গাব্বু বলল, “আমার সাথে আজ রাতে যোগাযোগ হবে।”
একসাথে সবাই লাফিয়ে উঠল, “যোগাযোগ হবে?”
“হ্যাঁ।”
টুনি চিৎকার করে উঠল, “এতক্ষণ বলিসনি কেন? কীভাবে যোগাযোগ হবে?”
“টেলিপ্যাথি।”
যোগাযোগ শুনে যেভাবে সবাই উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল, টেলিপ্যাথি শুনে সবার উত্তেজনা ঠিক সেইভাবে শেষ হয়ে গেল। টুনি হতাশ হয়ে বলল, “টেলিপ্যাথি? গাধা তুই একটা মোবাইল নম্বর নিতে পারলি না?”
গাব্বু মুখ শক্ত করে বলল, “যখন টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ কাজ করা শুরু করবে তখন দেখো মোবাইল টেলিফোনের বিজনেসের বারোটা বেজে যাবে।”
মিঠু জিজ্ঞেস করল, “টেলিপ্যাথি দিয়ে মিসকল দেওয়া যাবে?”
গাব্বু বলল, “ধুর গাধা! তখন মিসকল দিতে হবে না।”
আব্বুকে একটু বিভ্রান্ত দেখা গেল, “উনি টেলিপ্যাথি বিশ্বাস করেন?”
গাব্বু মাথা চুলকে বলল, “এখনো হ্যাঁ না কিছু বলেন নাই। কিন্তু বিজ্ঞানের ব্যাপার-স্যাপার সবসময় পরীক্ষা করে দেখতে হয়। আমরা ঠিক করেছি প্রত্যেকদিন রাত দশটার সময় টেলিপ্যাথি করার চেষ্টা করব।”
টুনি চোখ কপালে তুলে বলল, “প্রত্যেকদিন?”
“হ্যাঁ।”
“গাধা তুই টেলিপ্যাথি না বলে টেলিফোন কেন বললি না?”
গাব্বু মুখ শক্ত করে বলল, “টেলিফোন খুবই পুরনো জিনিস। দুইশ বছর আগে আবিষ্কার হয়েছে। টেলিপ্যাথি নতুন–এখনো আবিষ্কার হয় নাই।”
.
ঠিক এই সময় রিফাত হাসান হোটেলের রুমে বসে তার সহকর্মীদের কাছে একটা ই-মেইল পাঠাচ্ছিলেন। ই-মেইলটি এই রকম :
আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জানানোর জন্যে তোমাদের কাছে এই ই-মেইলটি পাঠাচ্ছি। আমাদের পুরো সময়টি কাটে বিশাল পরিমাণ ডাটা এনালাইসিস করে, সেখান থেকে ছোট একটা সিগনেচার খুঁজে বের করতে আমাদের পুরো জীবনটা কেটে যায়। কাজটা কত সময়সাপেক্ষ সেটা তোমাদের থেকে ভালো করে আর কেউ জানে না।
আজ বিকেলে একজন সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে ডাটা এনালাইসিস করার একটা চমকপ্রদ উপায় দেখিয়ে দিয়েছে। পদ্ধতিটা খুবই সহজ, এক কথায় এইভাবে বলা যায়, কী আছে সেটা না খুঁজে কী নেই সেটা খোজা। এখানে বসে আমি ডাটাবেসে ঢুকতে পারছি না, যদি পারতাম তা হলে এক্ষুনি পরীক্ষা করে দেখতাম। তোমরা কেউ একজন ডাবল ব্রাঞ্চিং ডাটাতে কোথায় কোথায় পেয়ার প্রডাকশন নেই আমাকে জানাও।
তোমরা শুনে খুবই মজা পাবে, আমাকে যে এই চমকপ্রদ আইডিয়াটি দিয়েছে সে দশ-বারো বছরের পাগলাটে একটা ছেলে, তার নাম গাব্বু। এই বয়সেই সে খাঁটি বৈজ্ঞানিক। তার সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় সে আমাকে তার কো-পার্টনার করেছে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার উদ্দেশ্য শুনলে তোমাদের খুবই মজা পাওয়ার কথা, সেটি হচ্ছে টেলিপ্যাথি। হা হা হা।
রাত দশটার সময় তোমরা যদি আমাকে ফোন করে আবিষ্কার করো আমি ফোনটি ধরছি না তা হলে বুঝে নেবে আমি তার সাথে টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ করার এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত আছি। হা হা হা।
রাত দশটার সময় রিফাত হাসান যখন সত্যি সত্যি তার সব কাজ ফেলে রেখে গাব্বুর দেখানো পদ্ধতিতে চোখ বন্ধ করে দুই কানে হাত দিয়ে টেলিপ্যাথি করার চেষ্টা করছেন তখন গাব্বুও বাসা থেকে একই কাজ করছে। মিঠু খুব কাছে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে গাল্লুকে দেখছিল, গাব্বু কয়েক মিনিট চেষ্টা করে যখন চোখ খুলল তখন মিঠু জিজ্ঞেস করল, “হয়েছে ভাইয়া? টেলিপ্যাথি হয়েছে?”
গাব্বু হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল, “নাহ। আমি কোনো ম্যাসেজ পাই নাই, আমার ম্যাসেজটা পেয়েছেন কি না বুঝতে পারলাম না।”
“তুমি কী ম্যাসেজ পাঠিয়েছো?”
“ইম্পরট্যান্ট ম্যাসেজ। স্টপ। চুল দাড়ি মোছ ছাড়াও বড় বিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব। স্টপ। উদাহরণ ডারউইন। স্টপ। মাথা ভরা টাক। স্টপ।”
মিঠু অবাক হয়ে গাব্বুর দিকে তাকিয়ে রইল।
৭-৮. মাথায় ঠাণ্ডা পানি
পরদিন সকালে মাথায় ঠাণ্ডা পানি না ঢেলেও গাব্বুকে ঘুম থেকে তুলে ফেলা গেল। বাথরুমে গিয়ে গাব্বু টুথপেস্ট দিয়ে মুখ ধোয়া যায় কি না পরীক্ষা করে দেখল। পাশে টুনি দাঁড়িয়ে ছিল, অন্যদিন হলে চিৎকার করে বাসা মাথায় তুলে ফেলত, আজকে কিছুই করল না। নাস্তা খাওয়ার সময় গাব্বু যখন পানির গ্লাসে চায়ের পাতা ফেলে সারফেস টেনশনের একটা ছোট এক্সপেরিমেন্ট করে ফেলল, তখনো কেউ তাকে কিছু বলল না।
নাস্তা খেতে খেতে আব্বু খবরের কাগজ পড়ছিলেন, হঠাৎ মাথা তুলে বললেন, “এই যে, রিফাত হাসানের ছবি।”
সবাই ঘুরে তাকাল। প্রথম পৃষ্ঠায় নিচের দিকে তার হাসিমুখের একটা ছবি। টুনি জিজ্ঞেস করল, “কী লিখেছে আব্বু?”
মিঠু বলল, “ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছে সেইটা কি লিখেছে?”
টুনি মুখ ভেংচে বলল, “আর ভাইয়া যে তার সাথে একশ রকম বেয়াদবি করেছে সেটা লিখেছে?”
আব্বু হাসলেন, বললেন, “না সেইগুলো কিছু লিখেনি। লিখেছে যে আজকে বিকেলে চলে যাবেন!”
টুনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ইশ! একটুর জন্যে দেখা হল না।”
.
স্কুলে পৌঁছানোর পর গাব্বু তার ব্যাগটা জানালার কাছে রেখে যখন বের হবে তখন শুনল তাদের ক্লাসের মিলি আর লিটন ঝগড়া করছে। গাব্বু এ ধরনের ঝগড়াঝাটিকে কোনো গুরুত্ব দেয় না, কিন্তু আজকে গুরুত্ব দিল। কারণ ঝগড়ার বিষয়বস্তুটা বিজ্ঞানবিষয়ক। গাব্বু শুনতে পেল লিটন বলছে উত্তল লেন্স দিয়ে কোনোকিছু ছোট দেখা যায়, আর মিলি বলছে বড় দেখা যায়। এরকম বৈজ্ঞানিক একটা আলোচনায় পাশে দাঁড়িয়েও সে অংশ নেবে না সেটা তো হতে পারে না।