হঠাৎ হিপনোটিজমের বই পড়ছ কেন?
কী করে মানুষকে হিপনোটাইজ করা যায় এটা শেখার জন্যে। পুরোপুরি শেখার পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ম্যাজিশিয়ানরা যেমন যাদু দেখায় আমি হিপনোটিজমের খেলা দেখাব। কোনো একজন দর্শককে স্টেজে ডেকে এনে হিপনোটাইজ করব। তারপর তাকে বলব— আপনি এখন মানুষ না। আপনি একটা বড় সাইজের কোলা ব্যাঙ। আপনি স্টেজে লাফাতে থাকুন। সে তখন ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে স্টেজের এ-মাথা ও-মাথা যাবে। মজা হবে না?
হবার তো কথা।
এই শোন, তুমি যেখানে আছ সেখান থেকে কি আকাশ দেখা যায়?
হ্যাঁ যায়।
আকাশে মেঘ আছে?
সামান্য, বেশি না। কেন বলো তো?
আকাশ যদি খুব মেঘলা হয়ে থাকত আর ঝুমঝুম করে বৃষ্টি পড়ত, এক্ষুণি বৃষ্টি হবে, এক্ষুণি বৃষ্টি হবে ভাব থাকত তাহলে তোমাকে আসতে বলতাম।
আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। মনে হয় সন্ধ্যার দিকে বৃষ্টি হবে। তুমি বললে আমি চলে আসতে পারি। আমার কোনো কাজ নেই।
তোমার কাজ না থাকলেও আমার আছে। আমি এখন গভীর মনোেযোগ দিয়ে বই পড়ছি। তবে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি হলে অবশ্যই তোমাকে আসতে বলতাম। আচ্ছা শোন, ঝুমঝুম করে বৃষ্টি শুরু হলে তুমি চলে এসো। আসার সময় আমার জন্যে দুটা জিনিস নিয়ে আসবে। একটা হচ্ছে লটকন।
অবশ্যই লটকন নিয়ে আসব। আরেকটা কী?
সিডির দোকানে যাবে। একটা গানের সিডি কিনে আনবে নাম উড়ালপঙ্খি।
সিংগারের নাম বলে দাও।
কী আশ্চর্যর কথা, সিংগারের নাম তুমি জানো না?
না। তোমার গাওয়া না-কি?
হ্যাঁ।
কবে বের হয়েছে?
গত মাসে।
কই আমাকে তো কিছু বললা নি!
এটা কি ঢাক পিটিয়ে বলার মতো কোনো ঘটনা? এমন তো না এটা আমার জীবনের প্রথম সিডি। কাসুন্দি আনতে পারবে? কাসুন্দি দিয়ে লটকন মাখিয়ে ভর্তা বানিয়ে খাব। এখন সব বড় বড় গ্রোসারি সপে পাওয়া যায়।
পাওয়া গেলে নিয়ে আসব।
ঝুম বৃষ্টি নামলে তবেই আসবে। খটখটে শুকনা সময়ে যদি আস তাহলে আমি কিন্তু উপর থেকে নিচেই নামব না। আমি টেলিফোন রেখে দিচ্ছি। আমার গায়ের উপর সিগারেটের ছাই পড়ে গেছে। সিগারেট খাবার সবচে বিরক্তিকর অংশ হলো ছাই ঝাড়া। সাইনটিস্টরা এত কিছু আবিষ্কার করছে ছাইবিহীন সিগারেট আবিষ্কার করতে পারছে না কেন?
খট করে শব্দ হলো। নোরা তার অভ্যাসমতো হঠাৎ টেলিফোন রেখে দিয়েছে। মুহিব এখনো রিসিভার কানে ধরে আছে। ক্লান্তিকর টু টু শব্দ। মুহিবের মনে হলো সে অনন্তকাল ধরে টেলিফোন রিসিভার কানে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কান থেকে রিসিভার নামাতে ইচ্ছা করছে না। এখন সে যদি নোরাকে আবারো টেলিফোন করে, নোরা আগের মতোই বলবে— আপনি কে বলছেন জানতে পারি কি? মুহিব যদি তার পরিচয় দেয় তাহলে সে আবারো উৎসাহের সঙ্গে কথা বলা শুরু করবে। তারপর এক সময় আচমকা বলবে— রাখি কেমন? বলেই খট করে টেলিফোন রেখে দেবে।
নোরাকে আরেকবার টেলিফোন করতে ইচ্ছা করছে কিন্তু হাতে সময় নেই। ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে। ছয়-সাতজন গম্ভীর এবং বিরক্ত মুখের মানুষের সামনে হাসি হাসি মুখ করে বসতে হবে। বিরক্ত মানুষরা সবাই ভাব করবে তারা সাধারণ কেউ না, তারা অতীশ দীপঙ্কর টাইপ মহাজ্ঞানী। এদের মধ্যে একজন থাকবে চার্লি চ্যাপলিন ধাচের। রসিকতা করার চেষ্টা করবে, ফাজলামি করার চেষ্টা করবে। কথা বলবে গ্রাম্য ভাষায়। তার ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ খাটি ব্রিটিশ একসেন্টে ইংরেজিতে কথা বলবে। বুঝানোর জন্যে যে আমি একটু আগে গ্রাম্য ভাষায় কথা বলছি এটা আমার পরিচয় না। গ্রাম-প্রীতির কারণে কাজটা করেছি। একজন থাকবে, যে-কোনো প্রশ্ন করবে না তার কাজ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। ভাব এরকম যে, আমার প্রশ্ন করার দরকার নেই। মুখের দিকে তাকিয়েই আমি সবকিছু বুঝে ফেলতে পারি। একজন থাকবে বিজ্ঞান-মনস্ক টাইপ। বিজ্ঞানের জটিল সব প্রশ্ন করবে, যার উত্তর দেয়া সম্ভব না। উত্তর না পেয়ে সেই গাধা মাথা নাড়তে নাড়তে মধুর ভঙ্গিতে হাসবে। হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দেবে— এখনকার ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞানের কিছুই জানে না। এতে সে অত্যন্ত ব্যথিত।
মুহিব তার চার বছরের বেকার জীবনে অনেক ইন্টারভিউ দিয়েছে। প্রতিটা ইন্টারভিউর একই চেহারা। দ্যা এরনসে সে চার মাস আগে একবার ইন্টারভিউ দিয়েছে। তার দ্বিতীয়বার ডাক পড়েছে। দ্বিতীয়বার ডাকের অর্থ কি এই যে চাকরি হবে? মুহিবের তা মনে হয় না। তার ধারণা এই কোম্পানির কোনো কাজ-কর্ম নেই। কোম্পানির ডিরেক্টররা চার পাঁচবার করে ইন্টারভিউ নিয়ে কাজ দেখাচ্ছেন। প্রথমবারের ইন্টারভিউ মোটেই ভালো হয় নি। সে কোনো প্রশ্নের জবাব পারে নি। এক ভদ্রলোক হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন— মর্মাহত শব্দটার মানে কী? বাংলায় কথা বলার সময় আমরা প্রায়ই বলি— এই ঘটনায় আমি মর্মাহত। অর্থাৎ সে মর্মে আহত; মর্ম জিনিসটা কী?
মুহিব শুকনা গলায় বলেছিল, জানি না স্যার।
মর্ম কী তুমি জানো না?
জি-না স্যার।
তোমার কোনো অনুমান আছে? তোমার কী মনে হয়— মর্ম কী?
আমার ধারণা মর্ম হলো মন।
মন মানে কী?
মুহিব অস্বস্তির সঙ্গে বলল, মন হলো চেতনা। ইন্টারভিউ বোর্ডের সবাই হো হো করে হাসতে শুরু করল। তাদের ভাব এরকম যেন জীবনে এত হাসির কথা কেউ শুনে নি। তখন চার্লি চ্যাপলিন বাবাজি গম্ভীর গলায় বললেন, আপনার নাম মুহিব। মুহিব নামের অর্থ কী?
মুহিব বলল, মুহিব নামের অর্থ প্রেমিক।