রত্না বলল, “পারে। একসাথে দশটা হাম বার্গার খেতে পারে।”
লিটন রত্নার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল, আশেপাশে স্যার-ম্যাডামরা আছেন তাই আর কিছু বলল না।
রিফাত হাসান বললেন, “সায়েন্টিস্টদের জীবন খুব কঠিন। তারা একটু অন্যরকম হয় তো, তাই তাদের বন্ধু বেশি হয় না। আমাদের গাব্বু তো খুব লাকি তার এতগুলো বন্ধু!”
ফারিয়া বলল, “জি স্যার, আমরা সবসময় গাব্বুকে সাহায্য করি। সে হাইড্রোমিটার না কী একটা মেশিন বানাবে–”
গাব্বু ঠিক করে দিল, “হাইব্রো না হাইগ্রোমিটার।”
“ওই একই কথা। হাইগ্রোমিটার বানানোর জন্যে লম্বা চুল দরকার। তাই আমাকে বলেছে, আমি সাথে সাথে তাকে এতগুলো চুল দিয়ে দিয়েছি। এই যে দেখেন–” ফারিয়া তার মাথার চুল সরিয়ে দেখাল সেখানে এক খাবলা চুল নেই।
রিফাত হাসান চমৎকৃত হলেন, বললেন, “অসাধারণ! বিজ্ঞানের জন্যে এরকম স্যাক্রিফাইস খুব বেশি নাই।”
মিলি বলল, “গাব্বু নার্ভ নিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছে, কাউকে চিমটি দেওয়া দরকার, তখন আমরা সবাই আমাদের হাতে চিমটি দিতে দিয়েছি।” মিলি দেখাল, “এই যে এইখানে চিমটি দিয়েছিল। লাল হয়েছিল।”
রিফাত হাসান কী বলবেন বুঝতে পারলেন না, তাই জোরে জোরে মাথা নাড়লেন। রত্না বলল, “কিন্তু স্যার গাব্বু কারও কথা শোনে না। তাকে একটু বলে দেবেন সে যেন আমার কথা একটু শোনে।”
“কেন? কী হয়েছে?”
“স্যার আমার মাকড়সা খুব ভয় করে–”
“তাই না কি? আমারও মাকড়সা খুব ভয় করে। এর একটা নামও আছে, আরকোনোফোবিয়া।”
“জি স্যার। কিন্তু সায়েন্স এক্সপেরিমেন্ট করার জন্যে গাব্বু এই এত বড় একটা মাকড়সা ধরে আমাকে ভয় দেখিয়েছে।” কথাটা বলতে গিয়েই রত্না একটু শিউরে উঠল।
“তাই না কি?” রিফাত হাসান গাব্বুর দিকে তাকালেন, “সত্যি?”
“কিন্তু এক্সপেরিমেন্টটা কাজ করেছে।”
“কাজ করলেও বন্ধুদের ভয় দেখিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে না। বন্ধু সায়েন্স থেকেও ইম্পরট্যান্ট। যার বন্ধু নেই তার কিছু নেই। ঠিক আছে?”
গাব্বু মাথা নাড়ল, বলল, “ঠিক আছে।”
প্রিন্সিপাল স্যার পাশে দাঁড়িয়ে উশখুশ করছিলেন। এত বড় এত বিখ্যাত একজন মানুষ। যিনি প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের সাথে চা-নাস্তা খান তিনি কি না এইরকম ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে মাকড়সা নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করছেন, নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না। একটু কাশির মতো শব্দ করে বলেই ফেললেন, “স্যার–”
“জি।”
“আপনি আমাদের স্কুলে এসেছেন এত বড় একটা ব্যাপার, আমাদের সব টিচারদের সাথে যদি একটু চা খেতেন—”
রিফাত হাসান মাথা নাড়লেন, বললেন, “আসলে আমার একটু তাড়া আছে। দুপুরে প্লেন ধরতে হবে তো–”
রওশন ম্যাডাম বললেন, “তা হলে স্যার, আপনি একটু বারান্দায় দাঁড়ান, আমরা স্কুলের সব ছেলেমেয়েকে ডাকি। তারা নিজের চোখে আপনাকে একটু দেখুক।”
“লেখাপড়ার ক্ষতি করে আমাকে দেখবে?”
“জি স্যার। একটু লেখাপড়ার ক্ষতি হলেও হাজার গুণ বেশি লাভ হবে।”
রিফাত হাসান হাসলেন, বললেন, “ঠিক আছে!”
.
মিনিট দশেক পর স্কুলের ছেলেমেয়েদের ভিড় ঠেলে রিফাত হাসান যখন তার গাড়িতে উঠছেন তখন গাবুকে ডাকলেন। বললেন, “আমি যাচ্ছি। যোগাযোগ রেখো।”
“ঠিক আছে।”
“শুধু টেলিপ্যাথির উপর ভরসা না করে ই-মেইল করা যেতে পারে।”
“ঠিক আছে।”
গাব্বু কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল। রিফাত হাসান জিজ্ঞেস করলেন, গাব্বু, “তুমি কিছু বলবে?”
“জি।”
“বল।”
“আমার আপুর খুব ইচ্ছা সে আপনার সাথে একটা ছবি তুলবে আর একটা অটোগ্রাফ নেবে!”
“কোথায় তোমার আপু? ডাকো।”
ইউসুফ চাপা গলায় বলল, “স্যার দেরি হয়ে যাবে।”
রিফাত হাসান বললেন, “হোক!”
টুনির সাথে ছবি তোলার পর আরও অনেকের সাথে ছবি তুলতে হল, আরও অনেককে অটোগ্রাফ দিতে হল। অন্য কেউ হলে ফ্লাইট মিস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, গাব্বু জানে রিফাত হাসানের সেই ভয় নেই। দরকার হলে এয়াপোর্টে তার জন্যে প্লেন দাঁড়িয়ে থাকবে।
.
পুলিশের গাড়ি সাইরেন বাজাতে বাজাতে রিফাত হাসানের গাড়িটাকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পর টুনি গাব্বুর কাছে ছুটে এল, তারপর সবার সামনে তাকে চেপে ধরে তার দুই গালে ধ্যাবড়া করে চুমু খেল। গাব্বু অসম্ভব বিরক্ত হয়ে বলল, “আপু, ভালো হচ্ছে না কিন্তু। তুমি এরকম করলে আমি কখনো তোমাকে নিয়ে ছবি তোলার কথা বলতাম না। তুমি জান মানুষের মুখের লালায় কত ব্যাক্টেরিয়া থাকে?”
গাব্বুর কথা শুনে টুনি গাব্বুকে আরও জোরে চেপে ধরে আরও জোরে তার গালে ধ্যাবড়া করে চুমু খেল।
কী একটা লজ্জার ব্যাপার। ছিঃ ছিঃ ছিঃ।