“আব্বু–একজন ডাক্তার দরকার। এখানে কোনো ডাক্তার নেই।”
“নেই নাকি?”
“না আব্বু।”
“ঠিক আছে।” ইশতিয়াক সাহেব গলা উঁচিয়ে ডাকলেন, “শমসের—”
সাথে সাথে নিঃশব্দে শমসের এসে হাজির হল। বলল, “আমাকে ডেকেছেন স্যার?”
“হ্যাঁ। আমাদের একজন ডাক্তার দরকার।”
শমসের উদ্বিগ্ন মুখে বলল, “কার জন্যে স্যার?”
“একজন ভেজাল ডাইনি বুড়ির নাকি খাঁটি জ্বর উঠেছে, তার জন্যে। কতক্ষণ লাগবে?”
শমসের তার হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “আধঘণ্টার মতো লাগবে স্যার।”
“তোমাকে আধঘণ্টা নয়, পুরো একঘণ্টা সময় দিলাম। যাও নিয়ে এসো একজন।”
শমমের হেঁটে চলে যাচ্ছিল তখন নীলা পিছন থেকে ডাকল, “শমসের চাচা!”
শমসের ঘুরে তাকাল। নীলা বলল, “আব্বুর কথা শুনবেন না। আপনি আধঘণ্টার মাঝেই নিয়ে আসেন। অসুখ খুব খারাপ জিনিস! আমি জানি।” শমসের হাসিমুখে বলল, “ঠিক আছে! আমি আধাঘণ্টার মাঝেই আনব।”
০৬. প্রিয় বকুল, তুমি কেমন আছ
প্রিয় বকুল,
তুমি কেমন আছ? আমি ভালো আছি। মানুষ চিঠিতে সবসময় লেখে তুমি কেমন আছ আমি ভালো আছি–আমি আগে কোনদিন লিখিনি কারণ আগে আমি কখনো ভাল ছিলাম না। সবসময় আমার অসুখ ছিল। আজমল চাচা বলেছেন আমি এখন ভালো হয়ে গেছি সেজন্যে লিখলাম। হা হা হা।
আমি আসলেই ভালো হয়ে গেছি। তোমার জন্যে আসলে আমার অসুখ ভালো হয়েছে। এখন আমার সবসময় খিদে থাকে আর আমি সবসময় খাই। আমাকে দেখে আগে যেরকম কাঠির মতো লাগত এখন সেরকম লাগে না। আমি এখন মোটাসোটা হয়েছি। মনে হচ্ছে কয়েকদিনের মাঝে আমি মোটা হতে হতে একেবারে গোলআলুর মতো হয়ে যাব, কেউ ধাক্কা দিলেই তখন বলের মতো গড়াতে থাকব। সব দোষ হবে আমার। হা হা হা।
বকুল, তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছে কাজেই এখন তোমাকে আমার প্রাণের বন্ধু হতেই হবে। প্রাণের বন্ধু আর জীবনের বন্ধু। তুমি আমাকে চিঠি লিখে জানাও তোমার প্রাণের বন্ধু আর জীবনের বন্ধু হতে কোন আপত্তি আছে কি না।
ইতি তোমার প্রাণের বন্ধু নীলা।
পুনঃ টুশকি কেমন আছে? তাকে আমার হয়ে একটু রগড়া দিও।
পুনঃ পুনঃ জমিলা বুড়ি কেমন আছে? তাকে কি এখনো তোমরা ভয় পাও?
পুনঃ পুনঃ পুনঃ খেলার মা এবং মতি পাগলা এবং বিশু-চোরা কেমন আছে?
.
প্রিয় নীলা,
আমি তোমার চিঠি সময়মতোই পেয়েছি কিন্তু উত্তর দিতে দেরি হল কারণ চিঠি পোস্ট করার জন্যে কোন খাম ছিল না–পোস্ট অফিস অনেক দূরে, আনতে দেরি হয়েছে।
তুমি লিখেছ আমি তোমার জীবন বাঁচিয়েছি কিন্তু আমি তো কিছুই করি নাই, আমি কেমন করে জীবন বাঁচালাম? মনে হয় মোরগ সদকা দেওয়াটাতে কাজ হয়েছে। তোমার জান না নিয়ে মোরগের বাচ্চার জান নিয়েছে। আমার তাই মনে হয়।
আমি তোমার জান না বাঁচালেও আমি তোমার প্রাণের বন্ধু হতে রাজি আছি। আমার কোনই আপত্তি নাই। সারাজীবনের জন্যে প্রাণের বন্ধু কীভাবে হতে হয়? কোন কি নিয়ম আছে?
ইতি তোমার প্রাণের এবং জীবনের বন্ধু বকুল।
পুনঃ জমিলা বুড়ি ভালোই আছে, এখন তাকে দেখলে বেশি ভয় লাগে না। মতি পাগলা সেদিন ছুটে গিয়েছিল, দা হাতে নিয়ে লাফ দিচ্ছিল তখন সবাই মিলে তাকে ধরে ফেলেছে। বিশু-চোরা ভালোই আছে, মনে হয় তার চুরি ভালোই হচ্ছে।
পুনঃ পুনঃ টুশকির সাথে প্রায় প্রত্যেকদিনই দেখা হয়। গ্রামের লোকজন এখন আর টুশকিকে দেখে ভয় পায় না। আমি সেদিন টুশকির পিঠে উঠেছিলাম, সে আমাকে নিয়ে নদীর মাঝখানে গিয়েছিল, তবে তার বুদ্ধি খুব কম। নদীর মাঝেখানে গিয়ে আমাকে নিয়ে পানির নিচে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। হা হা হা।
.
প্রিয় বকুল,
তোমার যেন চিঠি লিখতে দেরি না হয় সেজন্যে অনেকগুলো স্ট্যাম্প পাঠালাম। এখন আর তোমার পোস্ট অফিসে যেতে হবে না। প্রাণের বন্ধু এবং জীবনের বন্ধু হওয়ার প্রথম নিয়ম চিঠি পেলে সাথে সাথে উত্তর দিতে হয়।
টুশকির পিঠে চড়ে তুমি নদীর মাঝেখানে গিয়েছিলে শুনে আমি হিংসার চোটে প্রায় মারা যাচ্ছি। আমাকে ছাড়া তুমি একলা টুশকির পিঠে চড়বে না। না না না। তবে আমার আব্বু বলেছে যতদিন আমি সাঁতার না শিখব ততদিন আমাকে টুশকির পিঠে নদীর মাঝে যেতে দেবে না। আমি আব্বুকে বলেছি আমাকে এক্ষুনি সাঁতার শিখিয়ে দিতে। আলু বলেছে শমসের চাচাকে। শমসের চাচা বলেছে এক দুই। সপ্তাহের আগে নাকি সাঁতার শেখা যাবে না। ই ই ই ই (এটা মানে রাগ)।
আব্বু বলেছে আমাকে একবার নিউইয়কে নিয়ে ডাক্তার দেখাবে। এই শেষবার। আর যেতে হবে না। মনে হয় সামনের সপ্তাহে যেতে হবে। তুমি কিন্তু চিঠি লিখে যাবে। শমসের চাচাকে বলে দেওয়া আছে, শমসের চাচা তোমার চিঠি আব্বুর নিউইয়ক অফিস, না হলে হোটেলে ফ্যাক্স করে দেবে। তাড়াতাড়ি চিঠি লিখবে।
তোমার প্রিয় বন্ধু প্রাণের বন্ধু এবং সারাজীবনের বন্ধু নীলা।
.
প্রিয় নীলা,
একটা অনেক গরম খবর আছে। সেইদিন স্কুল থেকে আসছি তখন বিশু চোরার সাথে দেখা। তাকে দেখে প্রথম চিনতে পারি নাই কারণ তার মাথার সব চুল এমনকি ভুরু পর্যন্ত কামানো। তা ছাড়া কপালে এবং মুখে আলকাতরার দাগ। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে, প্রথমে স্বীকার করতে চায় না, অনেক জোরাজুরি। করার পরে বলল, সে নাকি চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল, তখন গ্রামের লোক তার চুল এবং ভুরু কামিয়ে দিয়ে আলকাতরা মাখিয়ে দিয়েছে। সে ন্যাংড়াতে ন্যাংড়াতে হাঁটছিল, মনে হয় তাকে ধরে কিছু পিটুনিও দিয়েছে।