প্রস্তাব সবার পছন্দ হলো। শুধু মহসিন বলল, আজমীর মামা যদি থানা পুলিশ করেন, তখন কী হবে? পুলিশ তো আমাদের খোঁজ করবে।
সফিক বলল, খোঁজ করলে করবে। আমরা তো কাউকে খুন করি নি। আমাদের সমস্যা কী! দুএকদিন যদি থানাতে থাকতে হয় থাকলাম।
রেজা বলল, রক্ত এনে কখন ফেলা হবে?
সাবের বলল, এখন ফেলা হবে। কাল ভোরে তো আমরা চলে যাচ্ছি। আজমীর মামার বাসায় আর আসব না।
রেজা বলল, রক্ত কে আনবে?
হারুন বলল, আমি আনব। আমাদের বাসার কাছে সাত মসজিদ রোডে কসাই আছে। আমার পরিচিত। দুলা ভাইয়ের কুকুরের জন্যে তার কাছ থেকে প্রায়ই মাংসের ছোবড়া কিনি। মাঝে মাঝে রক্ত কেনা হয়।
সফিক বলল, তাহলে দেরি করছিস কেন, চলে যা। পরে দেখা যাবে কসাই চলে গেছে।
কসাই চলে গেলে নিউমার্কেট থেকে নিয়ে আসব। রক্ত নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। দেখি আমাকে ভর্তি করে এক গ্লাস হাবিজাবি দাও। গাজা থাকলে ভালো হতো। আমার কাছে খুবই একসাইটিং লাগছে। এর মধ্যে গাজার বাতাস পড়লে…।
সফিক বলল, একজন কেউ গাঁজা নিয়ে আস। আজ একটা বিশেষ দিন। আমাদের মধ্যে একজন চাকরি পেয়েছে। একজন মেম্বার আমরা হারাতে যাচ্ছি। সেই উপলক্ষে একই সঙ্গে আনন্দ এবং নিরানন্দ পার্টি। গাঁজা ছাড়া এই পার্টি হবে কীভাবে?
হারুন বিস্মিত গলায় বলল, চাকরি কে পেয়েছে?
সফিক বলল, চাকরি কে পেয়েছে সেটা তো আমি আজ বলব না।
হারুন বলল, তুই না তো?
সফিক বলল, আমি না।
আল্লাহর কসম বল।
আল্লাহর কসম বলতে পারব না। তবে আমি না।
হারুন বলল, তোর ভাব-ভঙ্গি, কথাবার্তার ধরন-ধারণ সবই অন্যরকম লাগছে। আমার তো ধারণা তুই চাকরি পেয়েছিস।
সফিক বলল, আমি চাকরি পেয়েছি এটা বলব না, আবার চাকরি পাই নি এটাও বলব না। এই বিষয়ে আজ কোনো ডিক্লারেশন দেয়া হবে না। কথা বলে সবাই সময় নষ্ট করছে কেন— এই ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না। রক্ত কই? গাজা কই?
রাত এগারোটার ভেতর গরুর রক্ত দিয়ে ঘর মাখামাখি করে ফেলা হলো। রক্তের মধ্যে একটা মাছ কাটা বটি ড়ুবিয়ে রাখা হলো। ভয়াবহ অবস্থা। মহসিন মিনমিনে গলায় বলল, সর্বনাশ! দেখে তো আমার নিজেরই ভয় লাগছে। শরীর ঝিমঝিম করছে।
হারুন বলল, বোতল ভেঙে দেয়ার দরকার নেই। এমনিতেই যথেষ্ট হয়েছে। জিনিসপত্র বেশি থাকলে Fake মনে হতে পারে। কোনো কিছুই ওভার ড়ু করতে নেই।
ইয়াকুব বলল, একটা ছবি তুলে রাখা দরকার ছিল। জিনিসটা যে এত ইন্টারেস্টিং হবে আগে বুঝতে পরি নি। আগে বুঝতে পারলে বাসা থেকে ক্যামেরা নিয়ে আসতাম। আজমীর মামার খবর আছে। মামার বিচি শুধু যে কপালে উঠে থেমে থাকবে তা না, মাথা ফুড়ে বের হয়ে যাবে।
নীরব ঘাতক সাবের বলল, আমরা শুধু আজমীর মামাকে শাস্তি দেয়ার কথা ভাবছি। আসল যে লোককে শাস্তি দেয়া উচিত তার কথা ভাবছি না। মূল অপরাধী শাস্তি পাচ্ছে না।
সফিক বলল, কার কথা বলছিস?
আরজু সাহেবের কথা বলছি। উনার কারণেই তো এই অবস্থা। আজ আমরা আশ্রয়হারা। গৃহহারা। আজ আমরা পথহারা পাখি।
সফিক বলল, কথা সত্যি। উনাকে কী শাস্তি দেয়া যায়?
সাবের বলল, উনাকে ডেকে নিয়ে এসে এই ঘর দেখিয়ে দেই। তাতেই উনার খবর হয়ে যাবে। তারপর উনাকে বলি— ডিয়ার স্যার, আপনি খবর দিয়েছেন আমরা সবাই না-কি নেংটো হয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করেছি। কাজটা তো স্যার ঠিক করেন নি। আমরা সামান্য রাগ করেছি। এখন আপনি যদি স্যার দয়া করে একবার শুধু নেংটো হয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করেন তাহলে আমাদের রাগটা কমে। আমরা আবার রেগে গেলে ভয়ঙ্কর হয়ে যাই।
সাবেরের কথা শেষ হবার পর দলের সবাই কিছুক্ষণের জন্যে নীরব হয়ে গেল। নীরবতা ভঙ্গ করে ইয়াকুব বলল, অসাধারণ আইডিয়া! একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আইডিয়া! আমার হাতে নোবেল পুরস্কার থাকলে আইডিয়ার জন্যে সাবেরকে নোবেল পুরস্কার দিয়ে দিতাম।
হারুন বলল, আরজু সাহেবকে এখানে কে ডেকে আনবে? ঘণ্টা কে বাঁধবে?
সফিক বলল, এটা কোনো ব্যাপার না। মুহিব যাবে। মুহিবের রাজপুত্রের মতো চেহারা। সে যা বলে সবাই তা বিশ্বাস করে। মুহিব উনাকে বলবে যে, আমরা তার হাতে বাড়ির চাবিটা দিতে চাই। চাবি দেয়ার আগে ঘরগুলি খুলে উনাকে দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাই যে সব ঠিক আছে। কী-রে মুহিব, তুই গুছিয়ে সুন্দর করে বলতে পারবি না?
মুহিব বলল, পারব।
সফিক বলল, মুহিবকে পাঠানোর সবচে বড় সুবিধা হলো, ওর মুখে কোনো হাবিজাবির গন্ধ নেই। আমি নিজেই যেতাম কিন্তু আমার মুখ থেকে ভকভক করে হাবিজাবির গন্ধ বের হচ্ছে।
মুহিব বলল, কোনো অসুবিধা নেই। আমি যাচ্ছি।
ইয়াকুব বলল, ঘুমিয়ে পড়লে ঘুম থেকে ডেকে তুলবি।
কলিংবেল বাজতেই আঠারো-উনিশ বছরের কিশোরী ধরনের মুখের একটা মেয়ে দরজা খুলে দিল। মুহিবকে দেখে সে খুবই হকচকিয়ে গেল। এই সময়ের মেয়ে এত সহজে হকচকিয়ে যায় না। মুহিব বলল, স্লমালিকুম। মেয়েটা এতে আরো ঘাবড়ে গেল। মুহিব বলল, আরজু সাহেব কি আছেন?
মেয়েটি ক্ষীণ গলায় বলল, বাবা শুয়ে পড়েছেন। এখনো ঘুমান নি। আমি এক্ষুণি উনাকে ডেকে নিয়ে আসছি। বলেই ছুটে বের হয়ে গেল। এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাবাকে নিয়ে উপস্থিত হলো।
মুহিব বলল, স্যার, আপনি একটু উপরে আসবেন? ফ্ল্যাট নাম্বার D4। আব্দুল গফুর সাহেবের ফ্ল্যাট।
কী ব্যাপার বলো তো? আমি কিন্তু বাবা তোমাকে চিনতে পারছি না।