সালেহ ইমরান বললেন, চা দিতে বলি। চা খাও।
মতিন বলল, চা খাব না স্যার।
সালেহ ইমরান বললেন, আমি শুনেছি পুরো সাতদিন তুমি নিজের ঘরে বসেছিলে। আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লেগেছে। কারণটা কী বলো তো।
মতিন বলল, কারণ এখন বলা অর্থহীন।
সালেহ ইমরান বললেন, অর্থহীন হলেও বললা। অবশ্যি তোমার যদি তেমন আপত্তি না থাকে।
মতিন বলল, আপত্তি আছে। কিন্তু আপনি শুনতে চাচ্ছেন, কাজেই শুনুন। আমি আপনার ছেলের সঙ্গে একধরনের গেম খেলার চেষ্টা করেছি। Autistic শিশুরা নিজেকে নিয়ে গুটিয়ে থাকতে পছন্দ করে। তারা কারো সঙ্গে মিশে না। নিজের ঘর থেকে বের হতে চায় না। আমি ঠিক এই কাজটি করেছি। আপনার ছেলে ব্যাপারটি লক্ষ করেছে। সে আমাকে তার মতোই একজন ভাবছে। আমি ডাকলেই সে আসবে, এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
তুমি তাকে ডাক নি কেন?
আমি নিজে তাকে ডেকে আনতে চাই নি। আমি চেয়েছিলাম সে নিজে এসে আমার কপাল ফাটিয়ে দেয়ার জন্যে লজ্জিত হবে এবং সরি বলবে।
সালেহ ইমরান দ্বিতীয় সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, তোমার ধারণা তুমি ডাকলেই সে আসবে এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে? এটা কী করে বুঝলে?
সে আমাকে একটা নোট পাঠিয়েছিল। নোটটা দেখতে চান? আমার সঙ্গেই আছে। নোটটা সে নিজেই দরজার নিচ দিয়ে দিয়েছে।
সালেহ ইমরান আগ্রহের সঙ্গে বললেন, দেখি!
মতিন মানিব্যাগ থেকে কাগজের টুকরাটা বের করল। সেখানে লেখা
yoser orrsy srroy orrys rroys ryrso ysror soyrr rryos ryors rsroy yorsr osrry osyrr sryor syon orsry osryr rrsoy royrs srryo soryr yorrs ysor sroyr rrosy ysrro oysro rysor rsoyr srory sryro yrsro ryosr rsory rosry rosyr oysrr yrors ryros rsyro rrsyo rorys oyrsr yrros oryrs rsyor yrosr oyrrs oryst isryo yrsor syror syrro orsyr oyrrs rorsy yrrso roysr
সালেহ ইমরান বললেন, এর মানে কী?
মতিন বলল, সে লিখেছে Sorry. সরি লিখতে যে অক্ষরগুলি লাগে এগুলিই সে নানানভাবে সাজিয়েছে। শুধু মূল শব্দটা লেখে নি। আবার এমনও হতে পারে যে, প্রতিবারই সে Sorry লিখেছে, কিন্তু Dyslexiaর কারণে মূল বানানটা তার মাথায় ঠিকমতো আসছে না। Autistic শিশুরা Dyslexiaতে ভুগে, এই তথ্য আপনি অবশ্যই জানেন। আপনিই আমাকে বইপত্র দিয়েছেন।
মতিন!
জি স্যার।
এসো চা খাই। চা খেতে খেতে আরো কিছু কথা বলি।
চা খাব না স্যার। আমি এখন চলে যাব। কে আমাকে টাকা দেবে বলে দিন।
সালেহ ইমরান আরেকটি সিগারেট ধরালেন। সিগারেট পরপর দুটি হয়ে গেছে। এটা খারাপ লক্ষণ। এখন সিগারেটের সংখ্যা দ্রুত বাড়বে। সালেহ ইমরান মতিনের দিকে ঝুঁকে এসে বললেন, তোমার কর্মকাণ্ড শুরুতে বুঝতে পারি নি বলে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুমি এখানেই থাক।
মতিন উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, আমার ইচ্ছা করছে না।
চট করে না বলবে না। যে-কোনো সিদ্ধান্তই ভেবে-চিন্তে নিতে হয়।
অনেকেই ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় না।
ঠিক আছে, তুমি চলে যেতে চাচ্ছ চলে যাবে। আমার সঙ্গে এককাপ চা খেয়ে যেতে তো সমস্যা নেই। বোস। প্লিজ।
মতিন বসল! সালেহ ইমরান সিগারেটের প্যাকেট এগিয়ে দিলেন।
নিশু তার বাবার জন্যে ক্র্যাচ কিনে এনেছে। অ্যালুমিনিয়ামের হালকা ক্র্যাচ। ঝকঝক করছে।
আজিজ আহমেদ বিরক্ত গলায় বললেন, এ-কী! ক্র্যাচ কী জন্যে?
নিশু বলল, ক্র্যাচের ব্যবহার তুমি জানো না বাবা? বগলের নিচে দিয়ে হাঁটবে। হাইট অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যবস্থাও আছে। এসো হাইট ঠিক করে দেই।
আমি ক্র্যাচ বগলে দিয়ে হাঁটব কী জন্যে?
তুমি ক্র্যাচ বগলে দিয়ে হাঁটবে, কারণ তুমি পা মচকে ফেলেছ। পা ফেলতে পারছ না।
পা তো ভাঙে নাই। সামান্য মচকেছে, একদিন রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
যখন ঠিক হয়ে যাবে তখন আর ক্র্যাচ ব্যবহার করবে না। ঠিক না হওয়া পর্যন্ত করবে। উঠে দাঁড়াও, আমি হাইট ঠিক করব।
আজিজ আহমেদ কঠিন গলায় বললেন, না।
নিশু বলল, তুমি রেগে যাচ্ছ কেন বাবা?
সব বিষয়ে তুই জোর খাটাস, এটা আমার পছন্দ না।
মেয়ে তার বাবার উপর জোর খাটাতে পারবে না?
না।
বাবা কি মেয়ের উপর জোর খাটাতে পারবে?
মেয়ের জ্ঞানবুদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত পারবে।
নিশু শান্ত গলায় বলল, আমার জ্ঞানবুদ্ধি কি হয়েছে?
আজিজ আহমেদ বললেন, তোর জ্ঞানবুদ্ধি হয় নি। তারপরেও আমি কিন্তু তোর উপর জোর খাটাই না।
আমার জ্ঞানবুদ্ধি হয় নি?
না। এমএতে ফার্স্ট ক্লাস পেলেই জ্ঞানবুদ্ধি হয় না।
আমার জ্ঞানবুদ্ধি হয় নি এটা কেন বলছ?
ব্যাখ্যা করতে হবে?
অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে। উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করতে হবে। মনে কর পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে–নিশুর জ্ঞানবুদ্ধি নেই বিষয়টি উদাহরণসহ বিশেষভাবে ব্যাখ্যা কর!
শুনলাম তুই ইংল্যান্ডে যাবার আগে বিয়ে করবি। তারপর শুনলাম নিজেই পাত্র খোজায় বের হয়েছিস। একজন না করেছে, এখন অন্য দুইজনের সঙ্গে দেন-দরবার করছিস। তারপর শুনলাম দুইজনের একজন রাজি হয়েছে, এখন আবার তুই রাজি না। কারণ যে রাজি হয়েছে সে তোর সঙ্গে ইংল্যান্ডে যেতে চায়। এতে আবার তোর আপত্তি। আরো ব্যাখ্যা লাগবে?
না।
নিশু উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, বাবা, আমি বেরুচ্ছি। দুপুরের আগেই ফিরব। তুমি আবার রান্না করতে বসবে না। আমি দুপুরের খাবার নিয়ে আসব।