বকুল চিৎকার করে বলল, “মিথ্যো কথা! আমরা চুরি করি নাই। তোমরা চুরি করেছ। তোমরা–”
অন্ধকারে পিছনে থেকে আরেকজন মানুষ বলল, “মিছিমিছি এদের সাথে আর্গুমেন্টে গিয়ে লাভ নেই। শুশুকটাকে ট্রাঙ্কুয়ালাইজ করো নিয়ে যেতে হবে এখনই।”
নীলা আর বকুল অবাক হয়ে দেখল বিদেশি সাহেবটা তার ব্যাগ খুলে একটা বড় সিরিঞ্জ বের করে টুশকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বকুল একটা চিৎকার করে সাহেবটার উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ছিল, কিন্তু তার আগেই দুজন পিছন থেকে বকুলকে ধরে ফেলল। বকুল আঁচড়ে কামড়ে মানুষ দুজনকে ছিঁড়ে ফেলতে চাইছিল কিন্তু তবু মানুষগুলো তাকে ছাড়ল না।
বকুল আর নীলা অসহায় আক্রোশে ছটফট করতে করতে দেখল মানুষগুলো টুশকিকে ইনজেকশান দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল, তারপর ছোট একটা পানির ট্যাংকে তাকে বসিয়ে দিল। ধরাধরি করে তখন সেই ছোট ট্যাংকটাকে বড় একটা পিকআপ টাংকে নিয়ে তুলে ফেলল। ঠিক যখন পিকআপ ট্রাকটা স্টার্ট নেবে তখন হঠাৎ করে পুরো এলাকা একটা গাড়ির হেডলাইটে আলোকিত হয়ে গেল। শমসের নিচু গলায় বলল, “আর চিন্তা নেই।”
“কেন?”
“স্যার এসে গেছেন।”
“সিঙ্গাপুর থেকে?”
“সিঙ্গাপুর থেকে আগেই এসেছেন। আমি গোলমাল দেখে খবর পাঠালাম স্যারকে।”
গাড়িটা নদীর ঘাটে থামল। সেখান থেকে ইশতিয়াক সাহেব খুব ধীরেসুস্থে নামলেন। তার সাথে যে-মানুষটি নামলেন তিনি নিশ্চয়ই খুব বড় কোন মানুষ হবেন। কারণ তাঁকে দেখে সাদা পোশাকের পুলিশেরা খুব জোরে স্যালুট দেওয়া শুরু করল।
ইশতিয়াক সাহেবকে দেখে নীলা প্রায় চিৎকার করে কেঁদে উঠে বলল, “আব্বু দেখো টুশকিকে নিয়ে যাচ্ছে!”
ইশতিয়াক সাহেব খুব বিচলিত হলেন বলে মনে হল না। হাসিমুখে বললেন, “তাই নাকি?
“হ্যাঁ, আব্বু। তুমি কিছু–একটা করো, না হলে এক্ষুনি নিয়ে যাবে।”
“তোরা যা কাণ্ড করেছিস আমার আবার কি করতে হবে? পুরো ওয়াটার ওয়ার্ল্ড নাকি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছিস?”
“আমরা মোটেই জ্বালাইনি আব্বু। পাবলিক জ্বালিয়েছে।”
ইশতিয়াক সাহেব হো হো করে হেসে উঠে বললেন, “বাংলাদেশের পাবলিক খুব জ্বালাতে পোড়াতে পছন্দ করে, তাই না?”
নীলা রাগ হয়ে বলল, “আব্বু তুমি এখনও হাসছ? তুমি জান ওরা টুশকিকে কী করেছে?”
ইশতিয়াক সাহেব সাথে সাথে গম্ভীর হবার ভান করে বললেন, “ঠিক আছে মা, এই দেখ হাসি বন্ধ করলাম।
ইশতিয়াক সাহেব পিকআপ ট্রাকটার দিকে হেঁটে যেতে শুরু করলেন এবং প্রায় সাথে সাথেই পিকআপের ভিতর থেকে ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের একজন দেশি এবং একজন বিদেশি মানুষ নেমে এল। ইশতিয়াক সাহেব এগিয়ে গিয়ে খুব হাসিহাসি মুখে বললেন, “আমার নাম ইশতিয়াক আহমেদ। এই ছোট ডেঞ্জারাস মেয়েটা দেখছেন তার নাম বকুলাপ্পু, তার যে বন্ধু সে হচ্ছে নীলা আর আমি হচ্ছি নীলার বাবা। শুনলাম আমার মেয়ে আর বকুলাপ্পু নাকি কী একটা গোলমাল করেছে?”
মানুষটা শুকনো গলায় বলল, “আমার নাম আবু কায়সার। আমি ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের জি. এম.। এখানে সব মিলিয়ে দশ মিলিওন ডলার ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে, আরও আসছে। আমরা এখানে এই ধরনের বাংলা নাটক–”
“আপনার কি আধঘণ্টা সময় হবে?”
মানুষটা থতমত খেয়ে বলল, “আধঘণ্টা? কেন?”
“পুরো ব্যাপারটা তা হলে ভালো করে সেটল করে ফেলতে পারতাম।”
“আমি ঠিক জানি না আপনি কীভাবে সেটল করতে চাইছেন।” মানুষটা রাগ রাগ মুখে বলল, “কিন্তু আপনাকে আমি একেবারে পরিষ্কার করে দিচ্ছি আমরা এই প্রজেক্টে একেবারে কোনরকম ঝামেলা সহ্য করব না। নো ওয়ে।”
ইশতিয়াক সাহেব হাসি হাসি মুখে বললেন, “ঠিক আছে। কিন্তু আমার আধঘণ্টা সময় চাই।”
“ঠিক আছে।”
ইশতিয়াক সাহেব যেন খুব একটা বড় ঝামেলা মিটে গেছে সেরকম ভান করে ডাকলেন, “শমসের!”
শমসের নিঃশব্দে এগিয়ে এসে বলল, “জি স্যার?”
“আমার সময় মাত্র আধঘণ্টা। তার মাঝে আমি পুরো ঝামেলাটা মিটিয়ে ফেলতে চাই।”
“ঠিক আছে স্যার।”
“কতক্ষণ লাগবে তোমার?”
শমমের হাতে আঙুলের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “পুরোটাই কিনে ফেলবেন?”
“হ্যাঁ, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড পুরোটাই কিনে ফেলব।”
“ফাইনালাইজ করতে সময় নেবে তবে ডিলটা পাকা করে আসতে পারি।”
“কতক্ষণ লাগবে?”
“আপনার গাড়িটা আর আপনার সেলুলার ফোনটা যদি ব্যবহার করতে দেন তা হলে কুড়ি মিনিট হয়ে যাবে স্যার।”
ইশতিয়াক সাহেব পকেট থেকে সেলুলার ফোন বের করে বললেন, “নাও।” শমসের নিচু গলায় বলল, “একটা চেক সাইন করে দিতে হবে স্যার।”
“ও আচ্ছা, ভুলেই গিয়েছিলাম।”
ইশতিয়াক সাহেব চেকবই থেকে একটা চেক ছিঁড়ে সেটা সাইন করতে করতে বকুলকে ডাকলেন, “বকুলাপ্পু মা, এদিকে শোনো।”
বকুল এগিয়ে এল, “জি চাচা।”
“তোমার হাতের লেখা কেমন? নীলার হাতের লেখা একেবারে জঘন্য, পড়ার উপায় নেই।”
“আমারটাও বেশি ভাল না।”
“পড়া যায় তো? পড়া গেলেই হবে।”
“জি পড়া যায়।”
ইশতিয়াক সাহেব পকেট থেকে একটা নোটবই বের করে তার একটা কাগজ ছিঁড়ে বকুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “নাও লেখো।”
“কলম নাই চাচা।”
শমসের একটা কলম এগিয়ে দিল। বকুল কলমটা হাতে নিয়ে বলল, “কী লিখব?”
“লেখো ওয়াটার ওয়ার্ল্ড-এর জি. এম. জনাব আবু কায়সার এবং সহযোগী জনাব–”ইশতিয়াক সাহেব হঠাৎ থেমে গিয় বললেন, “বিদেশি সাহেবটার যেন কী নাম?