রইসউদ্দিন জীবনে যেটা কখনো করেননি সেটা করে ফেললেন, হাত বাড়িয়ে শিউলিকে নিজের কাছে টেনে এনে বুকের মাঝে চেপে ধরে বললেন, “মা, তুমি যদি আমার সাথে থাকতে চাও কখনো কি আমি না করব! মানুষ কি কখনো নিজের মেয়েকে দূর করে দেয়?”
শিউলি রইসউদ্দিনের শার্ট ধরে ভেউভেউ করে কেঁদে ফেলে বলল, “আমার সবাই একসাথে থাকব। সবসময়। বল্টু, খোকন আর আমরা হব ভাইবোন, তুমি হবে আমাদের আব্বু।”
রইসউদ্দিন মাথা নাড়লেন, “ঠিক আছে মা।
“আমরা একসাথে শিশুপার্কে যাব, তুমি আমাদের বেলুন আর হাওয়াই মিঠাই কিনে দেবে।”
“কিনে দেব।”
“ঈদে তুমি আমাদের নতুন জামা কিনে দেবে।”
“কিনে দেব।”
“ঈদের দিন বল্টু আর খোকন আর তুমি পায়জামা-পাঞ্জাবি পরবে আর আমি নতুন জামা পরে সবার বাসায় বেড়াতে যাব।”
“বেড়াতে যাব।”
“আর কেউ আমাদের বাসায় এলে আমরা তাকে সেমাই খাওয়াব।”
রইসউদ্দিন কিছু বলার আগেই বল্টু বলল, “আমার সেমাই ভালো লাগে না।“
রইসউদ্দিন হাত বাড়িয়ে খোকন আর বল্টুকে নিজের কাছে টেনে এনে বললেন, “আচ্ছা সেটা সময় হলে দেখা যাবে। সেমাই না রেধে আমরা জর্দা রাঁধতে পারি, ফিরনি রাধতে পারি!”
এরকম সময় গাগু গড়িয়ে গড়িয়ে তাদের কাছে চলে এসে রইসউদ্দিনের পায়ের বুড়ো আঙুলটা ধরে সেটা মুখে পুরে মাড়ি দিয়ে কামড়ানোর চেষ্টা করতে লাগল। শিউলি চিৎকার করে বলল, “সর্বনাশ!”
“কী হল?”
“গাগুর কথা আমরা ভুলেই গেছি!” গাগু কার সাথে থাকবে?”
রইসউদ্দিন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “আগে খোঁজ করে বের করতে হবে তার নিজের বাবা-মা আছে কি না।”
“যদি না থাকে? খুঁজে না পাওয়া যায়?”
“তা হলে তো আমাদের সাথেই থাকবে। তবে–”
“তবে কী?”
“খুব কষ্ট হবে আমাদের। এত ছোট বাচ্চা কীভাবে দেখেশুনে রাখতে হয় আমরা তো কেউই জানি না।” রইসউদ্দিন খুব চিন্তিত হয়ে তাঁর মাথা চুলকাতে লাগলেন।
শিউলির মুখে হঠাৎ দুষ্টুমির হাসি খেলে গেল। সে বলল, “চিন্তার কোনো কারণ নেই।”
“কারণ নেই?”
“না।”
“কেন?”
“সময় হলেই তুমি দেখবে!”
.
যে-কথাটি শিউলি রইসউদ্দিনের কাছে গোপন রেখেছিল সেটি সে বল্টু আর খোকনের কাছে গোপন রাখেনি। ছোট বাচ্চা মানুষ করার জন্যে দরকার হচ্ছে একটি মা। ভাইবোন এবং বাবা যেরকম করে জোগাড় হয়েছে ঠিক সেরকম একটা মা জোগাড় করতে হবে। তাদের দারোগা আপা থেকে ভালো মা কে হতে পারে!
বল্টু আর খোকন শিউলির কথা বিশ্বাস করেনি। তাদের ধারণা কাজটা অসম্ভব, শিউলি বলল, “সে তিনমাসে মায়ের সমস্যা সমধান করে দেবে–এক ডজন হাওয়াই মিঠাই বাজি ধরেছিল সেটা নিয়ে।“
.
শিউলি বাজিতে হেরে গিয়েছিল।
তিন মাস পারেনি–সাড়ে তিন মাস সময় লেগেছিল।