমার কাছে তাকে বড় সায়েন্সফিকশান লেখক মনে হয় নি। কারণ বড় লেখকরা ভুল করেন না। তিনি ভুল করেছেন, টাইম ট্রাভেল করতে হলে আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিতে যেতে হবে। সেটা সম্ভব না। আলোর গতি ধ্রুব। সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল।
আমি বাবাকে (কিংবা বাবা নাকে) বললাম, লেখক ভুল করেছেন।
বাবা বললেন, বিজ্ঞানের সত্যের চেয়ে চিন্তার শুদ্ধতাটা দেখতে হবে। তাঁর চিন্তা শুদ্ধ।
বিজ্ঞানের সত্য আবার ভুল। বিজ্ঞানের মিথ্যা কিছু নেই। বিজ্ঞানের সবই সত্য। আমি বললাম, তুমি ভুল কথা বলেছ।
তিনি বললেন, হতে পারে আমি ভুল বলেছি।
আমি বললাম, কেউ ভুল বললে আমার খারাপ লাগে।
তিনি বললেন, খারাপ লাগাটা কমাতে হবে। মানুষ ভুল করবেই।
আমি বললাম, কেন?
তিনি বললেন, কারণ মানুষ কম্পিউটার না।
আমি বললাম, মানুষ অবশ্যই কম্পিউটার। কম্পিউটার ইনফরমেশন প্রসেস করে, মানুষও করে। মানুষের ব্রেইন হলো হার্ডডিস্ক। মানুষের চিন্তা হলো কমান্ড।
তিনি বললেন, আমি এই নিয়ে তোমার সঙ্গে তর্কে যাব না। কারণ এই বিষয় আমি জানি না।
আমি বললাম, কে জানেন?
তিনি বললেন, আলোচনা এখানেই বন্ধ। প্লিজ স্টপ।
আমার বন্ধু মতিন একজন লেখক। তিনি Ray Bradburyর চেয়ে বড় লেখক। কারণ তিনি ছোট ছোট ভুল করেছেন, বড় ভুল করেন নি। তিনি বইতে লিখেছেন পিপড়াগুলি পেছন দিকে হাঁটা শুরু করল। পিপড়া পেছন দিকে হাঁটে না। প্রাণী জগতের কেউই পেছনে হাঁটতে পছন্দ করে না। কারণ তাদের পেছনে কোনো চোখ নেই। মানুষও পেছন দিকে হাঁটতে চায় না। মোটরগাড়ি পেছনে যায়। ব্যাক গিয়ার দিলেই মোটর পেছনে যায়। Gear হলো–
Machinery in a vehicle that turns engine power into movement forwards or backwards.
উনার বইতে আরেকটা ভুল হলো, তিনি লিখেছেন—–অন্ধকার দেখতে হলে আলো লাগে। আলো ছাড়া অন্ধকার দেখা যায় না।
আলোর অভাবই অন্ধকার। তাহলে আলো দিয়ে আমরা কীভাবে অন্ধকার দেখব? উনি যে সব ভুল করেছেন, আমি সবই হলুদ মার্কার দিয়ে দাগ দিয়েছি। যেদিন তার সঙ্গে দেখা হবে সেদিন তাঁকে ভুলগুলি দেখাব। তার সঙ্গে আমার টেলিফোনে কথা হয়েছে।
আমি বললাম, হ্যালো।
তিনি বললেন, হ্যালো কমল।
আমি বললাম, হ্যালো নতিম।
তিনি বললেন, হ্যালো লমক।
আমি বললাম, যে হারিয়ে গেছে তাকে কি পাওয়া গেছে? আপনার পরিচিত যে মেয়ে!
তিনি বললেন, তোমাকে কে বলেছে?
আমি বললাম, বাবা বলেছেন। (আমার বলা উচিত ছিল বাবা হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন বলেছেন। সেটা না বলে আমি বলেছি, বাবা বলেছেন। এটা ভুল।)
তিনি বললেন, তাকে পাওয়া যায় নি।
আমি বললাম, পুলিশের উচিত কুকুর দিয়ে খোঁজা। কারণ কুকুর হাফ কিলোমিটার দূরের গন্ধও পায়।
তিনি চুপ করে রইলেন।
আমি বললাম, তাকে যদি কোনোদিন খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে কি আপনার খারাপ লাগবে?
তিনি বললেন, তোমার যদি প্রিয় কেউ হারিয়ে যায়, তোমার কি খারাপ লাগবে?
আমি বললাম, মানুষের কেন খারাপ লাগে, কেন ভালো লাগে এটা আমি জানি না। আমি চিন্তা করছি। চিন্তা করে যেদিন বের করব তখন আপনার প্রশ্নের জবাব দেব!