চেয়ারে বসবে।
প্লাস্টিকের শক্ত চেয়ারে আমি বসতে পারি না।
ঠিক আছে এসো। বিছানায় বসো।
শুধু বিছানায় বসলেই আমার চলবে না। যার সঙ্গে আমি কথা বলব তাকে মাঝে মধ্যে আমাকে ছুঁয়ে দেখতে হবে।
কমল বলল, কেন?
এটা আমার অভ্যাস। একেকজন মানুষের একেক রকম অভ্যাস থাকে।
কমল বলল, তুমি কি ট্রিক করছ? ট্রিক করে আমার বিছানায় বসেছ? এখন ট্রিক করে গায়ে হাত দেবে। ঠিক না?
হ্যাঁ ঠিক।
আমি ট্রিক পছন্দ করি না। তুমি দুষ্টু লোক।
মতিন বলল, আমি ট্রিক করি, কিন্তু আমি দুষ্টু লোক না।
কমল বলল, তুমি কি অঙ্ক জানো?
মতিন বলল, না।
কমল বলল, যারা অঙ্ক জানে না তাদেরকে আমি পছন্দ করি না।
মতিন বলল, আমি তো তোমাকে বলি নি আমাকে পছন্দ কর। তুমি আমাকে পছন্দ করবে না, আমি তোমাকে পছন্দ করব না। মামলা ডিসমিস।
মামলা ডিসমিস মানে কী?
মতিন বলল, মামলা ডিসমিস মানে–এই বিষয়ে কথা শেষ।
কমল বলল, তুমি অঙ্ক পছন্দ কর না কেন?
মতিন বলল, অঙ্ক পছন্দ করি না, কারণ অংকে রস-কস বলে কিছু নেই। শুকনা কঠিন একটা বিষয়।
কমল বলল, অংকে অনেক মজা আছে।
কী মজা?
কমল আগ্রহের সঙ্গে বলল, আমার কেবিনের নাম্বার ১০১। এটা মজা না?
মতিন বিস্মিত হয়ে বলল, কী মজা?
এটা একটা প্রাইম নাম্বার। এটার মাঝখানে আছে একটা শূন্য। এটার স্কয়ার করলে হয় ১০২০১, এটার মাঝখানে আছে দুটা শূন্য। এটাও প্রাইম নাম্বার। ১০১-কে কিউব করলে হয় ১০৩০৩০১। এখন মাঝখানে আছে তিনটা শূন্য। ১০১-এর ফোর পাওয়ার করলে হয় ১০৪০৬০৪০১। এখন মাঝখানে এসেছে। চারটা শূন্য। মজা না?
মতিন বিস্মিত হয়ে বলল, মজাটা কী?
যতটা পাওয়ার হচ্ছে মাঝখানে ততটা শূন্য আসছে। মজা না?
এর মধ্যে আমি মজার কিছুই পেলাম না। বকবকানি বন্ধ কর।
কমল কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, এরকম করে কথা বলছ কেন?
মতিন বলল, আমার ইচ্ছা। আমি আমার ইচ্ছামতো কাজ করি। এখন আমি তোমার হাত ধরে বসে থাকব। তুমি পছন্দ কর বা না কর কিছু আসে যায় না। তুমি চিৎকার করলে চিৎকার করবে। তোমার যদি অ্যাপিলেপটিক সিজার হয় হবে।
কমলের ঠোঁট কাঁপছে। মুখ ফ্যাকাশে। সে শুয়েছিল, এখন উঠে বসল। মতিন খপ করে কমলের হাত ধরে ফেলল। কমলের হাত থরথর করে কাঁপছে। তার চোখ ঘোলাটে হয়ে আসছে। সে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। সে যখন চিৎকার দিয়ে উঠতে যাবে তখন মতিন তার হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
কমল চাপা গলায় বলল, আপনি আর কখনো আসবেন না।
মতিন বলল, K.O., K.O., K.O.. [ok-এর উল্টো ]
কমল বলল, I hate you.
মতিন বলল, Ko, Ko, Ko.
কমল বলল, আপনার গায়ে ঘামের গন্ধ।
মতিন বলল, তোমার গায়ে ওষুধের গন্ধ। ওষুধের গন্ধ ঘামের গন্ধের চেয়েও খারাপ।
মতিন ঘর থেকে বের হয়ে এলো! ক্লিনিকের সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির পাশে আহমেদ ফারুক চিন্তিত মুখে হাঁটাহাঁটি করছেন। মতিনকে দেখে তিনি গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বললেন, কাজটা ভালো করেন নি।
মতিন বলল, কোন কাজটা ভালো করি নি?
আহমেদ ফারুক বললেন, স্যারের ছেলের সঙ্গে যে কাজটা করলেন।
মতিন বলল, আপনি জানলেন কীভাবে?
আহমেদ ফারুক বললেন, কমলের ঘরে CCTV লাগানো। সেখানে কী হয় হয় সবই টিভি ক্যামেরায় মনিটর করা হয়। আপনি যখন কথা বলছিলেন তখন টিভি মনিটরের সামনে স্যারের সঙ্গে আমিও ছিলাম।
মতিন বলল, Ko, Ko, Ko.
আহমেদ ফারুক বললেন, এর মানে কী?
মতিন বলল, মানে জানার দরকার নেই। সিগারেট থাকলে সিগারেট দিন। থাকলে কোনো একটা পান-সিগারেটের দোকানের সামনে গাড়ি থামান। আমি সিগারেট কিনব। সিগারেটের জন্যে ফুসফুস ছটফট করছে। ভালো কথা, আমার সঙ্গে কিন্তু মানিব্যাগ নেই। সিগারেট কেনার টাকা আপনাকেই দিতে হবে।
আহমেদ ফারুক সিগারেটের প্যাকেট মতিনের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন, প্যাকেটটা রেখে দিন। ইউ আর এ স্ট্রেঞ্জ ম্যান।
মতিন বলল, আপনিও স্ট্রেঞ্জ ম্যান।
কোন অর্থে?
জল স্পর্শ না করার অর্থে।
পরিষ্কার করে বলুন, বুঝতে পারছি না।
মতিন বলল, গাড়ির দরজা খুলুন গাড়িতে উঠব। সিটে আরাম করে বসে আপনাকে বুঝিয়ে দেব জল স্পর্শ না করার মানে কী?
আহমেদ ফারুক গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বললেন, সিগারেট ফেলে গাড়িতে উঠুন।
মতিন সিগারেট ফেলে গাড়িতে উঠল। গাড়ি ড্রাইভার চালাচ্ছে না, আহমেদ ফারুক চালাচ্ছেন। মতিনের উচিত ছিল ড্রাইভারের পাশের সিটে বসা। সে বসেছে পেছনে। নরম সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বসে থাকতে তার বেশ আরাম লাগছে। সে সিগারেটের প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাল। আহমেদ ফারুক সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে ফেলে কঠিন গলায় বললেন, আপনাকে আগেও বলেছি সিগারেট ফেলে গাড়িতে উঠুন। সিগারেট ফেলুন।
মতিন বলল, সিগারেট ফেলব না।
তাহলে গাড়ি থেকে নামুন।
মতিন বলল, আমি গাড়ি থেকে নামবও না।
আহমেদ ফারুক বললেন, অবশ্যই নামবেন।
মতিন বলল, অবশ্যই না। আপনি একা টানাটানি করে আমাকে গাড়ি থেকে নামাতেও পারবেন না। বেশি ঝামেলা করলে আমি কিন্তু গাড়িতে পেচ্ছাব করে দেব।
কী বললেন?
পিপি করে দেব। পিপি। গাড়ি গান্ধা করে দেব। আপনি সুবোধ বালকের মতো গাড়ি চালিয়ে আমাকে আমার মেসে নামিয়ে দেবেন। আমি এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনব। এর মধ্যে গাড়ি স্টার্ট দিতে হবে। এক, দুই, তিন, চার…
আহমেদ ফারুক গাড়ি স্টার্ট দিলেন।
উজবেক মরমী কবি নদ্দিউ নতিম
আপনার নামই মতিন উদ্দিন?