মানুষটি হচ্ছে বিজ্ঞানী রিফাত হাসান।
.
১০.
রিফাত হাসান ভোরবেলাতেই খবর পেয়ে গেলেন ডাবল ব্রাঞ্চিং ডাটাতে পেয়ার প্রোডাকশান নেই এরকম কেসগুলো আলাদা করে তাদের ডাটা এনালাইসিসের সময় দশ ভাগের এক ভাগ করে ফেলা গেছে। যার অর্থ এখন তারা দ্রুত তাদের কাজ শেষ করতে পারবেন, ইউরোপের একটা গ্রুপের সাথে তাদের প্রতিযোগিতা, সেই গ্রুপকে তারা এখন হেসে খেলে হারিয়ে দেবেন। রিফাত হাসানের মনটা ভালো হয়ে গেল এবং ঠিক করলেন ফিরে যাওয়ার আগে গাব্বুর সাথে একবার দেখা করে যাবেন। আধপাগল এই বাচ্চা সায়েন্টিস্টের সাথে তার যদি দেখা না হত তা হলে ডাটা এনালাইসিসের এই চমকপ্রদ পদ্ধতিটার কথা তার মাথায় আসত না। তবে সমস্যা একটাই, গাব্বুর এই বিচিত্র নামটা ছাড়া তার আর কিছুই তিনি জানেন না।
রিফাত হাসান তখন তখনই ইউসুফকে ফোন করলেন এবং ইউসুফ তাকে বলল সে গাব্বুকে খুঁজে বের করে ফেলবে। নাস্তা করে রিফাত হাসান বিকালে একটা ঢাউস গাড়ি নিয়ে বের হলেন, সামনে পুলিশের গাড়ি, তারা বাঁশি বাজাতে বাজাতে যাচ্ছে। গাব্বুর সাথে যেখানে দেখা হয়েছে সেই মাঠের আশেপাশে দোকানপাট বাড়িঘরে পুলিশ কথা বলল, নানা জায়গায় ফোন করল এবং তারা গাব্বুর স্কুলের নাম বের করে ফেলল। স্কুলের নাম বের করার পর কাজ খুব সহজ, রিফাত হাসান আবিষ্কার করলেন কয়েক মিনিটের মাঝে তারা স্কুলে চলে এসেছেন।
রিফাত হাসান গাড়ি থেকে নামতেই বেঁটে এবং কালো মতোন একজন মানুষ তার দিকে ছুটে এল। মানুষটির গলা নেই, ধড়ের ওপর মাথাটা সরাসরি বসানো। রিফাত হাসান বুঝতে পারলেন তাকে দেখে এই মানুষটির ব্রেন শর্ট সার্কিট হয়ে গেছে এবং চেষ্টা করেও কথা বলতে পারছে না। মানুষটি তোতলাতে তোতলাতে বলল, “আ-আ-আ আমি এই স্কুলের প্রিন্সিপাল। স্যার, আ-আ-আপনি-আ-আ-আ আপনি?”
রিফাত হাসান প্রিন্সিপাল স্যারকে সাহায্য করলেন, বললেন, “জি। আমি। আমি রিফাত হাসান।”
“জানি স্যার। আ-আ-আপনাকে পরিচয় দিতে হবে না। স্যার। আ-আ আপনাকে সবাই চিনে স্যার। আ-আ-আপনি স্যার আমাদের স্কুলে! কী সৌভাগ্য স্যার। স্যার, আমার কী সৌভাগ্য! আমার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কী সৌভাগ্য স্যার!”
“সৌভাগ্যের কোনো ব্যাপার নেই। আর সত্যি কথা বলতে কী, সৌভাগ্য যদি কারও হয় তা হলে সেটা আমার।”
প্রিন্সিপাল বিনয়ে একেবারে গলে গিয়ে হাত কচলাতে কচলাতে বললেন, “স্যার স্যার আসেন স্যার। আসেন স্যার আমার অফিসে।”
রিফাত হাসান প্রিন্সিপালের পেছনে পেছনে তার অফিসে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, “আমি আসলে আপনার স্কুলের একজন ছাত্রকে খুঁজতে এসেছি।”
প্রিন্সিপাল স্যার অবাক হয়ে গেলেন, “আমার স্কুলের ছাত্র?”
“জি। তার ভালো নাম জানি না। কোন ক্লাসে পড়ে সেটাও জানি না। তার নাম হচ্ছে গাব্বু। তার সাইজ এরকম–” রিফাত হাসান হাত দিয়ে গাব্বুর সাইজ দেখালেন।
প্রিন্সিপাল স্যারের মুখ শক্ত হয়ে গেল, “কী করেছে গাবু? কোনো সমস্যা স্যার?”
রিফাত হাসান জোরে জোরে মাথা নাড়লেন, বললেন, “না, না! সমস্যা হবে কেন? হি ইজ ইনক্রেডিবল। আমি তাকে কংগ্রাচুলেট করতে এসেছি। গতকাল তার সাথে আমার দেখা হয়েছে, সে তখন আমাকে এমন একটা আইডিয়া দিয়েছে যেটা ব্যবহার করে আমি আমার এক্সপেরিমেন্টের ডাটা এনালাইসিসে রীতিমতো বিপ্লব করে ফেলেছি। আমি আজ চলে যাব, তাই ভাবলাম যাওয়ার আগে তার সাথে দেখা করে যাই। তাকে কি একটু খুঁজে দেওয়া যাবে?”
প্রিন্সিপালের অফিসে জড়সড়ো হয়ে দাঁড়ানো ছেলেমেয়েদের ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লাগল। যখন পুলিশের গাড়ি করে লোকজন গাব্বুকে খোঁজ করতে এসেছে তখন তারা ধরেই নিয়েছিল গাব্বু আরও বড় ঝামেলায় পড়েছে। যখন দেখল গাব্বু ঝামেলায় পড়েনি, বরং উল্টো গাব্বু খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ফেলেছে, তখন তাদের গলায় জোর ফিরে এল। তারা গাব্বুকে ধরে চিৎকার করে বলল, “এই যে! এই যে গাব্বু!”
রিফাত হাসান এবার গাব্বুকে দেখতে পেলেন, সাথে সাথে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। দুই হাত ওপরে তুলে বললেন, “হ্যালো ডক্টর গাব্বু! আওয়ার ফেমাস সায়েন্টিস্ট প্রফেসর গাবু! হাউ আর ইউ?”
গাব্বু বলল, “আপনি কি রাত দশটায় টেলিপ্যাথি করেছিলেন?”
রিফাত হাসান মুখে গাম্ভীর্য টেনে বললেন, “অবশ্যই করেছিলাম।”
“আমি আপনাকে যেভাবে শিখিয়েছিলাম সেইভাবে?”
“ইয়েস স্যার, সেইভাবে।”
“কোনো ম্যাসেজ কি পেয়েছিলেন?”
“উঁহু। তুমি?”
গাব্বু হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল, বলল, “আমিও পাই নাই। আপনি কি ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন?”
“পাঠিয়েছিলাম।”
গাব্বু গম্ভীর মুখে বলল, “আবার চেষ্টা করতে হবে।”
“অবশ্যই আবার চেষ্টা করতে হবে।” রিফাত হাসান তখন গলার স্বর পাল্টে বললেন, “প্রফেসর গাব্বু, আজকে আমি অন্য কাজে এসেছি। আজকে আমি তোমাকে বলতে এসেছি যে তোমার আইডিয়াটা অলরেডি কাজে লাগানো হয়েছে। চমৎকারভাবে কাজ করছে এবং ওয়ান্ডারফুল ফিজিক্স বের হচ্ছে।”
গাব্বু জানতে চাইল, “কোন আইডিয়াটা? টিকটিকির ডাবল লেজ?”
“না না। সেটা এখনো শুরু করি নাই। অন্য আইডিয়াটা, যেটা আছে সেটা খুঁজে যেটা নাই সেটা খোজা।”
“ও।” গাব্বু মাথা নেড়ে বলল, “টিকটিকির ডাবল লেজ থিওরিটাও কিন্তু ভালো। মনে হয় কাজ করবে।”