মুনা অনেকক্ষণ হলো আয়নার সামনে। সে তার গায়ের রঙ নিয়ে একটা অ্যাক্সপেরিমেন্ট করেছে। অ্যাক্সপেরিমেন্টের ফল ঠিক বুঝতে পারছে না। সে ডার্ক শেডের মেকাপ নিয়েছে। তার মুখ এখন হয়ে গেছে শ্যামলা মেয়ের মুখের মতো। শ্যামলা মেয়েদের চোখে কাজল খুব মানায়। সে কাজল দিয়েছে, কিন্তু কাজলটা মানাচ্ছে না। এরকম তো হওয়ার কথা না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
সালেহ ইমরান ঘরে ঢুকতেই মুনা তার দিকে তাকিয়ে বলল, আমার দিকে ভালো করে তাকাও তো।
সালেহ ইমরান তাকালেন।
মুনা বলল, কী দেখছ?
সালেহ ইমরান বললেন, তোমাকে দেখছি।
আমাকে কী দেখছ?
তোমার মুখ কালো, কিন্তু হাত ধবধবে ফর্সা।
আমার হাতের রঙ আপাতত ভুলে যাও। শুধু মুখের দিকে তাকাও। কালো রঙটায় কি আমাকে মানাচ্ছে?
হ্যাঁ মানাচ্ছে।
কোনো ত্রুটি ধরা পড়ছে না?
একটা ত্রুটি ধরা পড়ছে। চেহারায় মায়া ভাব চলে এসেছে। এত মায়া তো তোমার নেই।
মায়াবেশি মেয়েরা ছিচকাঁদুনে হয়। আমি সেরকম না।
সালেহ ইমরান খাটে বসতে বসতে বললেন, কোথাও যাচ্ছ?
মুনা বলল, পার্লারে যাব। কালো রঙ পুরো শরীরে বসাব। তার আগে নিজে একটা অ্যাক্সপেরিমেন্ট করলাম।
সালেহ ইমরান বললেন, Doog.
মুনা বিস্মিত হয়ে বলল, Doog মানে?
সালেহ ইমরান বললেন, Doog মানে হলো Good. তোমার ছেলের কাছে শিখেছি।
মুনা বলল, ওর সঙ্গে তার সুইজারল্যান্ডের স্কুলার বিষয়ে কথা বলেছ?
বলেছি। স্কুলের ব্যাপারে তার কোনো আপত্তি নেই, বরং তার মধ্যে আগ্রহই দেখলাম। আগ্রহের মূল কারণ সম্ভবত সে স্কুল লাইব্রেরিতে তার মনের মতো বই পাবে।
মুনা বলল, সে যে নিজ থেকে যেতে রাজি হয়েছে এটাই মূল বিষয়। ভালো কথা, তুমি কিন্তু তোমার জুনিয়র ফারুক সাহেবকে ছেড়ে দেবে। সুইজারল্যান্ডে যাবার সময় আমি তাকে সঙ্গে নেব। তাকে ভিসা করতে বলে দিয়েছি। ফারুক সাহেবকে ছাড়া তোমার কয়েকটা দিন চলবে না?
অবশ্যই চলবে। তাকে নিতে হবে কেন?
তাকে নিতে হবে, কারণ তোমার ছেলে তাকে পছন্দ করে। আমরা দুজন সঙ্গে গেলে কমলের ট্রানজিশনটা সহজ হবে।
সালেহ ইমরান বললেন, ফারুককে আমার ছেলে পছন্দ করে, তুমি কর না?
মুনা বলল, অবশ্যই করি। ভেরি গুড কোম্প্যানি। সেন্স অব হিউমার আছে। তার ক্লোজআপ ম্যাজিক কখনো দেখেছ?
না। সে আবার ম্যাজিকও দেখায়?
তার ক্লোজআপ ম্যাজিক দেখলে তুমি মুগ্ধ হয়ে যাবে। সে কী করে শোন, এক টুকরা কাগজ নেয়। ফুঁ দেয়। মুহূর্তের মধ্যে কাগজটা হয়ে যায় পাঁচশ টাকার একটা নোট। আবার ফুঁ দেয়–নোটটা আবার হয়ে গেল কাগজ।
ওকে একদিন ডাক। আমরা সবাই ম্যাজিক দেখি।
ঠিক আছে আমিই ব্যবস্থা করব। ফ্যামিলি ম্যাজিক শো। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবস্থা করি। ঐদিন কি তোমার কোনো কাজ আছে? ফ্রি আছ না?
হ্যাঁ ফ্রি আছি।
দরজায় টোকা পড়ছে। টোকার ধরন থেকে বোঝা যাচ্ছে রহমত। বড় ধরনের কোনো সমস্যা না হলে রহমত সালেহ ইমরানের শোবার ঘরের দরজায়। টোকা দেবে না। সালেহ ইমরান বললেন, কী ব্যাপার রহমত?
রহমত ভীত গলায় বলল, ছোট বাবু খানা বন্ধ করে দিয়েছে।
কেন?
ছোট বাবু বলেছে, নতিম সাহেবের সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত সে কিছু খাবে না।
সালেহ ইমরান হতাশ চোখে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। মুনা বলল, তুমি চিন্তা। করবে না। ঐ ছাগলটাকে আমার ব্যবস্থা আমি করছি।
সালেহ ইমরান বললেন, ওকে ছাগল বলছ কেন?
মুনা হালকা গলায় বলল, যে ছাগল তাকে আমি ছাগল বলি। যে পাঁঠা তাকে আমি পাঁঠা বলি। পাঁঠাকে কখনো সিংহ বলি না।
সালেহ ইমরান বললেন, তোমার হিসেবে আমি কী? ছাগল না পাঁঠা?
মুনা বলল, তুমি কী সেই বিষয়ে আমি এখনো নিশ্চিত না। তবে তুমি সিংহ। না।
তোমার পরিচিত কেউ কি আছে যে সিংহ?
মুনা জবাব দিল না। স্থির চোখে তাকিয়ে রইল।
সালেহ ইমরান চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, মানুষ নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে, কিন্তু তুলনা দেয়ার সময় পশুদের সঙ্গে তুলনা দেয়।
মুনা বলল, তার মানে?
সালেহ ইমরান বললেন, সিংহের মতো সাহসী, শৃগালের মতো ধূর্ত। ট্যাক সেনাপতি রোমেলকে বলা হতো Desert Fox, মরু শিয়াল।
মুনা বলল, জ্ঞানীর মতো কথা বলার চেষ্টা করছ বলে মনে হচ্ছে।
সালেহ ইমরান বললেন, আমি মূর্খ, এই কারণেই জ্ঞানীর মতো কথা বলার চেষ্টা করি। জ্ঞানীরা কখনো জ্ঞানীর মতো কথা বলে না। মূর্খরা মাঝে মাঝে বলে।
তুমি মূর্খ না।
শুনে খুশি হলাম। স্বামী বিষয়ে স্ত্রীর সার্টিফিকেট হচ্ছে দ্য আলটিমেট থিং। স্ত্রীর সার্টিফিকেটই শেষ কথা।
মুনা বলল, স্ত্রীর বিষয়ে স্বামীর সার্টিফিকেটের কী অবস্থা?
সালেহ ইমরান বললেন, খারাপ অবস্থা। স্বামীরা কখনো স্ত্রীদের বিষয়ে কোনো সার্টিফিকেট দিতে পারেন না।
কেন পারেন না?
কারণ কোনো স্বামীই তার স্ত্রীকে চিনতে পারেন নি।
তাই না-কি?
হ্যাঁ তাই। দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী ছিল। পাঁচ স্বামী মিলেও দ্রৌপদীকে চিনতে পারে নি। কেউ বুঝতেও পারে নি দ্রৌপদী পাঁচ স্বামীর মধ্যে সবচে পছন্দ করত অর্জুনকে। বেচারা অর্জুন নিজেও বুঝতে পারে নি।
মুনা বলল, তুমি কি আমাকে বুঝতে পার?
সালেহ ইমরান বললেন, চেষ্টা করলে হয়তো বুঝতে পারতাম। চেষ্টা করি না।
কেন চেষ্টা কর না? ইচ্ছা করে না। তাছাড়া চেষ্টা করার নিয়মও নেই।
নিয়ম নেই মানে? কার নিয়ম?
God-এর নিয়ম। যাবতীয় নিয়ম তিনি অঙ্ক কষে কষে ঠিক করে দেন।