আমি যদি ঐ দিন তোমাকে আনতে যেতাম তাহলে আমিও মারা পড়তাম। তুমিও মারা পড়তে।
মারা পড়লে পড়তাম। মরার আগে জেনে যেতাম আপনি খুব সাহসী একজন মানুষ। আপনার সম্পর্কে আমার একটা ভালো ধারণা হত।
এখন কি আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা?
হ্যাঁ।
আচ্ছা ঠিক আছে খারাপ ধারণা থাকলে খারাপ ধারণা, এখন ধাঁধার জবাব দাও—why nine is afraid of seven?
জানি না।
Because Seven eight nine.
তার মানে?
তার মানে eight বানানটা ate কর। Seven ate nine. এখন বুঝতে পারছ। সাত নয়কে খেয়ে ফেলল।
Very funny তাই না?
কুসুম আপু মুখ গম্ভীর করে বলল—আপনি শুধু যে ভীতু তাই না, আপনি খানিকটা বোকাও।
বোকা কেন?
বোকারাই এই জাতীয় ধাঁধা বলে খুব মজা পায়।
ও।
কুসুম আপু প্রতিদিনই জাপানি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে কঠিন-কঠিন কিছু কথা বলেন। আগে এই সব কথায় ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের মুখ কালো হয়ে যেত। এখন হয় না। তিনি কুসুম আপুর কঠিন কথাগুলি সহজ ভাবেই নেন। বাইরের কেউ হলে তিনি কথাগুলি সহজভাবে নিতেন না। এখন তিনি ঘরের মানুষ।
তিনি নাকি ইঙ্গিতে জানিয়েছেন কুসুম আপুকে তার খুবই পছন্দ। তার প্ল্যান আরো ছবছর পর বিয়ে করা। কারণ ছবছর পর রেলের কোয়ার্টার পাবেন। তবে কথাবার্তা এখনই পাকা করে রাখা যেতে পারে। রেলের এই চাকরি তার পছন্দ না। তিনি দেশের বাইরে চলে যাবার চেষ্টা করছেন। নানান জায়গায় লেখালেখি করছেন। কোনো একটা যদি লেগে যায় তাহলে কিছুটা আগেই হবে।
কুসুম আপু তার উত্তরে কি বলেছেন তা জানা যায় নি। আমার ধারণা তিনি শরীর দুলিয়ে খুব হেসেছেন। যে হাসির দুরকম অর্থ করা যায়—প্রথম অর্থ—আমি খুব খুশি এবং দ্বিতীয় অর্থ—এইসব কী হাস্যকর কথা। আমি কোন দুঃখে আপনার মতো বোকাকে বিয়ে করব।
জাপানি ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক এখন দুবেলাই আমাদের এখানে খান। দুপুরে টিফিন কেরিয়ারে করে সাইটে তার জন্যে খাবার যায়। রাতে তিনি নিজেই খেতে আসেন। খাওয়া দাওয়ার পর বেশির ভাগ সময়ই রাতে থেকে যান।
ভাইয়া রাতে বাসায় থাকেন না, তার বন্ধু আজীজের বাসায় ঘুমুতে যান। জাপানি ইঞ্জিনিয়ার আমাকে পাশে নিয়ে ঘুমান। আমাদের দুজনের মাঝখানে তিনি একটা বালিশ দিয়ে রাখেন। গায়ের সঙ্গে গা লাগলে তার নাকি ঘুম হয় না। ভদ্রলোকের ঘুম এমনিতেও কম। প্রায়ই আমি ঘুম ভেঙ্গে দেখি ভদ্রলোক জেগে বসে আছেন। সিগারেট খাচ্ছেন। আমাকে হঠাৎ জেগে উঠতে দেখলে স্বস্থি পান। তখন বেশ আগ্রহ নিয়ে গল্প করেন। বেশির ভাগই ভুত-প্রেতের গল্প।
তোমাদের বাড়িতে কি ভূতের উপদ্রপ আছে নাকি?
নাহ্।
আমার তো মনে হয় আছে। মাথার কাছের জানালাটা হঠাৎ দেখলাম আপনা আপনি বন্ধ হল। আবার খুলেও গেল। কোনো বাতাসটাতাস কিছু ছিল না। আচ্ছা ধরলাম বাতাসে বন্ধ হয়েছে। তাহলে খুলল কীভাবে? জানালা খুলতে হলে ঘরের ভেতর থেকে বাতাস বাইরে যেতে হবে। তাই না?
জি।
ব্যাপারটা আমি আগেও লক্ষ করেছি। অন্য কোনো জানালা না, মাথার। কাছের এই জানালাটাতেই শুধু এই ঘটনাটা ঘটে। খুব পুরানো বাড়িতে জিন ভূত থাকে, আবার ধর নতুন বাড়িতেও থাকে। ধর তুমি একটা বাড়ি বানালে। বাস করার জন্য প্রথম সেই বাড়িতে উঠলে। তখন অবিশ্যিই বিচিত্র সব জিনিস দেখবে।
ও।
আমার ছোট মামা সিরাজগঞ্জে একটা বাড়ি বানিয়ে ছিলেন। ছেলে মেয়ে নিয়ে সেই বাড়িতে উঠলেন। তার পর যে কান্ড শুরু হল—সেটা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। ভয়াবহ। মামাও বাঘা তেঁতুল টাইপ। মামা বললেন—ভূতের আমি কেথা পুড়ি। দেখি ভূত কী করে। পয়সা দিয়ে বাড়ি বানিয়েছি ভূতের থাকার জন্য না। আমার থাকার জন্য। ভূতদের হাউজিং প্রবলেম—বাড়ির পেছনে দুটা শ্যাওড়া গাছ লাগিয়ে দিব। শ্যাঁওড়া গাছে প্রেমসে থাক। টগর গল্পটা শুনছ?
জি।
চোখ বন্ধ করে ফেললে যে। ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছ। একটা জিনিস খেয়াল রাখবে কেউ যখন গল্প করে তখন চোখ বন্ধ করতে নেই। এটা বিরাট বেয়াদবি। এই কাজ আর কখনো করবে না।
জি আচ্ছা।
চা খেতে ইচ্ছা করছে। কী করা যায় বলতো। টি ব্যাগ চিনি দুধ সবই আছে। শুধু গরম পানি পেলে কাজ হত।
গরম পানি কে করবে সবাই তো ঘুমাচ্ছে।
না সবাই ঘুমাচ্ছে না। কুসুম জেগে আছে। তার হাসির শব্দ শুনেছি। মনে হয় সে তার মার সঙ্গে গল্প করছে।
কুসুম আপু ঘুমের মধ্যে হাসে।
আমি যে হাসি শুনেছি সেতা ঘুমের হাসি না। ঘুমের হাসি অন্য রকম। তুমি দরজার কাছে গিয়ে তোমার আপুকে ডাক দিয়ে দেখ সে ঘুমাচ্ছে কিনা। একা যেতে ভয় করলে আমি সঙ্গে থাকব। নো প্রবলেম। যাদের চা খেয়ে অভ্যাস তাদের যদি হঠাৎ চায়ের নেশা চাপে তাহলে ভয়ংকর অবস্থা হয়। চা না খাওয়া পর্যন্ত কিছু ভালো লাগে না। কুসুম ঘুমিয়ে থাকলেও আমাকে চা খেতে হবে। রান্নাঘরে গিয়ে নিজেই চা বানাব। তাতে আমার কোনো সম্মান হানি হবে না। বুঝতে পারছ?
জি।
চল চা খাবার ব্যবস্থা করি তারপর আমি আমার ছোট মামার গল্পটা বলব। দারুণ ইন্টারেস্টিং কুসুম শুনতে চাইলে সেও শুনবে। সে ভয় টয় পাবে বলে। মনে হয় না। মেয়েটার মারাত্মক সাহস। মেয়েদের এত সাহসও অবিশ্যি ভালো না। সে যে কীভাবে ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ল এখনো মনে হলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এই ঘটনা যদি ঢাকায় গিয়ে বন্ধু বান্ধবকে বলি কেউ বিশ্বাস করবে না। এদেরও দোষ দেয়া যায় না। ঘটনা আমি নিজের চোখে দেখেছি তারপরেও আমার নিজেরই বিশ্বাস হয় না।