বারান্দায় মেজোভাইয়ের সাথে তানিয়ার দেখা হল। তানিয়া বলল, আপনি কেমন আছেন?
মেজোভাই জবাব দিলেন না, ক্রুদ্ধচোখে তাকিয়ে রইলেন। সেই চোখে আগুন ধকধক করছে,
তানিয়া চলে যাবার প মেজোভাই আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন, ঐ মেয়েটা চোখ ব্ৰাউন, তুই লক্ষ করেছিস?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
মইনুদিন চাচার চোখও ব্ৰাউন।
তাতে সমস্যা কী?
সমস্যা কিছুই না। তুই ভালোমতো চিন্তাভাবনা করে বল তো আমাদের পাঁচ ভাইবোনের কারো চোখ ব্ৰাউন কিনা?
ভাইয়া, তোমার কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেল?
মাথা খারাপ— ভালো প্রশ্ন না। আমি তোকে একটা প্রশ্ন করেছি, তুই হ্যাঁ বা না বলবি।
ছিঃ ভাইয়া।
মেজোভাই অগ্নিদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। একবার মনে হল হয়তো তিনি ঝাঁপিয়ে পড়বেন আমার উপর। আমি ভয় পেয়ে খানিকটা পিছিয়ে গেলাম।
রাতে ভয়ংকর একটি দৃশ্যের অবতারণা হল।
রাত তখন প্রায় বারটা, বুনোভাইয়ের ঘর থেকে ক্রুদ্ধ হুংকার শোনা যেতে লাগল। ছুটে গিয়ে দেখি বুনোভাইয়ের মতো মস্ত মানুষ মেজোভাইকে সমানে কিলঘুসি মেরে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছে মেরেই ফেলবেন। বুনোভাইয়ের চোখ টকটকে লাল। আমার মনে হয়, যে-প্রশ্ন ভাইয়া আমাকে করেছিলেন সেই প্রশ্ন বুনোভাইকেও করেছিলেন। অসুস্থ শরীরে মা ছুটে এলেন। ভয়ার্ত গলায় বললেন, কী হচ্ছে? বুনোভাই বললেন, কিছু না মা, তুমি ঘুমাও।
মা মেজোভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, কী হয়েছে রে?
মেজোভাই মেঝেতে পড়ে গিয়েছিলেন। তার ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে। সেই অবস্থাতেই বললেন, কিছু হয় নি। তোমরা সবাই শুধু শুধু ভিড় করছ।
আমাদের শাদা বাড়ি
আমাদের বাড়িতে দুজন উকিল এসেছেন। মা তাঁদের সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলছেন। উকিলদের একজন স্ট্যাম্পে সঙ্গে এনেছেন। সম্ভবত বাড়ি নিয়ে কিছু হচ্ছে। মা কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কী সিদ্ধান্ত, আমরা কেউ জানি না।
বাড়িটা আজ কেন জানি আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। ধবধবে শাদা রঙের বাড়ি। একটু দূরে দাঁড়ালেই আকাশের ব্যাকগ্রাউন্ডে বাড়িটা চোখে পড়ে। মনে হয়, নীল আকাশে একখণ্ড ধবল মেঘ। আমাদের শাদা বাড়ি।