আপনার পোস্টটা যে কী তা আমি নিজেও ঠিক জানি না। আমাদের অফিসের শাখা চিটাগাং-এ আছে, খুলনায় আছে। আমি উড়াউড়া যা শুনেছি তাতে মনে হচ্ছে আপনাকে খুলনা অফিসে দিয়ে দেয়া হবে। ঢাকা ছেড়ে বাইরে যেতে অসুবিধা নেই তো?
জি-না।
বড় সাহেব এখনো অফিসে আসেন নি। তিনি সাধারণত লাঞ্চ করে আসেন। বড় সাহেব এলে তার সঙ্গে দেখা করবেন। আপনার পোস্ট কী, দায়িত্ব কী তিনি বুঝিয়ে বলবেন। আমি এখন বিদায় নিচ্ছি। লাঞ্চের সময় আপনাকে ডেকে নিয়ে যাব। ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
আপনাকে টেনসড মনে হচ্ছে। টেনসড হবার মতো কোনো ঘটনা ঘটে নি। রিলাক্স করুন। ইন্টারকমে নাম্বার থার্টি টুতে ক্যান্টিন পাবেন। চা-কফি কিছু খেতে চাইলে ওদের বললেই হবে।
জি আচ্ছা।
আপনাকে যে পিওন দেয়া হয়েছে সে পুরনো লোক। অফিস সম্পর্কে যেকোনো তথ্য আপনি তার কাছে পাবেন। হ্যাভ ফান।
মুহিব কোনো ফান পাচ্ছে না। তার হাঁসফাঁস লাগছে। গলায় টাই এঁটে বসেছে। কোনো কারণে কি গলা ফুলে গেছে? সকালে টাইটা ফাঁসের মতো লাগে নি। এখন লাগছে। এসি মনে হয় অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় দেয়া আছে। শীতে শরীর জমে যাচ্ছে। বেল টিপে বেয়ারাকে ডেকে এসি কমাতে বলবে? বেয়ারা নিয়ে একটা বড় সমস্যা হয়েছে। বেয়ারার নাম শামসুদ্দিন। তার বাবার নামে নাম। মুহিব নিশ্চয়ই বলতে পারে না— থুকু শামসুদ্দিন নামের কোনো বেয়ারা থাকলে আমি খেলব না। আমাকে অন্য নামের বেয়ারা দিতে হবে।
মুহিব বেল টিপল। কিছুক্ষণ কথা বলা যাক শামসুদ্দিনের সঙ্গে।
স্যার, ডেকেছেন?
জবাব না দিয়ে মুহিব তাকিয়ে আছে। লোকটার নামই যে তার বাবার মতো তা না। চেহারার মধ্যেও খানিকটা মিল। লম্বা ফর্সা। দাঁড়িয়েও আছে খানিকটা কুঁজো হয়ে।
ঠাণ্ডা পানি খাওয়াতে পারবে?
অবশ্যই পারব স্যার।
এসিটা একটু কমিয়ে দাও, ঘর বেশি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। আর শোন, তোমার ডাক নাম কী?
স্যার আমার একটাই নাম। শামসুদ্দিন।
সমস্যা কী হয়েছে জানো? আমার বাবার নাম শামসুদ্দিন। কাজেই শামসুদ্দিন শামসুদ্দিন বলে তোমাকে ডাকা আমার জন্যে কঠিন হয়ে পড়বে।
স্যার, আমাকে দুলাল ডাকবেন?
দুলাল কি তোমার ডাক নাম?
জি-না। আমার ডাক নাম শামছু।
তাহলে দুলাল ডাকব কেন? দুলাল কে? আচ্ছা থাক, কে জানার দরকার নেই। তোমাকে আমি দুলাল ডাকব না। আমি চেষ্টা করব নাম না ডেকে পার করা যায় কি-না।
শামসুদ্দিন এসির ঠাণ্ডা কমিয়ে দিল। জগভর্তি ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এলো।
স্যার, আর কিছু লাগবে?
না, আর কিছু লাগবে না।
খবরের কাগজ এনে দেব স্যার পড়বেন?
আমি খবরের কাগজ পড়ি না।
মুহিব টেলিফোন সেটটা কাছে টানল।
একটা টেলিফোন নাম্বারই সে জানে। নোরার নাম্বার। চাকরিতে জয়েন করার ব্যাপারটা নোরাকে জানানো দরকার।
হ্যালো নোরা?
নোরা যথানিয়মে বলল, আপনি কে বলছেন জানতে পারি কি?
মুহিব।
নোরা ঝলমলে গলায় বলল, ও আচ্ছা তুমি। খুব ভালো সময়ে টেলিফোন করেছ। আমি মনে মনে তোমাকে খুঁজছিলাম।
মুহিব বলল, কেন বলো তো?
নোরা বলল, কোনো কারণ নেই, এমনি। হোমোসেপিয়ানসরা প্রাণী হিসেবে খুবই লজিক্যাল, তারপরেও তারা বেশিরভাগ কাজ করে কোনো কারণ ছাড়া।
তোমাকে একটা ভালো খবর দেয়ার জন্যে টেলিফোন করেছি।
খবরটা দিও না। আমাকে আন্দাজ করতে দাও। তুমি চাকরি পেয়েছ? হয়েছে?
হ্যাঁ হয়েছে। দশে দশ পেয়েছ। আজ আমি চাকরিতে জয়েন করেছি।
একসেলেন্ট! কনগ্রাচুলেশনস। এক কাজ কর, আজ সন্ধ্যার পর বাসায় চলে এসো। কী চাকরি কী ব্যাপার শুনব।
আচ্ছা।
হিপনোসিসের ব্যাপারটাও তোমার উপর চেষ্টা করে দেখব। আমি নিশ্চিত যে হবে।
হলে তো ভালোই।
মুহিব শোন, আমি তোমার বন্ধু হারুনকে দেখতে গিয়েছিলাম। যে আগুনে পুড়ে মরে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
কী দেখলে?
আমি আমার জীবনে এমন হাস্যকর ঘটনা দেখি নি। হারুন নামের মানুষটা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বসে আছে। উৎসব উৎসব ভাব। দলের একজন লিডার আছে, তার নাম সফিক। সে এসে আমাকে বলল, ম্যাডাম, আমরা একটা গণসঙ্গীতের আয়োজন করেছি। সেখানে আপনি যদি আপনার উড়ালপখি গানটা গেয়ে দেন খুব ভালো হয়।
তোমার কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে?
অবশ্যই হাস্যকর। সত্যি করে বলো তো, তোমার বন্ধু কি আসলেই গায়ে আগুন দেবে?
মুহিব জবাব দিল না। নোরা বলল, তোমার বন্ধুকে মাথা থেকে উদ্ভট চিন্তা দূর করতে বলো। সে চাইলে সিলেটের চা-বাগানে আমি তার জন্যে চাকরির ব্যবস্থা করতে পারি।
মুহিব আগ্রহের সঙ্গে বলল, চা-বাগানে তোমার চেনাজানা আছে?
নোরা বলল, আমাদের একটা ছোটখাট চা-বাগান আছে।
বলো কী?
তোমার বন্ধুকে আমার প্রপোজাল দিয়ে দেখ।
মনে হয় না সে রাজি হবে। কারণ সে তো তার নিজের চাকরির জন্যে আত্মাহুতি দিচ্ছে না। সে কাজটা করছে For a cause.
তোমার ধারণা সে টিভি ক্যামেরার সামনে গায়ে আগুন দেবে? লাইভ টেলিকাস্ট হবে?
মুহিব জবাব দিল না। নোরা বলল, কথার জবাব দিচ্ছ না কেন?
ভাবছি।
কী ভাবছ?
সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবছি। আমার মনে হঠাৎ একটা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। নোরা শোন, আমি এই যে চাকরিটা পেয়েছি তার পেছনে তোমার কি কোনো হাত আছে?
নোরা শান্ত গলায় বলল, এই প্রশ্ন আসছে কেন? এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পেছনে কারণ কী?
কোনো কারণ নেই। তুমি তো বলেছ হোমোসেপিয়ানসরা বেশির ভাগ কাজই করে কোনো কারণ ছাড়া। আচ্ছা নোরা, দ্য এরনস কোম্পানিটা কি তোমাদের?