তুমি যে-কোনো জায়গায় যে-কোনো অবস্থায় নিশ্চিন্ত থাকবে। তার মানে তুমি রাজি না?
না। শুরুতে নিমরাজি হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ তৌহিদার কথা মনে পড়ল। নিশু বলল, তৌহিদা কে?
মতিন বলল, বড় আপাদের সঙ্গে থাকে। আশ্রিতা টাইপের একজন। আমার দুলাভাইয়ের দূর সম্পর্কের বোন। বড় আপার খুব ইচ্ছা আমি তাকে বিয়ে করি।
তুমি রাজি?
নিমরাজি। আমি কোনো কিছুতেই রাজি হই না। সবকিছুতেই নিমরাজি হই!
ঠিক আছে।
নিশু শোন, একটা কবিতা ব্রেইনে শর্ট সার্কিট হয়ে গেছে। দুটা লাইন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বাকিটা আসছে না। শর্ট সার্কিটটা খুলে দাও।
লাইন দুটা বলো।
সুর করি বারবার পড়ি বর্ষা…
নিশু যন্ত্রের মতো বলল–
সুর করি বারবার পড়ি বর্ষা অভিসার
অন্ধকার যমুনার তীর।
নিশিথে নবীনা রাধা নাহি মানে কোনো বাধা
খুঁজিতেছে নিকুঞ্জ কুটির।
নিশু টেলিফোন অফ করে শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।
চিঠি এসেছে হাতে হাতে
চিঠি এসেছে হাতে হাতে। যে ভদ্রলোক চিঠি নিয়ে এসেছেন তিনি অস্থির প্রকতির তিনি হয় একজন গুরুত্বপূর্ণ লোক, আর তা না হলে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন। তার মতো একজন মানুষ ডাকপিয়নের ভূমিকায় নেমেছে। এটা তিনি নিতে পারছেন না। ভদ্রলোকের চেহারা সুন্দর। গোলগাল মুখ। গায়ের রঙ দুধেআলতায়। বয়স ত্রিশ পঁয়ত্রিশ। হালকা নীল রঙের হাওয়াই শার্ট পরেছেন। তাঁকে শার্টটায় খুব মানিয়েছে।
মতিন চিঠিটা হাতে নিয়ে বলল, ঠিক আছে। চিঠি রিসিভ করলাম।
অতি গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি ভুরু কুঁচকে বললেন, শুধু রিসিভ করলে হবে না। আমার সামনে চিঠি পড়বেন। এবং চিঠির জবাব দেবেন। সেই জবাব আমি নিয়ে যাব।
এখনই চিঠি পড়তে হবে?
অবশ্যই।
মতিন হাই তুলতে তুলতে বলল, আমি তো ভাই এখন চিঠি পড়তে পারব। আমার চিঠি পড়ার নির্দিষ্ট সময় আছে। আমি রাতে শোবার আগে আগে চিঠি পড়ি। অন্য সময় পড়ি না।
এখন পড়বেন না?
না। আর শুনুন, এভাবে আঙুল তুলে আমার সঙ্গে কথা বলবেন না। আঙুল তুলে কথা আমার পছন্দ না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেই আঙুল তুলে কথা বলা মানায়, আর কাউকে মানায় না।
গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা এবার চুপসে গেল। মতিনের মনে হলো, ফুলানো একটা গ্যাস বেলুন থেকে খানিকটা গ্যাস বের হয়ে গেল। আরো কিছু গ্যাস বের করতে পারলে ভালো হতো। সেই সুযোগ কি এই লোক দেবে?
মিস্টার মতিন, এটা একটা আর্জেন্ট লেটার। স্যার আমাকে জবাবটা হাতে হাতে নিয়ে যেতে বলেছেন।
মতিন বলল, জবাব না নিয়ে গেলে উনি কি আপনাকে মারবেন? চড় থাপ্পড় ঘুসি?
এইসব আপনি কী বলছেন? আমি একজন লইয়ার। স্যারের জুনিয়র।
লইয়াররা চড় থাপ্পড় খায় না? ধরুন এখন যদি আমি আপনার গালে ঠাশ করে একটা চড় দিয়ে বসি, আপনি কী করবেন? মামলা করবেন? মামলাটা কোন ধারায় হবে?
আমি আপনার কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি এই ভঙ্গিতে কথা বলছেন কেন?
মতিন বলল, আপনি গাড়ি নিয়ে এসেছেন? লোকটা হতাশ গলায় বলল, জি।
তাহলে গাড়িতে বসুন। অপেক্ষা করুন। আমি হাত-মুখ ধোব। নাশতা খাব। চা খাব। তারপর আপনার স্যারের আর্জেন্ট লেটার পড়ে জবাব লিখে দেব। আমি চাই না আপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ একজন লইয়ার তার বসের কাছে। চড় থাপ্পড় খাক। আপনার নাম কী?
আহমেদ ফারুক।
আহমেদটাকে সামনে এনেছেন কেন? আহমেদ পেছনে থাকার কথা না? আপনার বাবা-মা নিশ্চয়ই আপনার নাম রেখেছিলেন ফারুক আহম্মেদ। আপনি স্টাইল করে আহম্মেদকে করেছেন আহমেদ। এবং সেই আহমেদ নামের সামনে নিয়ে এসেছেন। ঘোড়ার পেছনে থাকে গাড়ি। আপনার বেলায় সামনে গাড়ি পেছনে ঘোড়া।
মতিন সাহেব, আমি আপনার সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বা আগ্রুমেন্টে যাব। আমি গাড়িতে অপেক্ষা করি না। আপনি জবাবটা দিয়ে দিন।
আপনি আমার ঘরেও অপেক্ষা করতে পারেন। তবে আপনার মতো মানুষ আমার এখানে বসে আরাম পাবেন না। সারাক্ষণ ভুরু কুঁচকে থাকবেন। ঘরে ফ্যানও নেই। এরচে এসি চালিয়ে গাড়িতে বসে গান শোনা ভালো। না-কি আমার এখানেই বসবেন?
আমি গাড়িতেই অপেক্ষা করব।
গাড়িতে চা পাঠাব? আমাদের মেস বাড়িতে লেবু চা ভালো বানায়।
থ্যাংকস, চা লাগবে না।
মতিন অনেক সময় নিয়ে দাড়ি শেভ করল। গোসল সারল। মেসের মনেজারের কাছ থেকে পত্রিকা এনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পত্রিকা পড়ল। সে কোনোদিন পত্রিকার এডিটরিয়াল পড়ে না। আজ সে তাও পড়ল। আহমেদ ফারুক নামের রাজপুত্র টাইপ মানুষটাকে যতটা সম্ভব দেরি করানো যায়। আহমেদ ফারুক সাহেবের একটা শিক্ষা হোক। তেমন কোনো কারণ ছাড়াই লোকটাকে প্রথম থেকেই তার অপছন্দ হচ্ছিল।
নাশতা শেষ করে পর পর দুকাপ চা খেয়ে মতিন চিঠি পড়তে বসল।
প্রিয় নদ্দিউ নতিম,
আপনার বিষয়ে পরে আমি এবং আমার স্ত্রী কিছু চিন্তাভাবনা করেছি। যে নদ্দিউ নতিম নামের একটি ফিকটিসাস ক্যারেক্টর তৈরি করে তাকে নিয়ে প্রবন্ধ ছাপতে পারে সে অবশ্যই Creative person.
আমি এবং আমার স্ত্রী খুবই আনন্দিত হবো যদি আপনি আমাদের অফার গ্রহণ করেন। আপনার পক্ষে কি এ মাসের সতেরো তারিখ থেকে কাজ শুরু করা সম্ভব? আমি উনিশ তারিখ কাঠমাণ্ডু যাচ্ছি। তার আগেই ছেলের বিষয়টা ঠিক করে যেতে চাচ্ছি।
আপনি যদি অফার গ্রহণ করতে সম্মত হন তাহলে আমার জুনিয়র ফারুক সাহেবকে জানিয়ে দেবেন। আমার ছেলে কমল অতি অল্প যে কয়জন মানুষকে পছন্দ করে ফারুক তাদের একজন। আমার ছেলে সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে সে আপনাকে বলতে পারবে।