তুই আমার সঙ্গে কবে জয়েন করবি? চলে আয় ব্যাক টু দ্য নেচার। ট্রি হাউসটা তোকে ছেড়ে দেব। গাছের উপর থাকা। গাছের উপর ঘুমানো। এখানে এলে নদ্দিউ নতিমের কিছু বৃক্ষ-কবিতা লিখে ফেলতে পারবি।
ভালো কথা, আমার টাকা নিয়মিত পাচ্ছিস তো? তুই আমার বেতনভুক্ত কর্মচারী, এটা মনে রাখবি।
আমার কিছু বই দরকার। Medicinal Plants-এর উপর বই এবং ক্যাকটাসের উপর বই। Medicinal Plants-এর উপর বাংলায় লেখা বইগুলি অখাদ্য। একটা বইয়ের নাম লিখে দিচ্ছি, কাউকে দিয়ে বাইরে থেকে আনাতে পারিস কি-না দেখ–
A Study on Medicinal Plants
M. S. Hindra Junior
বিষাক্ত গাছের উপর কোনো বইপত্র চোখে পড়লেও পাঠাবি।
ঐদিন কী হয়েছে শোন, আমি ছোট্ট একটা টিলায় উঠে দেখি টিলা ভর্তি বেগুনি রঙের ফুল। ফুলে গন্ধ আছে কি-না। দেখার জন্যে একটা ফুল ছিড়তেই হাতে জ্বলুনি শুরু হলো। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে হাত ফুলে ঢোল। মানুষের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়, আমার হাত ফুলে কলাগাছ।
আচ্ছা শোন, তুই কমল নামের একটি বাচ্চাকে নিয়ে অনেক কথা লিখেছিস। তুই কি এখনো তার হাউস টিউটর? তুই তোর ছাত্রকে নিয়ে চলে আয় না। আমিও দেখি ছেলেটার বিশেষত্ব কী?
আজ এই পর্যন্তই। ভালো থাকিস।
ইতি–
তোর কঠিন গাধা
আশরাফ তার নামের ইংরেজি বানান লেখে Ass Rough. যার বাংলা পাড়ায় কঠিন গাধা।
মতিন চিঠি খামে ভরল। বালিশের নিচে রেখে ঘুমোবার আয়োজন করল। তার মন বলছে এখন ঘুমালেই সে গহীন জঙ্গলের স্বপ্ন দেখবে।
কমল মেঝেতে বসে আছে
কমল মেঝেতে বসে আছে। তার সামনে কাগজের বড় একটা বাক্স। বাক্সভর্তি খেলনা। সে বাক্স থেকে খেলনা বের করছে। মেঝেতে সাজাচ্ছে। সাজানোর ভঙ্গিও অদ্ভুত। একটির পেছনে একটি খেলনা রেখে সে সাপের মতো বানাচ্ছে।
কমলের কাছ থেকে একটু দূরে সালেহ ইমরান। তিনি চেয়ারে বসে। আছেন। প্রায় আধঘণ্টা হলো তিনি এখানে আছেন। এখন পর্যন্ত কমল তাঁর দিকে তাকায় নি। সে খেলনা দিয়ে লম্বা একটি সাপ তৈরিতে ব্যস্ত। সালেহ ইমরান জানেন Autistic শিশুদের এটা একটা বিশেষ ধরনের খেলা। কোন খেলনার পর কোনটি বসাবে এটা সে ঠিক করে রাখে। এর মধ্যে কোনো হেরফের হবে না। কেউ যদি কোনো একটা খেলনা গোপনে এখান থেকে সরিয়ে। ফেলে সে সঙ্গে সঙ্গে তা ধরে ফেলবে, তখন একটা ভয়ঙ্কর কাণ্ডের সূচনা হবে।
As children, they might spend hours lining up their cars and trains in a certain way, rather than using them for pretent play, if some one accidentally moves one of these toys, the child
may be tremendously upset. কমল তার খেলনা গোছানো শেষ করে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসল। সালেহ ইমরান সামান্য চমকালেন। Autistic শিশুরা কখনো হাসে না। কমল হঠাৎ হঠাৎ হাসে। কী সুন্দর সেই হাসি! সালেহ ইমরান যতবার এই হাসি দেখেন ততবারই চমকান। তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যালো।
কমল বলল, হ্যালো।
সালেহ ইমরান বললেন, তুমি তোমার খেলনা সবসময় একইভাবে সাজাও?
কমল বলল, হ্যাঁ।
কেন?
এটাই নিয়ম।
কার নিয়ম?
God-এর নিয়ম!
খেলনা কিন্তু তুমি সাজাচ্ছ। উনি সাজাচ্ছেন না।
কমল বলল, সব নিয়ম God ঠিক করেন। আমি একটা বইয়ে পড়েছি।
বইটার নাম কী?
God and New Physics.
বইয়ের সব কথা কিন্তু সত্য না।
কমল বলল, বইয়ের কথা সত্য। মানুষ মিথ্যা বলে, বই মিথ্যা বলতে পারে না। Book don’t have mind.
যে মানুষরা মিথ্যা বলে তারাই বই লেখে। বইয়ে তাদের মিথ্যা চলে আসে।
কমল চোখ-মুখ কঠিন করে বলল, No, বইয়ে সত্য কথা থাকবে। এটাই নিয়ম। God-এর নিয়ম।
তুমি কি God নিয়ে ভাবো?
হ্যাঁ।
God নিয়ে ভাবার সময় তোমার হয় নি। যখন হবে তখন ভাববে।
এখন আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প কর। আমার দিকে তাকিয়ে গল্প কর। অন্যদিকে তাকিয়ে না। তুমি যখন কারো সঙ্গে কথা বলবে, তখন তার দিকে তাকিয়ে কথা বলবে। এটা ভদ্রতা, এটাই নিয়ম।
কমল বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, কী নিয়ে গল্প করব?
তোমার যা নিয়ে গল্প করতে ভালো লাগে তা নিয়েই গল্প কর।
ম্যাথ?
যদি ম্যাথমেটিকস নিয়ে গল্প করতে ভালো লাগে তাহলে কর। শুধু একটা জিনিস মাথায় রাখবে, আমি ম্যাথ জানি না। আমার অঙ্কের দৌড় হলো যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ।
কমল বলল, ম্যাথ হলো শুধু যোগ-বিয়োগ। গুণ-ভাগ যোগ-বিয়োগ থেকে এসেছে।
ও আচ্ছা।
কমল উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, তুমি বোর্ভটার দিকে তাকিয়ে থাক। আমি বোর্ডে একটা অঙ্ক করব।
সালেহ ইমরান ঘাড় ঘুরিয়ে বোর্ডের দিকে তাকালেন। তিনদিন আগে তার ঘরে এই বোর্ড লাগানো হয়েছে। কমল ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই বোর্ডে কী সব সংখ্যা লেখে। লেখা শেষ হওয়া মাত্র ডাটার দিয়ে মুছে ফেলে অন্য একটা সংখ্যা লিখে ফেলে।
কমল বোর্ডের কাছে গেল। লিখল–
০ X ৫ = ০
বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা, ঠিক আছে? যে-কোনো সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে গুণ করলে শূন্য হয়। অংকের সাধারণ নিয়ম। এই নিয়ম God ঠিক করে দিয়েছেন।
সালেহ ইমরান বললেন, সবকিছুতেই God আনবে না। তবে তোমার অঙ্ক ঠিক আছে। পাঁচকে শূন্য দিয়ে গুণ করলে ফল শূন্য হবে, এইটুকু অঙ্ক আমি জানি।
কমল বলল, এইটুকু অঙ্ক যদি জানো তাহলে এটাও জানো যে–
০ X ১ = ০
সালেহ ইমরান বললেন, হ্যাঁ।
কমল বোর্ডে লিখল–
০ X ৫ = ০ X ১