সামান্য পরিচয়ই খাবলা-খাবলি করে বড় করতে হবে। কখন কী কাজে লাগে কিছুই বলা যায় না। ও ভালো কথা! তোকে বলতে ভুলে গেছি আমার মামার বাড়ির ত্রিসীমানায় যাবি না। ঐ এলাকা আমাদের গ্রুপ মেম্বার সবার জন্যেই আউট অব বাউন্ড। তোর জন্যে বিশেষ করে আউট অব বাউন্ড।
মুহিব অবাক হয়ে বলল, কেন?
সফিক বিরক্ত হয়ে বলল, সবাই মিলে নির্দোষ একটা মানুষকে সিঁড়ি দিয়ে নেংটো করে দৌড় দেয়াবি আর তার কনসিকোয়েন্স চিন্তা করবি না?
ঘটনা কী হয়েছে বলেন। থানায় কেইস করেছে?
কেইস করলে তো কোনো ব্যাপার ছিল না। কেইস টেইস কিছু না। আরজু সাহেবের ব্রেইন ঐ ঘটনার পর থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে গেছে। কাউকে চিনতে টিনতে পারেন না। ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকেন। আরজু সাহেবের এক মেয়ে আছে। যতদূর জানি যুথী নাম। ঐ মেয়ে তোকে পাগলের মতো খুঁজছে।
আমাকে খুঁজছে কেন?
তোকেই তো খুঁজবে। তুই আরজু সাহেবকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে এলি। নিজের নামও বলে এসেছিস। এই সব ক্ষেত্রে সবসময় ফলস্ নাম দিতে হয়। যাই হোক, এত দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। সামান্য কাপড় খুলতেই যে পাগল হয়ে গেছে তার মধ্যে পাগলামি আগে থেকেই ছিল। দুদিন পর আপনাআপনি পাগল হতো। এখন দোষ পড়েছে আমাদের ঘাড়ে। দাঁড়িয়ে থেকে সময় নষ্ট করিস না। ক্যামেরা আনার ব্যবস্থা কর।
বাড়ির ভেতরের দিকের উঠোনে ক এবং খ পা ঝুলিয়ে বসে আছে। দুজনের মুখই অসম্ভব গম্ভীর। মুহিবকে ঢুকতে দেখে দুজনই একসঙ্গে মুখ তুলে তাকাল এবং মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে হাসতে লাগল। লক্ষণ মোটেই ভালো না। এই দুবোন যখন একসঙ্গে কারো দিকে তাকিয়ে হাসে তখন বুঝতে হবে তার কোনো খারাপ খবর আছে। মুহিব বলল, তোদের খবর কী রে?
দুজন একসঙ্গে বলল, ভা-আ-আ-আ-লো।
বিকেলের মার খেয়েছিস?
দুজন একসঙ্গে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। তাদের মুখের হাসি মুছে গেল না।
বাড়ির পরিস্থিতি অস্বাভাবিক এটা মুহিব বুঝতে পারছে। মুহিবের মন বলছে পঞ্চাশ হাজার টাকার ঘটনা কোনো একটা ক্লাইমেক্সে পৌঁছেছে। মুহিব বলল, মা কই জানিস?
ক বলল, চলে গেছে।
খ মাথা দুলিয়ে হেসেই যাচ্ছে। উঠানের শেষ প্রান্তে নতুন কাজের মেয়েটা আনারস কাটছে। আসরের নামাজের পর বড়চাচা সিজনাল ফুটস খান। আমের সময় আম। আনারসের সময় আনারস। কাজের মেয়েটা আনারস কাটা বন্ধ করে এক দৃষ্টিতে মুহিবের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিবের চোখে চোখ পড়তেই সে অতি দ্রুত চোখ নামিয়ে নিল। আনারস কাটায় অতিরিক্ত মনোযোগী হয়ে গেল। ক খ এর হাসি এবং কাজের মেয়েটির কর্মকাণ্ড পরিষ্কার বুঝিয়ে দিচ্ছে বাড়িতে পঞ্চাশ হাজার টাকার ঘটনা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে চলে গেছে। শুধু মার বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার ব্যাপারটা বোঝা যাচ্ছে না। বাড়িতে ইন্টারেস্টিং কোনো ঘটনা ঘটবে আর তিনি থাকবেন না। তা হয় না। মুহিব কাজের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, এই মেয়ে তুমি আমাকে কড়া করে এক কাপ চা খাওয়াতে পারবে? কাজের মেয়েটা ভোতা মুখ করে বলল, আমার হাত বন্ধ।
মুহিব নিজের ঘরে ঢুকে গেল। তার সারা শরীর কুটকুট করছে। শরীর থেকে বাসের কন্ডাকটরদের গায়ের গন্ধের মতো গন্ধ বের হচ্ছে। সারাদিন ঘোরাঘুরির উপর দিয়ে গিয়েছে। গায়ে ঘামের আস্তর পড়ে গেছে। সাবান ডলে। ডলে ঘামের আস্তর একের পর এক সরাতে হবে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় যাবার আগে গরম এক কাপ চা খেয়ে নিলে হতো। সেটা সম্ভব হচ্ছে না। মুহিব গায়ের ঘামে ভেজা শার্ট খুলতে গিয়েও খুলল না। বাথরুমে সাবান নেই এটা মনে ছিল না। সাবান কিনে আনতে হবে। সাবান কিনে ফেরার সময় খায়রুলের দোকান থেকে ইসপিশাল নতুন পাত্তির চা খেয়ে আসা যায়।
মুহিব কখন ফিরেছ?
মুহিবের বড়ভাবি দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকলেন। মুহিব বলল, তিন মিনিট এখনো পার হয় নি।
আজ দুপুরবেলা তোমার খোঁজে একটা মেয়ে এসেছিল। হাউমাউ করে কান্না।
মেয়েটা কে?
আমরা তো কেউ চিনি না। নাম বলল যূথী।
একদিন দেখা হয়েছিল।
ঘটনাটা কী? একদিন যার সঙ্গে দেখা সে এ রকম কাঁদবে কেন?
তোমরা জিজ্ঞেস কর নি কেন কাদছে?
আমি অনেকবারই জিজ্ঞেস করেছি। কিছুই বলে না, শুধু কাদে। একটা টেলিফোন নাম্বার দিয়ে গেছে। শুধু বলে গেছে তুমি যখনই আস, যত রাতেই আস এই টেলিফোন নাম্বারে টেলিফোন করার জন্যে। দেব টেলিফোন নাম্বার?
দাও।
তোমাকে ভূতের মতো লাগছে কেন? কোথায় ছিলে?
ঘোরাঘুরির মধ্যে ছিলাম। ভাবি এক কাপ চা খাওয়াতে পারবে?
কেন পারব না। চা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
তোমার কাছে ফ্রেশ গায়েমাখা সাবান আছে?
থাকার তো কথা। আমি চা এবং সাবান পাঠিয়ে দিচ্ছি।
ভাবি থ্যাংক য়্যু। আমি আমার জীবনের দীর্ঘতম গোসলটা আজ সারব। The longest bath.
গোসল সেরে বড়চাচার সঙ্গে দেখা করো। উনি তোমাকে খুঁজছিলেন।
কোনো বিশেষ ঘটনা?
জানি না তো!
মুহিব বড়চাচার সামনে বসে আছে। তিনি খবরের কাগজ পড়ছিলেন। হাতের ইশারায় মুহিবকে বসে থাকতে বলেছেন। সে বসেই আছে। আজকালকার খবরের কাগজে এত মন দিয়ে পড়ার কিছু থাকে না। তোফিকুর রহমান সাহেবের অনেক বিরক্তিকর অভ্যাসের মধ্যে এটি একটি কথা বলার জন্যে ডেকে পাঠিয়ে সামনে বসিয়ে রাখবেন, অন্য কোনো অর্থহীন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। সেই কাজ দীর্ঘ হতেই থাকবে। কিছুতেই আর শেষ হবে না।
মুহিব।