নিউ সালেহা ফার্মেসির মালিক হাবিবুর রহমান ক্যাশিয়ারের চেয়ারে বসে আছেন। তার শরীর খারাপ। হঠাৎ করে প্রেসার বেড়েছে। নিচেরটা হয়েছে একশ পাঁচ। উপরেরটা দুশ। প্রেসারের ওষুধ কিছুক্ষণ আগে খেয়েছেন। ওষুধের অ্যাকশান এখনো শুরু হয় নি। ঘাড় ব্যথা করছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। তার উচিত চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকা। শশায়ার ব্যবস্থা এখানে আছে। ফার্মেসির পেছনে সিঙ্গেল খাট পাতা। খাটে শীতলপাটি বিছানো। মাথার উপর সিলিং ফ্যানও আছে। হাবিবুর রহমানের দিনে শোয়ার অভ্যাস নেই বলে শুতে যাচ্ছেন না। মনে মনে আল্লাহু শাফি এই বলে দোয়া পড়ছেন। জিগিরের মতো এই দোয়া পড়লে শরীরের রোগবালাইয়ের দ্রুত আরাম হয়।
মতিন বলল, দুলাভাই, কেমন আছেন?
হাবিবুর রহমান বিরক্ত গলায় বললেন, ভালো না।
শরীর খারাপ না-কি?
হুঁ।
প্রেসার?
হুঁ।
আপনার ব্যবসার অবস্থা কী?
ভালো।
ব্যবসার অবস্থা ভালো হলে প্রেসার উঠল কেন?
রাতে ঘুম হয় না। তোমার বোন সারা রাত কোঁ কোঁ করে! একটু পর পর বাথরুমে যায়। মাথায় পানি ঢালে। বিছানায় যে স্থির হয়ে থাকবে তা-না, সারাক্ষণ নড়াচড়া।
অন্য ঘরে ঘুমালেই পারেন।
হাবিবুর রহমান বিরক্ত গলায় বললেন, এটা কেমন কথা? বউ ফেলে অন্য ঘরে ঘুমাব কেন?
সারাদিন কাজে কর্মে থাকেন, রাতের ঘুমটা তো আপনার দরকার।
যত দরকারই হোক, বউ এক ঘরে আমি অন্য ঘরে, এটা কেমন কথা?
হাবিবুর রহমান হাত বাড়িয়ে চোখে এক কর্মচারীকে ইশারা করলেন। সে ব্লাড প্রেসারের যন্ত্রপাতি ফিট করতে লাগল। হাবিবুর রহমান বললেন, কোনো। কাজে এসেছ?
মতিন বলল, জি-না। বকবক করতে এসেছি।
চাকরি-বাকরি কিছু পেয়েছ?
না।
ব্যবসা-বাণিজ্য করবে? ব্যবসা-বাণিজ্য করলে ক্যাশ দিয়ে সাহায্য করতে পারি।
না। আপনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকুন তো দুলাভাই। আপনার প্রেসার মাপা হচ্ছে।
হাবিবুর রহমান চোখ বন্ধ করে ফেললেন। এবারে তাঁর প্রেসার নরমাল পাওয়া গেল। তিনি আরামের নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তুমি এসে ভালোই করেছ। তোমার সঙ্গে অতি জরুরি কথা আছে।
বলুন শুনি।
ভেতরে চল। সবার সামনে এইসব কথা বলা ঠিক না। তৌহিদার বিবাহ নিয়ে কথা বলব। তার জন্য একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে। ম্যানেজার, ঝালকাঠিতে পোস্টিং।
মতিন বলল, তার বিয়ে নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলবেন কেন? আমি তো তৌহিদার গার্জিয়ান না।
হাবিবুর রহমান জবাব না দিয়ে ফার্মেসির পেছনে রওনা হলেন। মতিন। গেল তার পেছনে পেছনে।
হাবিবুর রহমান খাটে পা তুলে বসেছেন। মতিন বসেছে তার সামনে। তবে মুখোমুখি বসা না। তাকে হাবিবুর রহমানের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে হচ্ছে।
মতিন, তুমি দুপুরের খাওয়া খেয়ে এসেছ?
না।
এখানে খাবে?
বললে খাব।
এখানে খাওয়ার দরকার নাই। বাসায় চলে যাও। আজ আমি নিজে বাজার করে দিয়ে এসেছি। ফ্রেশ মাছ আছে।
কী মাছ?
খইলশা মাছ, টাকি মাছ আর ছোট চিংড়ি। কচুর লতি দিয়ে চিংড়ি মাছ রাঁধতে বলেছি, টাকির ভর্তা করতে বলেছি। খইলশা মাছের বিষয়ে কিছু বলে আসি নাই। জানি না কীভাবে রাঁধবে।
খইলশা মাছের বিষয়ে ডিরেকশান দিতে ভুলে গেছেন কী জন্যে?
মনে ছিল না। এখন মনে হলো। একটা ভুলই হয়েছে। খইলশা মাছ পাতলা ঝোল দিয়ে রাঁধতে হয়, তাতে ধনিয়া পাতা দিতে হয়। যদি পোড়াপোড়া করে তাহলে আর মুখে দেয়া যাবে না।
টেলিফোন করে দেখেন বেঁধে ফেলেছে কি-না।
বাদ দাও।
মতিন বলল, বাদ দেবেন কেন? এটা তো একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শখ করে একটা মাছ কিনেছেন। রান্নার ত্রুটির জন্যে সেই মাছ যদি মুখে দিতে না পারেন সেটা খারাপ না?
হাবিবুর রহমান টেলিফোন করলেন। জানা গেল খইলশা মাছ ঝোল দিয়ে রান্না করা হয়েছে। ঝোলে ধনিয়া পাতাও দেয়া হয়েছে। হাবিবুর রহমান শঙ্কামুক্ত মানুষের তৃপ্তির হাসি হাসলেন।
মতিন বলল, এখন আপনার জরুরি কথাটা বলুন। তৌহিদার বিয়ে হচ্ছে ঝালকাঠির এক ছেলের সঙ্গে?
হাবিবুর রহমান বললেন, ঝালকাঠির ছেলে না। ছেলের বাড়ি নরসিংদী। পোস্টিং ঝালকাঠিতে। ছেলের এক খালু জিয়ার আমলে মন্ত্রী ছিলেন।
বিয়েটা কবে?
ভাদ্র মাসে বিয়ে হয় না, বিয়েটা হতে হবে শ্রাবণ মাসে। অর্থাৎ এই মাসে। জুলাই মাসে। আমরা একটা তারিখ ঠিক করেছি। ২৮ জুলাই। শুক্রবার। বাদ জুমা বিয়ে পড়ানো হবে।
ভালো তো। আমি উপস্থিত থাকব, কোনো সমস্যা নেই।
হাবিবুর রহমান বিরক্ত গলায় বললেন, সমস্যা নেই এটা কীভাবে বললে? তোমার আপা ঠিক করেছে তৌহিদার সঙ্গে তোমার বিয়ে দিবে। তৌহিদার কানে সে কী মন্ত্র দিয়েছে আল্লাপাক জানেন। আমি যদি এখন তৌহিদার গলায় পাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি তবু সে ঝালকাঠির ছেলেকে কবুল বলবে না।
এখন উপায়?
উপায় একটাই। বিয়ে ২৮ তারিখেই হবে। এবং তুমি বিয়ে করবে। আপত্তি আছে?
না, আপত্তি কী জন্যে!
হাবিবুর রহমান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তোমার আপা এবং ঐ গাধি মেয়ে কী ভুল যে করতে যাচ্ছে তা তারা জানে না। ওদের ব্যাপার ওরা বুঝবে। আমার দায়িত্ব বিয়ে করিয়ে দেয়া। আমি দিলাম। কাজি ডেকে আনব, পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হবে। ঠিক আছে?
জি ঠিক আছে।
তোমার আপাকে জানিয়ে দেই যে ২৮ তারিখেই বিবাহ?
জানিয়ে দেন। আর ঐ ঝালকাঠির ছেলেকে পুরোপুরি No করে দেয়াও ঠিক হবে না। ও Standby থাকুক। কোনো কারণে যদি আমার সঙ্গে বিয়ে না হয়…।