তুই কি সত্যিই তৌহিদাকে বিয়ে করবি?
অবশ্যই।
কবে?
তৌ যখন বলবে তখন। তৌ যদি বলে আগামী পরশু তাতেও আমি হর্ষু।
হর্ষ মানে কী?
হর্ষু মানে হর্ষিত। আনন্দিত।
আমার সঙ্গে এরকম ফাজলামি করে কথা বলিস কেন? আমি তোর বড় বোন। আমি কি তোর ইয়ার বন্ধু? এখন সত্যি করে বল, তুই কোথায়?
একজন ভয়ঙ্কর বড় লোকের বাড়ির এসি দেয়া ঘরে শুয়ে আছি। এসির টেম্পারেচার আঠারোতে দেয়া বলেই ঘরটা ডিপ ফ্রিজের মতো ঠাণ্ডা। এই জন্যেই তোমাকে বলেছি ডিপ ফ্রিজের ভেতর শুয়ে আছি।
এত বড় লোকের বাড়িতে ঘুমাচ্ছিস কেন?
কারণ এই বাড়ির একটা গুণ্ডা ছেলের দেখভালের চাকরি পেয়েছি। থাকা খাওয়া ফ্রি। মাসিক বেতন পনের হাজার।
গুণ্ডা ছেলে মানে কী?
গুণ্ডা ছেলে মানে গুণ্ডা ছেলে। সে বাড়ি দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। দুটা স্টিচ দিতে হয়েছে। আপা, তোমার সঙ্গে আমি আর কথা বলতে পারব না। ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছি। মোবাইল অফ করে আমি এখন কম্বলের ভেতর ঢুকে যাচ্ছি।
মতিন মোবাইল অফ করে গুটিসুটি মেরে চাঁদরের ভেতর ঢুকে গেল। বিছানা থেকে নেমে কম্বল আনার মতো পরিশ্রম করতেও ইচ্ছা করছে না। এখন সে সরীসৃপদের মতো নিজের গায়ের উত্তাপে নিজেকে গরম করবে।
নতুন জায়গায় চট করে তার ঘুম আসে না। তবে আজ মনে হয় ঘুম আসবে। এখনই চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসছে। এসির একঘেয়ে শো শো শব্দটাও কাজে আসছে। Montony is sleeps carriage. একঘেয়েমি ঘুম হ্রদ। ভালো নাম মনে এসেছে তো! ঘুম হ্রদ। এই নামে উজবেক কবি নদ্দিউ নতিম অবশ্যই একটা কবিতা লিখতে পারেন–
ঘুম্র হ্রদ
অঘুমো রাজকন্যা ছিল ঘুম্রহ্রদে
তাকে ঘিরে জল নাচে শোঁ শোঁ শব্দ হয়
রাজকন্যার ভয় হয় তার শরীরে অসুখ
অসুখের নাম কী? প্রশ্ন করে জলপাখি
অঘুমা রাজকন্যা দেয় না উত্তর।
উত্তর-এর সঙ্গে মিল হয় এমন একটা শব্দ দরকার। শব্দ মাথায় আসছে না।
দেয় না উত্তর
… … নির্ভর
… … মর
… … পর
… … সর
… … ঝড়
আচ্ছা ঝড় নিয়ে কাজ করা যায়। উত্তরের সঙ্গে ঝড় ভালোই মিলে।
অঘুমা রাজকন্যা দেয় না উত্তর
তখন হ্রদ জেগে ওঠে
জেগে ওঠে দক্ষিণের ঝড়॥
ঠিক হলো না। উত্তর শব্দটা ছিল বলেই মাথায় দক্ষিণ ঘুরঘুর করছে। এই উত্তর সেই উত্তর না।
কবিতাটা উল্টো করে লিখলে কেমন হয়? কমলের মতো শিশুদের জন্যে উল্টো কবিতা। মিল থাকবে শুরুতে। সেটা কঠিন হবে। কবিতা যা আছে তাকেই উল্টানো যাক।
দহ্র ম্রঘু
দেহ্র ম্রঘু লছি ন্যাকজরা মোঘুখ
য়হ ব্দশ শোঁ শোঁ চেনা লজ রেঘি কেতা
খসুঅ রেরীশ রঁতা য়হ য়ভ রন্যাকজরা
খিপালজ রেক শ্নপ্র? কী মুনা রখেসুঅ।
রত্তউ না য়দে ন্যাকজরা মাঘুঅ।
মতিন লক্ষ করল উল্টো করে কবিতা লিখে সে বেশ মজা পাচ্ছে।
আচ্ছা নিশুকে টেলিফোন করে কিছু উল্টো কথা বললে কেমন হয়? রাত অনেক হয়েছে। রাত কম হলে অ্যাক্সপেরিমেন্ট করা যেত। নিশুকে উল্টালে হয় শুনি। শুনি নামটাও তো সুন্দর।
ইমরান সাহেবের ঘুম
সকাল নটা।
ব্যারিস্টার সালেহ ইমরান সাহেবের ঘুম অনেক আগেই ভেঙেছে। তিনি শোবার ঘরের টিভির সামনে বসে আছেন। টিভিতে সিএনএন ধরা আছে। তবে শব্দ হচ্ছে না, শুধুই ছবি। মুনা ঘুমাচ্ছে। টিভির শব্দে তিনি স্ত্রীর ঘুম ভাঙাতে চাচ্ছেন না। মুনা কাল অনেকরাত জেগে এইচবিওতে একটা ভূতের ছবি দেখেছে। আজ সে বেলা পর্যন্ত ঘুমুবে, এটাই স্বাভাবিক।
সালেহ ইমরান টিভির পর্দার দিকে তাকাচ্ছেন না। তাঁর হাতে কয়েকটা পত্রিকা। তাঁর নজর পত্রিকার হেডলাইনে। আজকের প্রধান খবর–কারগিল। সীমান্তে ভারত পাকিস্তান খণ্ডযুদ্ধ। এই খণ্ডযুদ্ধের একটা ঐতিহাসিক তাৎপর্য আছে। এই যুদ্ধ পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থানে দুটি দেশের যুদ্ধ।
আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। অন্যদিন খবরের কাগজ পড়ার মধ্যেও একটা তাড়াহুড়া থাকে। সেই তাড়াহুড়া আজ নেই। তিনি এককাপ চা এবং এককাপ কফি এর মধ্যে খেয়ে নিয়েছেন। যেদিন চা ভালো হয় সেদিন কফি ভালো হয় না। যেদিন কফি ভালো হয় সেদিন চা ভালো হয় না। আজ দুটিই ভালো হয়েছে। সালেহ ইমরানের আরেক কাপ কফি খেতে ইচ্ছা করছে। তিনি অপেক্ষা করছেন। মুনা ঘুম ভেঙেই কফি খাবে। ছুটির দিনে স্ত্রীর সঙ্গে কফি খাওয়া আনন্দের ব্যাপার। সেই আনন্দের জন্যে অপেক্ষা করা যায়।
মুনার ঘুম ভেঙেছে। সে বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, হ্যালো! গুড মর্নিং।
সালেহ ইমরান স্ত্রীর দিকে একপলক তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলেন। মুনার গায়ে কোনো কাপড় নেই। মুনা গায়ে কাপড় রেখে ঘুমাতে পারে না। তার না কি হাঁসফাস লাগে। দম বন্ধ হয়ে আসে। স্ত্রীর এই অভ্যাসের সঙ্গে সালেহ, ইমরান দীর্ঘ পনের বছর ধরে পরিচিত, তারপরেও মুনার এই অবস্থায় অতি স্বাভাবিক হাসাহাসি তিনি নিতে পারেন না।
মুনা টিভির সামনে গেল। রিমোট নিয়ে চ্যানেল চেঞ্জ করে এইচবিওতে দিতে দিতে বলল, অ্যাই, বেল টিপে কফি দিতে বলো।
সালেহ ইমরান বললেন, তুমি গায়ে কিছু একটা দাও, তারপর বলি।
মুনা বলল, তুমি ভুলে যাচ্ছ, দিনের প্রথম কফি আমি এভাবেই খাই।
সালেহ ইমরান বললেন, তাহলে গায়ে চাদর টেনে বিছানায় বসো। কেউ একজন ঘরে ঢুকে তোমাকে এই অবস্থায় দেখবে, এটা কি ভালো হবে?
আমাদের শোবার ঘরে আমরা না ডাকা পর্যন্ত কেউ ঢুকবে না। এটা তুমি ন ভালো করে জানো।
তারপরেও তো ভুল করে কেউ ঢুকে পড়তে পারে।