মিঠু কাছেই ছিল, সে উপদেশ দেওয়ার ভঙ্গি করে বলল, “আপু, তুমি রাজি হয়ো না, ভাইয়া সবসময় আজব আজব জিনিস চায়।”
গাব্বু মুখ শক্ত করে বলল, “আমি মোটেও আজব কোনো জিনিস চাই না।”
টুনি জিজ্ঞেস করল, “তা হলে কী চাস?”
“চুল।”
“চুল?” টুনি অবাক হয়ে বলল, “তুই চুল চাস?”
“হ্যাঁ।”
“তুই আমার কাছে চুল চাইছিস কেন? তোর নিজেরই তো মাথাভর্তি চুল।
গাব্বু বলল, “আমার লম্বা চুল দরকার। ছোট চুল দিয়ে হবে না। দেখছ না আমার চুল কত ছোট। আব্বু আমাকে চুল লম্বা করতেই দেয় না।”
“কী করবি লম্বা চুল দিয়ে?”
“হাইগ্রোমিটার বানাব।”
“সেটা আবার কী জিনিস?”
“জলীয় বাষ্প মাপার মেশিন। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকলে চুল লম্বা হয়। তাই চুল দিয়ে একটা মেশিন বানাব। একটা রোলারের মতো জিনিসে চুল প্যাঁচানো থাকবে। চুল লম্বা হলে রোলারটা ঘুরবে। রোলারের সাথে একটা কাঁটা লাগানো থাকবে-” গাব্বু দুই হাত-পা নেড়ে তার যন্ত্র কীভাবে কাজ করবে সেটা বোঝানো শুরু করল, টুনি তখন তাকে থামাল, বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে, বুঝেছি।”
“দেবে চুল?”
“তোর কতগুলো চুল লাগবে?”
গাব্বু বলল, “সবগুলো হলে ভালো হয়।”
টুনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল, “কী বললি? সবগুলো? আমি তোকে চুল দেওয়ার জন্যে আমার মাথা ন্যাড়া করে ফেলব?”
গাব্বু বলল, “কেন? মানুষ কি মাথা ন্যাড়া করে না? আবার তো চুল উঠে যাবেই।”
টুনি রেগে বলল, “ভাগ এখান থেকে। পাজি কোথাকার! ঢং দেখে বাঁচি না। কত বড় শখ! তার মেশিন বানানোর জন্যে আমি আমার মাথা ন্যাড়া করে ফেলব!”
গাব্বু বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে। সবগুলো দিতে না চাইলে অর্ধেক দাও।”
টুনি মুখ শক্ত করে বলল, “মাথার হাফ সাইড কামিয়ে অর্ধেক দেব? হাফ ন্যাড়া হাফ চুল?”
“হ্যাঁ। সমস্যা কী?”
“একজন মানুষের মাথার অর্ধেক ন্যাড়া আর অর্ধেক চুল থাকলে সেটা কী সমস্যা যদি তুই না বুঝিস তা হলে বুঝতে হবে তোর সিরিয়াস সমস্যা আছে। বুঝতে হবে তোর ব্রেনে গোলমাল আছে। বুঝেছিস?”
গা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তার মানে তুমি দেবে না?”
“না।”
“একটুও দেবে না।”
“একটা দিতে পারি। জাস্ট ওয়ান।”
মিঠু এগিয়ে এসে বলল, “ভাইয়া নিয়ে নাও। আপু তোমাকে একটার বেশি দেবে না।”
গাব্বু টুনির মাথার লম্বা চুলগুলোর দিকে লোভ নিয়ে তাকিয়ে থেকে বলল, “তোমার মাথায় এত চুল, আর তুমি মাত্র একটা দেবে?”
টুনি মুখ খিঁচিয়ে বলল, “তুই যদি বেশি ঘ্যান ঘ্যান করিস তা হলে ওই একটাও পাবি না।”
মিঠু বলল, “ভাইয়া, বেশি ঘ্যান ঘ্যান না করে এই একটাই নিয়ে নাও। প্রত্যেকদিন একটা একটা করে নিলেই অনেকগুলো হয়ে যাবে।”
গাব্বু খুবই হতাশ ভঙ্গি করে বলল, “ঠিক আছে। তা হলে একটাই দাও।”
টুনি তার মাথার একটা চুল ছিঁড়ে দিতে যাচ্ছিল, গাব্বু তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “দাঁড়াও, দাঁড়াও, তুমি ঠিক চুল দিতে পারবে না। আমি নাদুসনুদুস দেখে একটা বেছে নিই।”
গাব্বু দেখেশুনে একটা নাদুসনুদুস চুল হ্যাঁচকা টান দিয়ে ছিঁড়ে নিল, টুনি”আউ আউ” করে চিৎকার করে বলল, “বেশি নিয়ে যাসনি তো?”
গাব্বু মাথা নাড়ল, “না, বেশি নেই নাই।” তারপর একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল, “আমি শুধু একটু বড় হয়ে নিই, তখন দেখ আমার এত বড় বড় চুল হবে। যখন দরকার হবে তখন পুট করে ছিঁড়ে নেব।”
মিঠু জানতে চাইল, “কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতোন?”
গাব্বু মাথা নাড়ল, “উঁহু। আইনস্টানের মতোন। বৈজ্ঞানিকদের অন্যরকম লম্বা চুল থাকে।”
মিঠু মাথা নাড়ল, বলল, “না ভাইয়া, থাকে না। আজকে টেলিভিশনে বৈজ্ঞানিক রিফাত হাসানকে দেখিয়েছে, তার মাথায় মোটেও লম্বা চুল নাই।”
“তার মানে রিফাত হাসান হচ্ছে পাতি সায়েন্টিস্ট।”
টুনি বলল, “বাজে কথা বলবি না। এত বড় একজন সায়েন্টিস্টকে নিয়ে কী একটা বাজে কথা বলে দিল। ভাগ এখান থেকে। কানের কাছে আর ভ্যাদর ভ্যাদর করবি না। যা–”
গাব্বুর চোখ-মুখ হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, বলল, “আপু তুমি কি জানতে চাও কেমন করে অল্প একটু পড়েই সবকিছু মনে রাখা যায়?”
টুনি বলল, “না, আমি জানতে চাই না। তুই বিদায় হ।”
“খুবই সহজ। ব্রেনের একটা অংশ আছে, তার নাম হচ্ছে এমিগডালা। এমিগডালার কাজ হচ্ছে
টুনি মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “তুই চুপ করবি? করবি চুপ?”
গাব্বু হাল ছেড়ে দিয়ে বলল, “ঠিক আছে বাবা–চুপ করছি।”
.
গভীর রাতে টুনির ঘুম ভেঙে গেল, তাকিয়ে দেখে ঘরে আলো জ্বলছে। ঘুরে গাব্বুর বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল গাব্বু বিছানায় দুই পা তুলে বসে আছে। তার দুই চোখ বড় বড় করে খোলা এবং সে ড্যাব ড্যাব করে শূন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। টুনি ঘুম ঘুম চোখে দেয়ালঘড়ির দিকে তাকাল-ঘড়িতে রাত একটা বেজে পাঁচ মিনিট। সে গাব্বুর দিকে তাকিয়ে বলল, “গাব্বু, রাত একটা বাজে। তুই এখনো ঘুমাসনি?”
গাব্বু মাথা নাড়ল, বলল, “না।”
“কী করছিস?”
“কিছু করছি না।”
“কিছু করছিস না তো জেগে বসে আছিস কেন?”
গাব্বু গম্ভীর মুখে বলল, “আমি একটা এক্সপেরিমেন্ট করছি।”
“এক্ষুনি বললি কিছু করছিস না, এখন বলছিস এক্সপেরিমেন্ট করছিস। ব্যাপারটা কী?”
“এইটাই এক্সপেরিমেন্ট।”
“কোনটা?”
“জেগে বসে থাকা।”
টুনি দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “জেগে বসে থাকা এক্সপেরিমেন্ট? আমার সাথে ফাজলেমি করিস?” তারপর ধমক দিয়ে বলল, “এক্ষুনি লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়।”