“বুঝতেও তো পারি।”
“উঁহু। অনেক কঠিন। এটা বুঝতে হলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, ভর, ওজন এইসব বুঝতে হয়।”
রিফাত হাসান কষ্ট করে মুখে গাম্ভীর্য ধরে রেখে বললেন, “ও আচ্ছা, তা হলে আমি আন্দাজ করার চেষ্টা করি তুমি কেন গাছের ওপর থেকে লাফ দিয়েছ?”
গাব্বু অবাক হয়ে রিফাত হাসানের দিকে তাকালেন, “আপনি আন্দাজ করবেন? করেন দেখি।”
রিফাত হাসান হাসি হাসি মুখ করে বললেন, “ফ্রি ফলের সময় মানুষের নিজেকে মনে হয় কোনো ওজন নেই। তুমি তাই গাছ থেকে লাফ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছ ওজন না থাকলে কেমন লাগে।”
গাব্বু অবাক হয়ে রিফাত হাসানের দিকে তাকিয়ে রইল, চোখ বড় বড় করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, “কী আশ্চর্য! আপনি কেমন করে আন্দাজ করলেন? আমি কত চেষ্টা করে কাউকে বোঝাতে পারি নাই, আর আপনি নিজে নিজে বুঝে গেলেন!”
“তোমার কথা কেউ বিশ্বাস করে না?”
“না। উল্টো আমাকে নিয়ে ইয়ারকি করে।”
রিফাত হাসান মাথা নাড়লেন, বললেন, “আমি জানি। সায়েন্টিস্টদের কথা কেউ বুঝতে চায় না। তাদের জীবন খুবই কঠিন। আগে অবস্থা আরও অনেক খারাপ ছিল, পুড়িয়ে মেরে ফেলত। এখন অবস্থা একটু ভালো, আর পুড়িয়ে মারে না। বড়জোর গালাগাল দেয়।”
গাব্বু হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল, বলল, “না, অবস্থা বেশি ভালো হয় নাই। দুই-দুইবার আমার ল্যাবরেটরিটা নালায় ফেলে দিয়েছিল।”
“খুবই অন্যায় হয়েছে।”
“এক্সপেরিমেন্ট করার সময় একটু ভুল তো হতেই পারে। একটু আগুন লেগেছে, জানালার পর্দা অল্প একটু পুড়েছে। ব্যস! সবাই রেগেমেগে ফায়ার। আমার পুরা ল্যাবরেটরি নালায়। কত মূল্যবান কেমিক্যালস ছিল। ইশ!”
রিফাত হাসান সমবেদনার ভঙ্গি করে বলল, “ইশ! খুবই অন্যায় হয়েছে। খুবই অন্যায়।”
ঠিক এই সময় রিফাত হাসানের টেলিফোন বাজল, টেলিফোন করেছে ইউসুফ, ভয় পাওয়া গলায় বলল, “স্যার, আপনি কোথায়?”
রিফাত হাসান বললেন, “আমি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে ব্যস্ত আছি। তোমার সাথে একটু পরে কথা বলি?”
ইউসুফ বলল, “ঠিক আছে স্যার। ঠিক আছে।” সে টেলিফোন বন্ধ করে হোটেলের রিসেপশনিস্ট মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল, “স্যার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজে ব্যস্ত আছেন।”
মেয়েটি বলল, “গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তো গুরুত্বপূর্ণ কাজেই ব্যস্ত থাকেন। এত মানুষ দেখা করতে চাইছে সবাইকে তো সময়ও দিতে পারেন না। নিশ্চয়ই কাউকে সময় দিয়েছেন।”
“কে হতে পারে?” ইউসুফ মাথা চুলকালো।
”প্রাইম মিনিস্টার? প্রেসিডেন্ট?”
“বুঝতে পারছি না। কারও সাথে যোগাযোগ না করে একা বের হয়ে গেছেন, খুব দুশ্চিন্তা লাগছে।”
মেয়েটি অপরাধীর মতো বলল, “স্যারকে সার্ভিস ডোর দিয়ে বের করে দেওয়াটা মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হয় নাই। কী করব–এমনভাবে বলছিলেন যে না করতে পারলাম না।”
ইউসুফ চিন্তিত মুখে বলল, “ভেরি রিস্কি। স্যার যখন ইউরোপ যান তখন স্যারের প্রোটেকশনের জন্যে স্পেশাল স্কোয়াড থাকে, আর আমরা এখানে স্যারকে একা একা ছেড়ে দিলাম। স্যার স্কুটার রিকশা করে চলে গেলেন। কী সর্বনাশ!”
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, “মনে হচ্ছে ভুলটা আমারই হয়েছে।”
“না, না, আপনার ভুল হয়নি। স্যার এডাল্ট মানুষ, কিছু একটা করতে চাইলে তো নিষেধ করতে পারি না। কাল থেকে পুলিশ স্কোয়াডের ব্যবস্থা করব। কোথায় আছেন কে জানে তা হলে এখনই পুলিশ নিয়ে যেতাম।”
“গুরুত্বপূর্ণ কোনো মানুষের সাথে যখন কথা বলছেন, মনে হয় নিরাপদেই আছেন।”
.
ঠিক এরকম সময় রিফাত হাসানের সাথে”গুরুত্বপূর্ণ মানুষটির আলাপ খুব জমে উঠেছে।
গাব্বু জিজ্ঞেস করেছে, “আপনি কী করেন?”
রিফাত হাসান বলল, “বলতে পার আমিও তোমার লাইনের লোক। এই তোমার মতো একটু-আধটু বিজ্ঞানের কাজ করি।”
গাব্বু কিছুক্ষণ রিফাত হাসানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “বেশি সুবিধে করতে পারেন নাই। তাই না?”
রিফাত হাসান থতমত খেয়ে বললেন, “কেন? তোমার এটা কেন মনে হল?”
“সত্যিকারের সায়েন্টিস্টদের একটা চেহারা থাকে, আপনার সেই চেহারাটা এখনো আসে নাই।”
“সেটা কী রকম চেহারা?”
গাব্বু নিজের চুল এলোমেলো করে দেখিয়ে দিয়ে বলল, “লম্বা লম্বা উষ্কখুষ্ক চুল। আর বড় বড় মোছ।”
“তাই না কি?”
“হ্যাঁ। আইনস্টাইনের লম্বা লম্বা চুল। নিউটনের লম্বা লম্বা চুল, গ্যালিলিওর লম্বা লম্বা চুল। সব সায়েন্টিস্টদের লম্বা লম্বা চুল থাকে। আপনি যদি বড় সায়েন্টিস্ট হতে চান তা হলে লম্বা লম্বা চুল রাখা শুরু করে দেন।”
“ঠিক আছে। রিফাত হাসান রাজি হওয়ার ভঙ্গি করে বললেন, “তোমার কাছ থেকে অনেক বড় একটা জিনিস শিখে নিলাম। লম্বা চুল এবং সম্ভব হলে বড় বড় গোঁফ।” হঠাৎ করে তাঁর কিছু একটা মনে হল, মাথা ঘুরিয়ে গাব্বুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “আচ্ছা, মেয়েরা তো সাধারণত লম্বা লম্বা চুল রাখে, তা হলে তারা কি আরও সহজে বড় বিজ্ঞানী হতে পারবে?”
গাব্বু ইতস্তত করে বলল, “সেইটা তো কখনো চিন্তা করি নাই। মনে হয় পারবে। কিন্তু চুল লম্বা হলেই তো হবে না, উষ্কখুষ্ক থাকতে হবে। মেয়েরা কখনো চুল উষ্কখুষ্ক রাখতে চায় না। সেইখানে মনে হয় সমস্যা হয়।”
রিফাত হাসান মুখে কষ্ট করে একটা গাম্ভীর্য ধরে রেখে বললেন, “তুমি বিজ্ঞানের আর কী কী জানো?”