হারামজাদা, দূরে সরে বস। ওস্তাদ একটা ধমক দিয়ে বলল, কাঁটা রাইফেলটা ল, দেখি জিন পরীরে দূর করা যায় কী না।
কাঁটা রাইফেল নিতে গিয়ে কাচু মাস্তান বেকুব হয়ে গেল। তার স্পষ্ট মনে আছে গাড়ির ছাদে রেখেছিল, সেখানে কিছু নেই। সে মিছেই ছাদে হাত বুলায়, কোথায় কিছু নেই। ভূত নয় এবারে অন্য একটা ভয় তাকে চেপে বসে। ভাঙ্গা গলায় সে ডাকল, ওস্তাদ!
কী হল?
কাঁটা রাইফেল আর রড গায়েব।
কী বললি? ওস্তাদ বনেট থেকে লাফিয়ে নেমে আসে, কী বললি হারামজাদা?
বলছি যে অস্ত্রপাতি গায়েব।
গায়েব? ওস্তাদ কাচুর মাথায় প্রচণ্ড জোরে একটা চাটি মেরে বলল, গায়েব মানে কী?
গায়েব মানে গায়েব। কাচু ইংরেজিতে চেষ্টা করল, ভ্যানিশ
রংবাজির জায়গা পাস না? অস্ত্র গায়েব। তুই জানিস এইটা কার অস্ত্র আমরা ভারা এনেছি?
আমি কী করব ওস্তাদ, জিন পরীর সাথে আমি কী করব?
জিন পরীর আর কাজ নাই তোর অস্ত্রপাতি নিয়ে যাবে?
নিয়ে তো গেল ওস্তাদ-আপনি নিজেই দেখলেন।
খোঁজ ভালো করে ছাগলের বাচ্চা। তোর মতো গরু গাধাকে নিয়ে অপারেশনে আসাই ভুল হয়েছে।
মাস্তান দুজন যখন গাড়ির ভিতরে তাদের কাঁটা রাইফেল আর লোহার রড় খোজা খুঁজি করছে ঠিক তখন ছয়টি মেয়ে একত্র হয়েছে। এখন আর তাদের ভয় নেই, তারা ছয়জন এক সাথে, তাদের হাতে একটা কাঁটা রাইফেল, একটা লোহার রড় আর সবচেয়ে বড় কথা এত বড় মাস্তানদের বোকা বানিয়ে এখন তাদের সাহস বেড়ে গেছে একশ গুন।
ঠিক এই সময় টুং টুং করে একটা রিকশার শব্দ হল। শান্তা আপা রিক্সা করে আসছেন।
মাস্তান দুইজন সাথে সাথে তিড়িং করে লাফিয়ে উঠল। একজন আরেকজনের দিকে তাকাল তারপর সামনের দিকে তাকাল। ওস্তাদ কাচু মাস্তানের মাথায় প্রকান্তি আরেকটা চাটি লাগিয়ে চাপা গলায় বলল, অস্ত্র পরে খুঁজিস গাধা। এখন আয় অস্ত্র ছাড়াই শুরু করি।
রিক্সাটা এগিয়ে আসতেই মাস্তান দুইজন পথ বন্ধ করে দাঁড়াল, ওস্তাদ মাস্তান গলা উঁচিয়ে বলল, এই রিক্সা থাম!
রিক্সাওয়ালা বিপদের গন্ধ পেয়ে কোনোভাবে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু পারল না, মাস্তান দুইজন রিক্সা থামিয়ে ফেলল। শান্তা আপা রিক্সার হুড ফেলে জিজ্ঞেস করলেন, কী হচ্ছে? কী হচ্ছে এখানে?
ওস্তাদ মান্তান হুংকার দেয়ার চেষ্টা করে বলল, চোপ।
ততক্ষণে ছয়টি মেয়ে তাদের তিন দিকে থেকে ঘিরে ফেলেছে। নিতুর হাতে কাঁটা রাইফেল, মিতুলের হাতে লোহার রড়টা। অন্যদের হাতে প্রমাণ সাইজের চিল। তাদের পায়ের কাছে ব্যাগ, সেই ব্যাগে বোঝাই নানা সাইজের দিলে। নিতু হাতের কাঁটা রাইফেল তাক করে হুংকার দিয়ে বলল, হ্যাণ্ডস আপ।
মাস্তান দুইজন একসাথে চমকে উঠে। মাথা ঘুরিয়ে দেখতে চাইছিল তখন মিতুল হুংকার দিয়ে বলল, একটু নড়েছ তো গুলি করে খুলি ফুটো করে দেব।
রেবেকা বলল, বিশ্বাস না করলে ঘোরানোর চেষ্টা করতে পার, একেবারে খুন হয়ে যাবে কিন্তু।।
তানিয়া বলল, আগের বার তো ভয়ে পেশাব হয়ে গেছে এইবার বড় কাজটাও হয়ে যাবে।
তানিয়ার কথা শুনে সবাই হি হি করে হেসে উঠল এবং হঠাৎ করে মাস্তান দুজন মনে হয় কী হচ্ছে একটু অনুমান করতে পারে। শান্তা আপা রিক্সায় হতচকিত হয়ে বসেছিলেন, এবারে প্রায় আর্ত চিৎকার করে বললেন, কী হচ্ছে এখানে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
নিতু বলল, আপা, এরা আপনার পা ভেঙ্গে ফেলার জন্য এসেছিল।
কী বলছ তোমরা?
জি আপা। নিতু বলল, আপনার হাতে যদি জোর থাকে তাহলে কষে এই দুজন মানুষের গালে দুটি চড় লাগান। এরকম ফাজিল আর বেয়াদপ মানুষ খুব কম আছে।
শান্তা আপা রিক্সা থেকে নেমে বললেন, আমি এখনো কিছু বুঝতে পারছি না–
নিতু তখন রিক্সাওলালাকে বলল, রিক্সাওয়ালা ভাই তাহলে–
নিতু তার কথা শেষ করার আগেই রিক্সাওয়ালা ছুটে এসে ওস্তাদ মাস্তানের গালে এমন জোরে চুড় বসালো যে সে একেবারে মুখে হাত দিয়ে বাবাগো বলে মাটিতে বসে গেল। নিতু ব্যস্ত হয়ে বলল, না, না—আপনাকে আমি চড় মারতে বলি নাই।
আপনি বলেন নাই তো কী হইছে? আমার একটা দায়িত্ব আছে — বলে রিক্সাওয়ালা হাত ওপরে তুলে কাচু মাস্তানের দিকে এগিয়ে যেতেই সে একেবারে হাঁটু ভেঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রিক্সাওয়ালার পা ধরে ফেলল।
থাক, থাক মারপিটের দরকার নেই বলে শান্তা আপা এগিয়ে এলেন, বললেন, এরা যদি আসলেই মাস্তান হয় তাহলে পুলিশের হাতে দিলেই হবে।
আপা, নিতু বলল, এদেরকে আগে বেঁধে ফেলতে হবে। ভীষণ বদমাইস এরা। টাকা নিয়ে খুন খারাপ করে।
রিক্সাওয়ালা ততক্ষণে তার কোমরের গামছা খুলে ওস্তাদকে শক্ত করে বেঁধে ফেলেছে। ব্যাগের ভেতর থেকে একটা চাদর খুঁজে পাওয়া গেল, সেটা ছিঁড়ে পাকিয়ে দডির মতো করে কাচু মাস্তানকেও বাঁধা হল। তানিয়া মাথা নেড়ে বলল, এদের পা ও বেঁধে ফেলতে হবে।
হ্যাঁ। আগে রিক্সায় তুইলা নেই, তারপর।
গুড আইডিয়া। মিতুল মাথা নাড়ল, পা বাঁধা থাকলে রিক্সা থেকে লাফিয়ে আর পালিয়ে যেতে পারবে না।
একেবারে পুরোপুরি ভড়কে যাওয়া মাস্তান দুইটি বিস্ফোরিত চোখে সবার দিকে তাকিয়ে ছিল, এখনো তারা বিশ্বাস করতে পারছে না কী ঘটছে।
রিক্সাওয়ালা যখন শক্ত করে মাস্তান দুটিকে বাঁধছে তখন শান্তা আপা বললেন, এখন আমাকে বল, কী হচ্ছে?
বিশাল স্টোরি আপা! রুনু দাঁত বের করে হেসে বলল, বলতে এক মাস লাগবে।
লাগুক।
নিতু জিজ্ঞেস করল, সংক্ষেপে বলব?