শয়তান ফেরেশতা না জ্বিন— এই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। শয়তান। জ্বিন।
বাজির শর্ত অনুসারে মহসিন নেংটো হয়ে দারোয়ানের কাছে যেতে এবং ফিরে আসতে রাজি হয়েছে। হারুন দয়াপরবশ হয়ে বলেছে— যা মাফ করে দিলাম। নেংটো হওয়ার দরকার নেই। সফিক হুঙ্কার দিয়ে উঠেছে অবশ্যই দরকার আছে। তার উচিত শিক্ষা হতে হবে। না জেনে তর্ক করে। না জেনে বাজি ধরে।
হারুন বলল, এই কাজটা করলে ফ্ল্যাট বাড়িতে জানাজানি হবে। তোর মামার কানে যাবে। তোরই অসুবিধা।
হোক অসুবিধা। আমি কি মামাকে কেয়ার করি? Who is মামা?
সাবের চাদর গায়ে দিয়ে কোলবালিস বগলে নিয়ে শুয়েছিল। তার চোখ বন্ধ। এই দলে তার নাম নীরব ঘাতক। সে কখনোই কোনো কথা বলে না। হঠাৎ হঠাৎ দুএকটা এমন কথা বলে যে পুরো দলের মুড বদলে যায়। সাবের চোখ না মেলেই বলল, Who is মে মে। মে মে।
বারুদে আগুন পড়ার মতো হলো। সবাই বলা শুরু করল— মে মে। মে মে। তারা কিছুক্ষণ মে মে করে, তারপর হো হো করে হাসে। আবারো মে মে করে আবারো হাসে। রাত দুটার দিকে তাদের হাসি বন্ধ হলো। মহসিনকে পাঠানো হলো বাজির শর্তপূরণের জন্যে। মহসিন নির্বিকার ভঙ্গিতেই কাপড় খুলে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নিচে গেল।
রাত আটটা। সফিক বসার ঘরের মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে আছে। আজ সারাটা দিন তার ঘুমে ঘুমে কেটেছে। মাঝে কয়েকবার ঘুম ভেঙেছে, তাও অল্প সময়ের জন্যে। একবার ঘুম ভাঙল সকাল এগারোটার সময়। সে রেস্টুরেন্ট থেকে হাফ প্লেট তেহারি খেয়ে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। সেই ঘুম ভাঙল বিকাল তিনটায়। রেস্টুরেন্টে গেল। পরোটা আর গোশত খেয়ে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত ঘুমাল। ঘুম ভাঙল টেলিফোনের শব্দে। দিল্লি থেকে সফিকের মামা টেলিফোন। করেছেন। তাঁর গলা থমথম করছে। সফিক মামার থমথমে গলা অগ্রাহ্য করে আনন্দিত স্বরে বলল, কেমন আছ মামা? বেড়ানো কেমন হচ্ছে? তাজমহল দেখেছ?
সফিকের মামা বললেন, বাসায় তুই ছাড়া আর কে কে আছে?
জুতিয়ে তোর আমি পিঠের খাল তুলে ফেলব।
সফিক বিস্মিত হবার ভঙ্গি করে বলল, এইসব তুমি কী বলছ মামা! ঘটনা কী?
চুপ শুয়োর। বদমায়েশের বদমায়েশ।
মামা, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। কেউ কি তোমার কাছে কিছু লাগিয়েছে?
শাটআপ হারামি।
কী আশ্চর্য, বলবে তো কী হয়েছে?
আমি খবরাখবর নেয়ার জন্যে আরজু সাহেবের বাসায় টেলিফোন করেছি…
কী বলেছেন আরজু সাহেব… উল্টা পাল্টা কিছু বলেছেন? মাই গড! মানুষকে বিশ্বাস করা মুশকিল। উনার সঙ্গে একবার আমার দেখা হয়েছিল সিঁড়িতে। আমার তো মনে হলো খুবই ভদ্র মানুষ।
তুই অস্বীকার করতে চাস বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আমার বাড়িতে মচ্ছব বসাস নি? হৈচৈ-চেঁচামেচি-ড্রাগ খাওয়া খাওয়ি করিস নি? সবাই মিলে নেংটো হয়ে সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করিস নি?
সফিক মধুর স্বরে বলল, মামা, তুমি রাগের মাথায় কী বলছ নিজেই বুঝতে পারছ না। তোমার রাগ কমানোর জন্যে স্বীকার করলাম তুমি যা বলছ সবই সত্যি। তারপরেও আমার একটা কথা শুনবে। প্লিজ মামা, প্লিজ।
তোর আর কী কথা থাকতে পারে?
মামা শোন, আমার বন্ধু-বান্ধব সবাই ন্দ্র ঘরের ছেলে। শিক্ষিত ছেলে। এমন একজনও নেই যে এম.এ পাস করে নি। আমাদের সমস্যা একটাই— আমরা কোনো চাকরি পাচ্ছি না। আমরা খুবই মন খারাপ করে থাকি। মাঝে মধ্যে এক সঙ্গে হই, চাকরির কোনো লাইন পাওয়া যায় কিনা— এই নিয়ে আলাপআলোচনা করি। আমাদের বয়েসি যুবকদের সবাই সন্দেহের চোখে দেখে বলেই কয়েকজন একত্র হলেই মনে করে কিছু করছি, ড্রাগ নিচ্ছি বা মদ খাচ্ছি।
চুপ। চুপ। মিথ্যুক কোথাকার।
ঠিক আছে মামা, তর্কের খাতিরে স্বীকার করলাম আমরা খারাপ। খুবই খারাপ। তোমার বাসায় বসে মদ-ফদ খাচ্ছিলাম। এখন তুমি বলো মামা, আমরা যত খারাপই হই আমাদের পক্ষে কি সম্ভব নেংটো হয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা করা? এটা কি কোনো লজিকে পড়ে?
আরজু সাহেব মিথ্যা কথা বলছেন?
এই কথাটা উনি কেন বলছেন মামা আমি সত্যি জানি না। তবে আমি উনাকে জিজ্ঞেস করব। তুমি টেলিফোন রেখে দিলেই আমি তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করব।
তোকে কিছু জিজ্ঞেস করতে হবে না। তুই এক্ষুণি আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যা। এক্ষুণি! এই মুহূর্তে।
এখন চলে যাব?
হ্যাঁ এখন যাবি। আমি টেলিফোন রাখব আর তুই বাসায় তালা লাগিয়ে বের fa
মামা, চাবিটা কি আরজু সাহেবকে দিয়ে যাব?
হ্যাঁ দিয়ে যা। আমি ঢাকায় এসে তোর বদমায়েশি বের করছি।
উল্টোটাও হতে পারে মামা। দেখা যাবে তুমি লজ্জিত হয়ে আমার কাছে গেলে বললে, ভুল হয়েছে কিছু মনে করিস না। রাগের মাথায় তোকে অনেক আজেবাজে গালি দিয়েছি।
শাটআপ। এক্ষুণি যা— আরজু সাহেবকে চাবি দিয়ে আয়।
যাচ্ছি। মামা তুমি ভালো থেকো। মামিকে আমার সালাম দিও। কুতুব মিনার দেখে আসতে ভুল করো না। অনেকেই তাজমহল দেখে চলে আসে, কুতুব মিনার দেখে না।
সফিকের কথা শেষ হবার আগেই তার মামা টেলিফোন রেখে দিলেন। সফিক মুখ ভেঁতা করে বসে রইল। এই মুহূর্তে একটা সিগারেট দরকার। তার সঙ্গে সিগারেট নেই। দোকানে গিয়ে সিগারেট কিনতে ইচ্ছা হচ্ছে না। বন্ধুবান্ধবদের আসার সময় হয়ে গেছে। যে কেউ একজন এলেই সিগারেটের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। শুধু সাবের এবং মহসিন হলে সমস্যার সমাধান হবে না। এই দুই জন সিগারেট খায় না। মুহিব এলেও হবে না। মুহিব সিগারেট খায় না। মুহিব হাবিজাবি কিছুই খায় না। গল্প-উপন্যাসের ভালো ছেলে। এদের চেহারা হয় রাজপুত্রের মতো। এদের চরিত্রে কোনো ত্রুটি থাকে না। অত্যন্ত রূপবতী মেয়ের সঙ্গে এদের প্রণয় হয়। এরা পরীক্ষায় ফাস্ট-সেকেন্ড হয়। এদের চাকরি পেতেও কোনো সমস্যা হয় না। ফর্মুলাতে মুহিব খুব ভালো মতোই পড়ে, শুধু একটা জায়গায় ফর্মুলা মিলছে না। অনেক ঘোরাঘুরি করেও বেচারা চাকরি পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে তাকে সোনা-রুপার পানি দিয়ে থোয়াতে হবে। সোনারুপার পানি দিয়ে ধোয়ালে দোষ কাটা যায়।