সে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ৫-কে শূন্য দিয়ে গুণ করলে হয় শূন্য, আবার ১-কে শূন্য দিয়ে গুণ করলেও হয় শূন্য। কাজেই ০ X ৫ যা, ০ x১ ও তা। ঠিক আছে বাবা?
সালেহ ইমরান বললেন, ঠিক আছে।
কমল বলল, এখন এসো ডানদিক এবং বাকি দুই দিককে শূন্য দিয়ে ভাগ করে দেখি কী হয়। কমল বোর্ডে লিখল।
(০ X ৫)/০ = (০ X ১)/০
(Ø X ৫)/ Ø = (Ø X ১)/ Ø
৫ = ১
সালেহ ইমরান অবাক হয়ে বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন। কমল বলল, বাবা, দেখলে আমি প্রমাণ করলাম পাঁচ সমান এক।
সালেহ ইমরান বললেন, তাই তো দেখছি। নিশ্চয়ই কোথাও কোনো ভুল আছে।
ভুল নেই।
তাহলে তো সব সংখ্যাই সমান।
কমল বলল, হ্যাঁ সমান।
তোমার কি মনে হয় না তুমি উদ্ভট কথা বলছ?
মনে হয় না। পৃথিবীতে দুটা মাত্র সংখ্যা। একটা হলো শূন্য, আরেকটা এক। আর কোনো সংখ্যা নেই।
এটা কি তোমার নিজের কথা? না-কি তুমি কোনো বইয়ে পড়েছ?
বইয়ে পড়েছি।
সালেহ ইমরান ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তোমার একজন ভালো গাইড দরকার, যে ঠিক করে দেবে তুমি কোন বই পড়বে, কোনটা পড়বে না। কোন বই বিশ্বাস করবে, কোনটা করবে না। আমি তোমার গাইড হতে পারলে ভালো হতো। আমার সেই যোগ্যতা নেই।
কমল আগ্রহ নিয়ে বলল, অঙ্কের আরেকটা মজা দেখবে?
সালেহ ইমরান বললেন, না। আমি তোমাকে একটা জরুরি কথা বলতে এসেছি। কথা শেষ করে চলে যাব।
অঙ্ক খুবই জরুরি।
তোমার কাছে নিশ্চয়ই জরুরি, কিন্তু আমার কাছে জরুরি না।
কমল কঠিন গলায় বলল, তোমার কাছেও জরুরি। সবার কাছেই জরুরি। God-এর কাছেও জরুরি। God অঙ্ক করে করে Galaxy তৈরি করেছেন। অঙ্ক যদি God-এর কাছে জরুরি হয় তাহলে তোমার কাছেও জরুরি।
কমলের চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেছে। ভুরুতে ভাঁজ পড়েছে।
সালেহ ইমরান ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে হালকা গলায় বললেন, হ্যাঁ, আমার জন্যেও জরুরি। শুরুতে বুঝতে ভুল করেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি।
কমল বলল, Sknaht.
বাবা, সোজা করে বলো। উল্টো কথা আমি বুঝতে পারি না। উল্টো কথা। শুনলে আমার মাথায় যন্ত্রণা হয়।
কমল বলল, আমি বলেছি Thanks.
তোমাকেও থ্যাংকস। এখন কি আমি আমার কম জরুরি কথাটা বলতে পারি?
পার।
আমি অনেকদিন থেকেই চেষ্টা করছিলাম বিদেশে কোনো একটা Special School-এ তোমাকে ভর্তি করতে। কানাডার একটা স্কুল আমার পছন্দ হয়েছিল, কিভু সেখানে অটিজম বিষয়ে আলাদা কার্যক্রম নেই। এখন একটা স্কুল পাওয়া গেছে। স্কুলটা জুরিখে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অটিস্টিক শিশুরা সেখানে পড়াশোনা করে। তোমাকে সেই স্কুলে অ্যানরোল করা হয়েছে।
কমল বলল, Doog.
সালেহ ইমরান বললেন, ঠিক করে কথা বলো। Doog মানে কী?
কমল বলল, Doog মানে Good.
সেখানে তুমি অনেক সুযোগ সুবিধা পাবে। প্রপার গাইড পাবে। তোমার পছন্দের ম্যাথমেটিকসের বই পাবে। তাদের বিশাল লাইব্রেরি। স্কুলটাও একটা পাহাড়ের উপর। চারদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলনাবিহীন।
কমল বলল, Doog.
শুরুতে তোমার মা তোমার সঙ্গে থাকবেন। তোমাকে সেটল করে দিয়ে। ফিরে আসবেন।
No.
নো বলছ কেন?
আমি মাকে সঙ্গে নেব না।
কেন নেবে না?
আমি তাকে পছন্দ করি না।
কেন পছন্দ কর না?
আমি মাকে পছন্দ করি না, কারণ মা তোমাকে পছন্দ করে না।
তোমার মা আমাকে পছন্দ করে না এটাই বা তুমি বুঝলে কীভাবে?
আমি বুঝতে পারি। মা অন্য একজনকে পছন্দ করে, তোমাকে না। আমি কি সেই অন্য একজনের নাম বলব?
না। যে বিষয়ে আমরা কথা বলছিলাম এসো সেই বিষয়ে কথা বলি।
কমল বলল, আমি সেই অন্য একজনের নাম বলব।
তোমার কাছ থেকে সেই নাম আমি শুনতে চাচ্ছি না।
আমি বলব। কমল বলবে। কমল বলবে। কমল বলবে।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বলবে। আমাদের আলোচনা শেষ হোক, তারপর দলবে। ঠিক আছে?
হুঁ।
তোমাদের স্কুলের সেশন শুরু হবে জানুয়ারি থেকে। কাজেই তুমি তোমার মাকে নিয়ে ডিসেম্বরের শেষের দিকে চলে যাবে।
কমল বলল, আমি মাকে সঙ্গে নেব না। আমি নতিমকে নেব। নতিম আমার সঙ্গে যাবে।
নতিমটা কে?
নদ্দিউ নতিম।
ও আচ্ছা মতিন। তাকে নেয়া যাবে না। তার প্রসঙ্গে আলোচনা বন্ধ। ঠিক আছে?
হুঁ।
সালেহ ইমরান উঠে দাঁড়ালেন। দরজার দিকে পা বাড়ালেন। কমল চাপা গলায় বলল, তুমি বলেছিলে আলোচনা শেষ হলে আমি লোকটার নাম বলতে পারব। কিন্তু তুমি তার আগেই চলে যাচ্ছ। Why?
আমি ভুলে গিয়েছিলাম।
তুমি ভুলে যাও নি। তুমি ভাব করেছ যে ভুলে গেছ। কিন্তু তুমি ভুলে যাও নি।
হতে পারে।
সালেহ ইমরান আবার এসে চেয়ারে বসলেন। হতাশ গলায় বললেন, এখন নাম বলো।
কমল বলল, তার নাম করুফা দমেহআ।
উল্টো কথা আমি বুঝতে পারি না। ঠিক করে বলো।
তার নাম আহমেদ ফারুক।
সালেহ ইমরান বললেন, এখন কি আমি যেতে পারি?
কমল হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। বাবা ঘর থেকে বের হওয়া মাত্র খেলনা নিয়ে বসল। এখন সে খেলনাগুলি দিয়ে দুটা সমান্তরাল রেখা তৈরি করছে। তার যখন বেশি মন খারাপ হয় তখন সে খেলনা দিয়ে সমান্তরাল রেখা তৈরি করে একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। সে বইয়ে পড়েছে দুটা সমান্তরাল রেখা ইনফিনিটিতে মিশবে। ইনফিনিটি হলো সেই রহস্যময় জায়গা যেখানে God থাকেন। এবং God সমস্ত নিয়ম দিয়ে দেল। যিনি নিয়ম দেন তিনিই শুধু নিয়ম ভাঙতে পারেন। তিনের সঙ্গে চার যোগ করলে সাত হবে, এই নিয়ম কেউ। ভাঙতে পারবে না। কিন্তু God পারবেন।