তুমি নিউইয়কে যাবে শুনে আমি খুব খুশি হয়েছি। আমি বইয়ে পড়েছি সেখানে অনেক ঠাণ্ডা। তুমি ভালো করে সোয়েটার পরে ঘর থেকে বের হবে।
তোমার সাঁতার শেখার কী অবস্থা? আমার কাছে এলে আমি তোমাকে একদিনে সাঁতার শিখিয়ে দেব। (গাছে উপর থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেব, তুমি হাবুডুবু খেয়ে একবার সাঁতার শিখে যাবে। হা হা হা।)।
ইতি প্রাণের বন্ধু জীবনের বন্ধু বকুল।
পুনঃ টুশকির বুদ্ধি মনে হয় একটু বেড়েছে। আমাকে নিয়ে সে যখন নদীর। ভিতরে ঢুকে যেতে চায় আমি তখন তার পিঠে থাবা দেই, তা হলে আবার সে ভেসে ওঠে। আমি আজকে টুশকির পিঠে করে অনেকক্ষণ নদীতে সাঁতার কেটেছি। আমার মা-বাবা এবং বড়চাচার ধারণা এই কাজটা খুব খারাপ। মেয়েদের নাকি ঘরের ভিতরের কাজ শেখা উচিত। রান্নাবান্না করা, বাসন এবং কাপড় ধোয়া এবং সেলাইয়ের কাজ। ই-ই-ই-ই-ই।
.
প্রিয় বকুল,
তুমি ঠিকই বলেছ, নিউইয়কে অনেক ঠাণ্ডা। শুধু সোয়েটার পরলে হয় না, তার উপর একটা জ্যাকেট পরতে হয়। আজকে আমার আব্বু বলেছে ডাক্তারদের ধারণা আমার বিপদ কেটে গেছে। বলেছে সবসময় হাসিখুশি থাকতে। হা হা হা হি হি হি হো হো হো (হাসিখুশি থাকছি!)
আমার সাঁতার শেখা এখনও শুরু হয়নি। নিউইয়কে বেশিদিন থাকলে এখানে আব্বু সাঁতার শেখার স্কুলে ভর্তি করে দেবে। কিন্তু এখানে আমার একেবারে ভালো লাগে না। তবে দোকানগুলো অনেক সুন্দর। আমি তোমার জন্যে একটা গিফট কিনেছি, সেটা দেখলে তোমার চোখ ট্যারা হয়ে যাবে। হা হা হা।
টুশকির বুদ্ধি একটু বেড়েছে শুনে নিশ্চিন্ত হলাম। আমাকে নিয়ে যদি পানির নিচে ডাইভ দেয় কী বিপদ হবে জান? তবে প্লিজ প্লিজ প্লিজ তুমি একা একা সব মজা শেষ করে ফেলো না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
প্রাণের বন্ধু জীবনের বন্ধু পৃথিবীর অন্য পাশে থেকে নীলা।
.
পুনঃ বিশু চোরার ভুরুর চুল কি গজিয়েছে? আমি শুনেছিলাম ভুরু একবার কামানো হলে সেটা নাকি আর গজায় না। তুমি অবশ্য অবশ্য আমাকে জানাও।
.
প্রিয় নীলা,
আমি বিশু চোরার সাথে কথা বলেছি। সে বলেছে ভুরু কামালে আবার নাকি ভুরু গজায়, তবে অনেকদিন সময় লাগে। বিশু চোরার ভুরু নাকি আগেও একবার কামানো হয়েছিল।
নিউইয়কের ডাক্তার বলেছে তোমার বিপদ কেটেছে শুনে আমি নিশ্চিন্ত হলাম কারণ এদিকে একটা সাংঘাতিক বড় গোলমাল হয়েছে। সাংঘাতিক সাংঘাতিক বড় গোলমাল। তুমি শুনলে ভয়ে তোমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। তোমার মনে আছে সাজ্জাদ বলেছিল কারও জান বাঁচানোর জন্যে আরেকটি জান দিতে হয়? সেইজন্যে আমরা মোরগের বাচ্চাটা সদকা দিয়েছিলাম খেলার মাকে? তোমার মনে আছে আমরা খেলার মাকে বলেছিলাম সে যেন অবশ্য অবশ্যই সেটা জবাই করে খেয়ে ফেলে?
তুমি বিশ্বাস করবে না খেলার মা কি করেছে! সে মোরগের বাচ্চাটা জবাই করে নাই। শুধু তাই না, সেটাকে সে খাইয়ে-দাইয়ে এই মোটা করেছে। তুমি চিন্তা করতে পার? জানের বদলে জান দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেটা দেওয়া হয় নাই। আমি অনেক রাগ হয়েছিলাম, তখন খেলার মাও আমার উপর অনেক রাগ হয়েছে। সে নাকি মোরগ খায় না। শুধু মোরগ না, মাছ মাংস ডিম কিছুই খায় না। চিন্তা করতে পার?
টুশকির খবর ভালো। আমি তাকে এখন পানির মাঝে লাফ দেওয়া শিখাচ্ছি। প্রথমে আমাকে নিয়ে সে পানির নিচে চলে যায়, আমি তার পিঠ আঁকড়ে বসে পা দিয়ে পেটের মাঝে পুঁতো দিতেই সে পানি থেকে লাফ দিয়ে বের হয়ে আসে। কী যে মজা হয় তুমি চিন্তাও করতে পারবে না!
তোমার প্রাণের বন্ধু বকুল।
প্রিয় বকুল,
আমাকে নিয়ে আব্বু ওয়াশিংটনে ডি. সি. গিয়েছিল, সেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর মিউজিয়াম দেখেছি। এসেই তোমার চিঠি পেয়েছি, আমার একটা অনেক বড় চিঠি লেখার ইচ্ছে করছে কিন্তু সেটা লিখতে পারব না কারণ আব্বু আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমাকে নিয়ে ব্রডওয়েতে একটা থিয়েটার দেখতে যাবে। থিয়েটার দেখে এসে আমি তোমাকে চিঠি লিখব।
প্রাণের বন্ধু জীবনের বন্ধু নীলা।
পুনঃ আব্বু আমাকে নিয়ে ফ্লোরিডা যাচ্ছে বলে এখন তোমাকে বড় চিঠি লিখতে পারছি না। ই-ই-ই-ই–
পুনঃ পুনঃ টুশকির খবর পড়ে আমার হিংসা বেড়েই যাচ্ছে।
.
প্রিয় নীলা,
টুশকির একটা বড় খবর আছে। এতদিন টুশকির যখন ইচ্ছা হত তখন সে আমার কাছে আসত। নদীতে যখন লাফঝাঁপ দিতাম তখন সে শব্দ হলে চলে আসত। গত কয়েকদিন হল টুশকিকে ডাকার একটা উপায় বের করেছি। নদীর পাড়ের হিজল গাছটার কথা মনে আছে? সেটা আরও বাঁকা হয়েছে, একটা ডাল পানিতে লেগে আছে। সেই ডালে উঠে লাফালে পানিতে শব্দ হয়, সেই শব্দ শুনে টুশকি চলে আসে। কী মজা! যখন ইচ্ছা তখন তাকে ডাকতে পারি। অনেকটা টেলিফোন করার মতো। টুশকির কাছে টেলিফোন। হা হা হা।
টুশকির খবর মনে হয় আশেপাশে ছড়িয়ে গেছে কারণ আমি দেখেছি অনেক দূর দূর থেকে লোকেরা টুশকিকে দেখতে আসে। সেদিন খবরের কাগজ থেকে লোক এসেছিল কিন্তু আমার বাবা বলেছে মেয়েদের খবরের কাগজের লোকের সাথে বলা ঠিক না। তুমি চিন্তা করতে পার? ই-ই-ই-ই
ফ্লোরিডাতে কী দেখলে আমাকে লিখে জানিও।
প্রাণের বন্ধু জীবনের বন্ধু বকুল।
.
প্রিয় বকুল, তোমার বাবা খবরের কাগজের লোকের সাথে কথা বলতে দেননি শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছে, দেওয়া উচিত ছিল। তবে দিলে আমার হিংসা আরও অনেক বেশি হত–এত বেশি হত যে আমি মনে হয় ফেটে টুকরো টুকরো হয়ে যেতাম। এক দিক দিয়ে ভালোই হল। হা হা হা হা।