কেউ এরকম ভুল করলে দেখবে তাদের মেমসাহেব নগ্ন হয়ে স্যারের পাশে বসে আছে। এই দৃশ্য দেখলে পৃথিবীর ঘূর্ণন থেমে যাবে না। সোলার সিস্টেমে তেমন কোনো বিপর্যয় হবে না।
সালেহ ইমরান চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। নিজেই কিচেন থেকে দুই কাপ কফি নিয়ে ঢুকলেন। মুনা আগের অবস্থায় নেই। সে বড় বড় ফুলের গাউন জাতীয় পোশাক গায়ে দিয়েছে। বাথরুম থেকে মুখ ধুয়ে এসেছে। টাওয়েল দিয়ে মুখ মুছে নি। মুখে বিন্দু বিন্দু পানি। সালেহ ইমরান কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলেন। মুনাকে খুবই সুন্দর লাগছে।
মুনা কফিতে চুমুক দিয়ে আগ্রহের সঙ্গে বলল, তুমি তো কাল ছবিটা অল্প খানিকক্ষণ দেখে ঘুমিয়ে পড়লে। পুরোটা দেখলে মজা পেতে।
সালেহ ইমরান বললেন, ভূতের ছবি দেখে কেউ মজা পায় না, ভয় পায়।
শেষপর্যন্ত ছবিটা কিন্তু ভূতের ছিল না। ভৌতিক যাবতীয় কর্মকাণ্ড বাচ্চা মেয়েটা করত।
কেন করত?
কারণ মেয়েটা মানসিক রোগী।
মুনা সালেহ ইমরানের কোল থেকে সবকটা খবরের কাগজ টেনে নিল। সে কাগজ পড়বে না। দ্রুত পাতা উল্টে ছবিগুলি দেখবে। ছবির ক্যাপশন পড়বে।
সালেহ ইমরান ঠিক করলেন স্ত্রীকে উপদেশমূলক কিছু কথা বলবেন। যেমন, আজ তিনি টিভিতে সিএনএন দেখছিলেন। মুনা তাকে কিছুই জিজ্ঞেস না করে চ্যানেল বদলে দিল। কোল থেকে খবরের কাগজ টেনে নিয়ে নিল।
মুনা বলল, ইন্ডিয়া পাকিস্তান যুদ্ধ হচ্ছে–পড়েছ খবরটা?
সালেহ ইমরান গম্ভীর গলায় বললেন, হুঁ!
এই যুদ্ধে আমরা কাদেরকে সাপোর্ট করব? ইন্ডিয়াকে না পাকিস্তানকে?
যুদ্ধকে আমরা সাপোর্ট করব কেন? যুদ্ধ কি সাপোর্ট করার মতো বিষয়?
মুনা বলল, তুমি গলা গম্ভীর করে কথা বলছ কেন? কোনো কারণে কি আমার উপর রেগে আছ?
না।
কেউ আমার উপর রাগ করলে কিংবা বিরক্ত হলে আমি সঙ্গে সঙ্গে ধরতে পারি।
কেউ যদি তোমার উপর খুশি হয় সেটা কি ধরতে পার?
মুনা বলল, অবশ্যই পারি। কফি নিয়ে ঘরে ঢুকে তুমি আমাকে দেখে খুশি হয়ে গেলে, সেটা সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি।
ক্ষিধে লেগেছে, চল নাশতা খেতে যাই।
মুনা বলল, আমি নাশতা খাব না। আমার চোখ থেকে ঘুম যায় নি। আমি আবার ঘুমাব। তুমি নাশতা খেয়ে নাও।
ঠিক আছে।
কাল রাতে তোমাকে যে একটা কথা বলেছিলাম সেটা মনে আছে?
কী কথা?
মতিন নামের লোকটাকে বিদায় করে দিতে। সে এক সপ্তাহ এই বাড়িতে আছে। এক সপ্তাহের বেতন দিয়ে তাকে বিদায় করে দিবে। কী কারণে তাকে বিদায় করবে সেটা রাতে একবার বলেছি। তোমার মনে না থাকলে আরেকবার বলতে পারি।
আরেকবার বলো।
মুনা বিছানায় উঠে গায়ের কাপড় খুলে চাদর দিয়ে নিজেকে ঢাকতে ঢাকতে বলল, মতিন নামের লোকটা ঘর থেকে বাইরে পা দেয় নি। ঘরের বাইরে পর্যন্ত আসে নি। কমলের ঘরে যায় নি। কমলের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো চেষ্টা করে নি। নিজের ঘরে বসে দিনরাত টিভি দেখেছে, গান শুনেছে, বই পড়েছে, সিগারেট খেয়েছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে, সে এই চাকরিটা নিয়েছে রিলাক্স করার জন্যে।
একটা ছোট্ট ঘরে সাতদিন বসে থাকার মধ্যে কি কোনো রিলাক্সেসান আছে?
একেকজন একেকভাবে রিলাক্স করে। মতিন নামের লোকটির রিলাক্সেসান এই রকম। তুমি আমাকে আরেককাপ কফি দিয়ে তারপর নাশতা খেতে যাও। ভালো কথা, আজ শুক্রবার, কমলের মুভি ডে। সন্ধ্যাবেলা তার সঙ্গে মুভি দেখতে হবে, ভুলে যেও না।
ভুলব না।
থ্যাংক ইউ, অ্যান্ড আই লাভ ইউ। শোন, তোমাকে কফি আনতে হবে না। আমি এখনই ঘুমিয়ে পড়ব।
মুনা চাঁদরের নিচে ঢুকে গেল।
সালেহ ইমরান লাইব্রেরি ঘরে বসে আছেন। তাঁর সামনে মতিন বসে আছে। তার মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এই সাতদিনে লোকটা মনে হচ্ছে শেভ করে নি। তবে খোঁচা খোঁচা দাড়িতে লোকটাকে খারাপ লাগছে না। সালেহ ইমরান পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করতে করতে বললেন, তোমাকে কেন ডেকেছি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ?
মতিন বলল, বুঝতে পারছি না।
সালেহ ইমরান সিগারেট ধরাবেন কি ধরাবেন না বুঝতে পারছেন না। এটা হবে তার দিনের প্রথম সিগারেট। তিনি সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করছেন। চেষ্টার অংশ হিসেবে দিনের প্রথম সিগারেট ধরানোর সময় প্রতিদিনই কিছু কিছু বাড়াতে হবে। তিনি যে রুটিনে চলছেন সেই রুটিনে আজকের প্রথম সিগারেট
একটায় ধরানোর কথা। এখন বাজছে বারোটা।
তিনি সিগারেট ধরালেন। মতিন নামের লোকটিকে স্যাক করা হবে। অস্বস্তিকর কাজ। যে-কোনো অস্বস্তিকর কর্মকাণ্ডে সিগারেটের ধোঁয়া একধরনের আব্রু তৈরি করে।
সালেহ ইমরান সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বললেন, তোমাকে আমরা যে। পারপাসে রেখেছিলাম সেই পারপাস ফুলফিলড হচ্ছে না।
মতিন বলল, ও আচ্ছা।
সালেহ ইমরান বললেন, You are not the right person.
মতিন বলল, বুঝতে পারছি।
তোমার সময় নষ্ট হলো, আই অ্যাম সরি ফর দ্যাট।
স্যার, কোনো অসুবিধা নেই। আমি কি এখনই চলে যাব?
ইউ টেক ইউর টাইম। তুমি সাতদিন ছিলে, তোমাকে আমি পুরো মাসের বেতন দিতে বলেছি।
স্যার থ্যাংক য়্যু। যেহেতু আমি এখন আর আপনার কর্মচারী না, আমি কি একটা সিগারেট খেতে পারি? আপনার সিগারেট খাওয়া দেখে লোভ লাগছে।
সালেহ ইমরান বললেন, অবশ্যই! তিনি তাঁর সিগারেটের প্যাকেট বাড়িয়ে দিলেন। লাইটার এগিয়ে দিলেন। সালেহ ইমরানকে দেখে মনে হচ্ছে। চাকরিচ্যুতি জাতীয় কঠিন কর্মকাণ্ড খুব সহজেই হয়ে যাওয়াতে তিনি আনন্দিত।