রহিমার মা
রহিমার মা কয়েক দিন ধরে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিচ্ছে। অনেক সময় নিয়ে ভাইয়ার ঘর ঝাঁট দিচ্ছে, ঘর মুছছে। ভাইয়া একদিন তাকে বলল, রহিমার মা, ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়ার জন্যে তোমার চেহারায় বেশ্যা ভাব চলে এসেছে। তোমাকে দেখাচ্ছে বেশ্যাদের মতো।
হতভম্ব রহিমার মা বলল, ভাইজান, এইটা কী কন?
যেটা সত্যি, সেটা বললাম। তুমি ঠোঁটে শুধু যে লিপস্টিক দিয়েছ তা না, গায়ে একগাদা সস্তা সেন্ট মেখেছ। সস্তা সেন্ট থেকে পচা বিষ্ঠার গন্ধ আসে। তোমার গা থেকে পচা বিষ্ঠার গন্ধ আসছে।
বিষ্ঠা কী?
বিষ্ঠা হচ্ছে গু। তুমি আমার ঘর থেকে বের হও। গুয়ের গন্ধে তুমি আমার ঘর গন্ধ করে ফেলছ।
ভাইয়ার কথা শুনে রহিমার মা সেদিন আর কোনো কাজকর্ম করল না। কলের পাশে বসে সারা বিকেল কাঁদল। পদ্মকে দেখলাম ঘটনা আগ্রহ নিয়ে লক্ষ করছে।
পদ্ম
পদ্ম যে পদ্মর মতোই সুন্দর তা যতই দিন যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কেন জোর করে তাকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, এখন তা স্পষ্ট। অতিরূপবতীদের আশপাশে থাকা অস্বস্তির। আমি অস্বস্তির মধ্যে আছি। তার সঙ্গে দুবার আমার কথা হয়েছে। প্রথমবার সে আমাকে কঠিন গলায় বলল, আপনি আমাকে নিয়ে যখন এ-বাড়িতে আসেন, তখন আমি জ্বরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম, না?
হুঁ।
সেই সুযোগে আপনি কি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন?
হুঁ।
আশ্চর্য! প্রথম সুযোগেই গায়ে হাত দিলেন?
তুমি সিট থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিলে। তোমাকে টেনে সিটে তুলতে হয়েছে। গায়ে হাত না দিয়ে সেটা করা সম্ভব ছিল না।
গায়ে হাত দেওয়ার একটা অজুহাতও বের করে ফেলেছেন? আমি লক্ষ করেছি প্রায়ই আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন। আরেকবার এ রকম দেখলে উলের কাঁটা দিয়ে চোখ গেলে দেব।
স্ত্রীর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা তো দোষের কিছু না।
স্ত্রী মানে? আরেকবার এই ধরনের রসিকতা করলে গলা টিপে মেরে ফেলব।
দ্বিতীয় দফায় তার সঙ্গে যে কথা হয় তা হলো—
আপনাদের ওই কাজের মেয়ে, রহিমার মা, তাকে দেখলাম আপনার ভাইয়ার ঘর থেকে বের হয়ে সারা বিকেল কলের পাড়ে বসে কেঁদেছে। ঘটনা কী?
রহিমার মা ভাইয়ার প্রেমে পড়েছে, এই হলো ঘটনা।
কাজের ঝির সঙ্গে আপনার ভাইয়ের প্রেম?
হুঁ। একপক্ষীয় প্রেম। ভাইয়া এখনো কোনো সাড়াশব্দ করছে না। তবে করতেও পারে। ভাইয়াকে বোঝা মুশকিল।
আপনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন এটা ঘটনাই না।
বড়লোকের মেয়ে যদি প্রেমে পড়তে পারে, তাহলে কাজের বুয়াও প্রেমে পড়তে পারে।
আমার গা ঘিনঘিন করছে।
তাহলে যাও, গোসল করে ফেলো। সাবান ডলা দিয়ে হেভি গোসল করলে গা ঘিনঘিন দূর হবে।
পদ্ম মেয়েটির বিষয়ে একটা কথা বলা বিশেষ প্রয়োজন। মেয়েটির স্লিপ ওয়াকিং সমস্যা আছে। এক রাতের কথা। একটা বা দুটা বাজে। ঘুম আসছে না বলে বাইরে বসে আছি। হঠাৎ দেখি দরজা খুলে পদ্ম বের হলো। তার চোখমুখ শক্ত, সে উঠানে দুটা চক্কর দিল। আমি ডাকলাম, এই পদ্ম, এই। সে ফিরে তাকাল না। আবার নিজের ঘরে ঢুকে গেল।
ভাইয়ার ছোট মা
এই মহিলার বিষয়ে প্রথম কথা হচ্ছে—ওনার গলার স্বর অস্বাভাবিক মিষ্টি। আমি এত মিষ্টি কণ্ঠস্বর আগে শুনিনি।
এমন মিষ্টি কণ্ঠস্বরের মহিলা, কিন্তু আচার-আচরণ কঠিন। তাঁর একমাত্র কাজ মেয়েকে চোখে-চোখে রাখা। পদ্ম যেখানে যাচ্ছে, উনি তার পেছনে পেছনে যাচ্ছেন।
কানায় কানায় পূর্ণ কলসির মতো তার অন্তর হিংসায় পূর্ণ। মহিলা ভাইয়ার রগট ধর্মে যোগ দিতে পারেন।
তাঁর সঙ্গে আমার এক দিনই কথা হয়েছে। তিনি আমাকে ঘরে ডেকে নিয়ে বলেছেন, তোমার বড় ভাইকে ডেকে বলবে, সে যেন আমাকে ছোট মা না ডাকে। মা-মা খেলার অর্থ আমি জানি।
আমি বললাম, কী অর্থ, বলুন?
আমাকে ভজানো। আমাকে ভজিয়ে আমার মেয়ের কাছে যাওয়া।
আমি সরল মুখ করে বললাম, অন্যের বউয়ের কাছে ভাইয়া যাবে না। এই সব ঝামেলা ভাইয়ার মধ্যে নেই।
অন্যের বউ মানে? তুমি কী বলছ?
পদ্মর বিয়ে হয়েছে আমার সঙ্গে। চার লাখ টাকা দেনমোহর। অর্ধেক উসুল।
তোমার ভাইয়ার মধ্যে যে ফাজলামি স্বভাব আছে, তা তোমার মধ্যে আছে। ভুলেও আমার সঙ্গে ফাজলামি করবে না। মুখ হাঁ করিয়ে মুখে এসিড ঢেলে দেব।
এসিড কোথায় পাবেন?
এসিড আছে আমার সঙ্গে। দেখতে চাও। দাঁড়াও, দেখাচ্ছি।
ভদ্রমহিলা ছুটে ঘরে ঢুকলেন, নীল রঙের একটা বোতল নিয়ে বের হলেন। বোতলের মুখ খুলে তরল কিছু একটা ঢালতেই বিজবিজ শব্দে উঠান পুড়তে লাগল। উঠান থেকে ধোঁয়া উঠল।
আমি কাণ্ড দেখে স্তম্ভিত। ‘ছোট মা’ না ডেকে তাঁকে ‘এসিড-মা’ ডাকা দরকার।
এসিড মাতা বললেন, পদ্ম স্যান্ডেল কিনবে। তুমি তার সঙ্গে যাও। আমার শরীর খারাপ, আমি যেতে পারছি না। আমার মেয়েকে আমি একা ছাড়ি না। নিয়ে যেতে পারবে?
পারব।
এক রিকশায় যাবে না। আলাদা রিকশায় যাবে।
আমি বললাম, আলাদা রিকশায় গেলে চোখের আড়াল হবার সম্ভাবনা থাকে, এক রিকশাতেই যাই। আমি পাদানিতে বসলাম, পদ্ম সিটে বসল।
পদ্ম আমার কথায় শব্দ করে হেসে ফেলেছে। তার মায়ের কঠিন দৃষ্টির সামনে তার হাসি দপ করে নিভে গেল।
ড্রাইভার ইসমাইল। তার সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারছি না। এই কদিন সে কাকরাইল মসজিদে চিল্লায় গিয়েছিল। সাত দিন পার করে জ্বর নিয়ে ফিরেছে। রহিমার মা তার মাথায় পানি ঢালছে, স্যুপ বানিয়ে খাওয়াচ্ছে। রহিমার মায়ের কাছেই শুনলাম, ড্রাইভার চিল্লা থেকে একটা জিন নিয়ে ফিরেছে। জিনের কারণেই তার প্রবল জ্বর। জিনের নাম মফি। বয়স তিন হাজার বছর।
চরিত্র-পরিচিতিমূলক লেখা শেষ হয়েছে। সবার গতি ও অবস্থান যতটুকু সম্ভব বলা হলো। এখন মূল গল্পে যাওয়া যেতে পারে।