গুড আইডিয়া। নিতু মাথা নাড়ল, পুলিশের কাছে কে যেতে চায়?
দেখা গেল কেউই পুলিশের কাছে যেতে চায় না। খবরের কাগজে পুলিশের সম্পর্কে যেসব খবর ছাপা হয় সেটা পড়ে আজকাল পুলিশকে দেখলেই ভয় হয়, মনে হয় এই বুঝি ধরে কিছু একটা করে ফেলবে। নিতু বলল, ঠিক আছে, এখানে দেরি করে লাভ নেই, যেখানে আমাদের অপেক্ষা করার কথা সেখানেই যাই। তারপর ঠিক করা যাবে কে কে পুলিশের কাছে যাবে।
কাজেই ছয় জনের দলটা রওনা দিয়ে দেয়। রাস্তা ঘাটে মানুষজন খুব বেশি নেই, যারা আছে তারা সবাই একটু অবাক হয়ে তাদের দেখছিল, এরকম রাত্রি বেলা ছয়টি মেয়ে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হন্তদন্ত হয়ে যাচ্ছে দেখে অবাক না হয়ে উপায় কী?
যে রাস্তা দিয়ে শান্তা আপার যাবার কথা সেখানে এসে তারা থেমে গেল। এই মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকলে লোকজন সন্দেহ করতে পারে তাই তারা খানিকটা এগিয়ে গেল। সেখানে একটা ছোট বাসার মতন রয়েছে, একটা বাসার সামনে তারা কীভাবে দাঁড়িয়ে থাকে? ছয়জন তাই আরেকটু সামনে এগিয়ে গেল, সেখানে একটা ছোট পানের দোকানে একজন বুড়ো চুপচাপ উদাস মুখে বসে আছে, তাই নিরিবিলিতে দাঁড়ানোর জন্যে তারা আরেকটু এগিয়ে যায়, রাস্তাটা এখানে একটু বাঁকা হয়ে চলে গেছে রাস্তার ঠিক পাশে বিশাল বিশাল কয়টা রেইন ট্রি সেজন্য পুরো জায়গাটাকে কেমন যেন নিঝুম মনে হয়। রাস্তার দুই পাশে এখান থেকে কেমন যেন জংগলের মতো শুরু হয়ে গেছে, একটা লাইট পোস্ট টিমটিমে একটা লাইট বাল্ব জ্বলছে, এ ছাড়া কোথাও আর কোনো আলো নাই। লাইটপোস্টর আলো থেকে সরে গিয়ে বড় একটা গাছের আড়ালে তারা লুকিয়ে বসে গেল। এখান থেকে তারা রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবে, রাস্তায় কে যাচ্ছে আসছে তারা স্পষ্ট দেখতে পাবে কিন্তু তাদেরকে কেউ দেখতে পাবে না।
সবাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে— হঠাৎ করে শান্তা আপা না চলে যান, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। রাস্তাটা অবিশ্যি খুব নির্জন, এটা তাদের স্কুলের রাস্তা যারা স্কুলে যাবে শুধু তারাই এই রাস্তা দিয়ে যায় কাজেই অন্য কারো এদিক দিয়ে যাবার কথা নয়। ভুল করে তাদের চোখ এড়িয়ে শান্তা আপা চলে যাবেন তার সম্ভাবনা বলতে গেলে নেই। মোটামুটি নিশ্চিন্ত হয়ে বসার পর নিতু আবার পুলিশের কাছে যাবার ব্যাপারটি তুলল, জিজ্ঞেস করল, এখন বল, কে যাবে পুলিশের কাছে?
রুনু স্বীকার করে ফেলল, সে পুলিশকে ভয় পায়। কিছুতেই যেতে চায় না। রুনু আর ঝুনুর মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, কাজেই ধরে নেয়া হল ঝুনুও পুলিশের কাছে যাবে না। বাকি চারজনের মাঝে কী লটারী করে ঠিক করা হবে না এমনিতেই কেউ রাজি হয়ে যাবে সেটা নিয়ে যখন কথা বার্তা হচ্ছে ঠিক তখন তারা একটা গাড়ির শব্দ শুনতে পেল, সাথে সাথে সবাই মাথা নিচু করে বসে যায়। গাড়িটা তাদের স্কুলের দিক থেকে আসছে, তাদের কাছাকাছি এসে গাড়িটার গতি কমে আসে, এবং ঠিক তাদের সামনে এসে গাড়িটা থেমে যায়। লাইটপোস্টের টিমটিমে আলোতে তারা স্পষ্ট দেখতে পায় গাড়ির দরজা খুলে দুইজন মানুষ বের হয়ে এসেছে। মানুষগুলির বয়স খুব বেশি নয়, তারা সেরকম লম্বা চওড়াও নয়। জিন্সের প্যান্টের সাথে টি সার্ট পরে আছে, একজনের মাথায় একটা বেসবল ক্যাপ। মানুষগুলো বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাল। বেসবল ক্যাপ মাথায় মানুষটা পিচিক করে থুতু ফেলে বলল, শান্তা মাস্টারনীকে এই খানেই ধরি! না কি বলেন ওস্তাদ?
যাকে ওস্তাদ বলে ডাকা হল সে হঠাৎ প্যান্টের বোতাম খুলে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে শুরু করে দিয়ে সিগারেটটা দাঁতের গোড়ায় চেপে ধরে বলল, সেই জন্যেই তো দাঁড়ালাম এইখানে। রং করার জন্যে কী দাঁড়িয়েছে?
পেশাব শেষ করে মানুষটি সরে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল নিতু আর অন্য পাঁচজন। তারপর নিশ্বাস বন্ধ করে ওরা একটু পিছিয়ে গিয়ে নিচু হয়ে নিজেদের আড়াল করে ফেলল। নিতু চাপা গলায় বলল, সর্বনাশ! মাস্তানগুলো শান্তা আপাকে ধরার জন্যে যে এখানেই দাঁড়াল।
তানিয়া বলল, এই জায়গাটাই তো নির্জন। এখানেই তো দাঁড়াবে।
এখন উপায়?
আমাদের তাড়াতাড়ি রাস্তার গোড়ার দিকে যেতে হবে।
যাব কেমন করে? মিতুল ফিস ফিস করে বলল, মাস্তান দুইটা যে এদিকেই তাকিয়ে আছে!
কিছু করার নাই, এর মাঝেই যেতে হবে। না হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
ওরা উবু হয়ে তাকিয়ে দেখল, রাস্তাটা ঠিক এখানো বাঁকা হয়ে গেছে, রাস্তার গোড়ায় যেতে হলে এই লোক দুজন দেখে ফেলবে। মাস্তান দুজন গাড়ির বনেটে বসে আছে, সেটা হচ্ছে আরেক বিপদ।
মাথায় বেস বল ক্যাপ দেয়া মানুষটা বলল, ওস্তাদ। লোহার রড টা বের করি?
কর।
কাঁটা রাইফেল
বের করবি? কর, কেউ নাই এখানে।
বেস বল মাথায় মানুষটা গাড়ির লাগেজ কম্পার্টমেন্ট খুলে সেখান থেকে একটা মোটা লোহার রড আর একটা কাঁটা রাইফেল বের করে এনে গাড়ির ছাদে রাখল। যে মানুষটাকে ওস্তাদ বলে ডাকা হচ্ছে সে বলল, কাচু।
জে, ওস্তাদ।
রাইফেলটা লোড করে রাখ। পারবি তো নাকি আগের মতো ট্রিগার টেনে গুলি করে দিবি?
কী বলেন ওস্তাদ! একবার ভুল হয়েছে দেখে বার বার ভুল হবে নাকি!
গাছের আড়ালে লুকিয়ে দেখতে পেল কাচু নামের মানুষটা কাঁটা রাইফেলে গুলি ভারে সেটা রেডি করে গাড়ির ছাদে রেখে দিয়ে খুব খুশি হয়ে বলল, সব রেডি। এখন মাস্টারনী আসলেই কেস কমপ্লিট।