গ্রামের লোক হই হই করে উঠল, বলল, এই মেয়েতো সত্যি কথাই বলেছে। চিঠি তো পড়েই নাই কেমন করে জানে এইখানে কী লেখা? কেমন করে জানে?
আরেকজন বলল, নিজে লিখেছে জানবে না কেন?
আরেকজন বলল, লেখাপড়া জানে কিনা দেখো। মনে হয় লিখতেও জানে না পড়তেও জানে না।
মানুষজন এতো জোরে হই চই করতে থাকে যে আজহার আলী ভয় পেয়ে যায়। মাস্টার সাহেব হাত তুলে সবাইকে শান্ত করলেন, তারপরে মেঘ স্বরে বললেন, এক্ষুণি বলেন, ছেলে দুইটা কোথায়?
আজহার আলী বলল, আমি জানি না।
তাহলে কে জানে?
গ্রামের একজন বলল, এর দুইজন সাঙ্গাত আছে মতি আর খলিল, তাগো ডাকেন। তারা নিশ্চয়ই জানে।
মাস্টার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, হ্যাঁ। মতি আর খলিল কই?
আজহার আলী বলল, মতি আর খলিল কই আমি কেমন করে জানুম। হেরা থাকে তাদের মতন।
আজহার আলী কথা শেষ না করতেই ভীড় ঠেলে মতি আর খলিল এগিয়ে আসে। গলা উঁচিয়ে মতি আজহার আলীকে জিজ্ঞেস করল হুজুর কুনো সমস্যা? এইখানে ফালতু মানুষের ভীড় কিসের লাইগা?
মতির বেয়াদপের মতো কথা শুনে সবাই আরো রেগে ওঠে। একজন হুংকার দিয়ে কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল তখন হঠাৎ আরেকজন হি হি করে হেসে উঠে বলে, আরে মইত্যা তুই কী চুরি কইরা ধরা পড়ছস নাকী? খালি চুলের গোছা কাটছে নাকী ধইরা মাইরও দিছে?
মতি চোখ পাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই তিতু চিৎকার করে বলল, চিউয়িংগাম! চিউয়িংগাম! মিঠুন নিশ্চয়ই এর মাথায় চিউয়িংগাম লাগিয়ে দিয়েছে! মিঠুন সব সময়ে এই ভাবে মাথায় চিউয়িংগাম লাগিয়ে দেয়।
সাথে সাথে রিতু আর টিয়াও চিৎকার করতে লাগল, নিশ্চয়ই এরা মিঠুনকে ধরে নিয়ে গেছে। মিঠুন তখন চিউয়িংগাম খাচ্ছিল, এর মাথায় চিউয়িংগাম লাগিয়েছে! এরা মিঠুন আর টিটনকে ধরেছে!
মিঠুন আর টিটনকে ধরার মাঝে মাথার এক খাবলা চুল না থাকার কী সম্পর্ক কেউ ভালো করে বুঝতে পারল না কিছু সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামালো না। গ্রামের লোক ঝাঁপিয়ে পড়ে মতি আর খলিলকে ধরে ফেলল।
এরপর কী হতো কেউ জানে না, কিন্তু পৃথিবীর সপ্তমাশ্চর্যের এক আশ্চর্য ঘটে যাওয়ার কারণে সবাই থেমে গেল। সবাই অবাক হয়ে দেখল মিঠুন আর টিটন হেলতে দুলতে আসছে। মিঠুনের ঘাড়ে একটা বন্দুক। তাদের বয়সী একটা ছেলে পথ দেখিয়ে মিঠুন আর টিটনকে আজহার আলীর বাড়িতে আনছে।
আজহার আলী মিঠুনের ঘাড়ের বন্দুকটা চিনতে পারল এটা তার বেআইনী অস্ত্র। তাই বাড়িতে রাখে না, তার মহাজনী নৌকায় ছইয়ের নিচে লুকানো থাকে। এই ছেলে দুইটা যেহেতু বন্দুকটা খুঁজে পেয়েছে তার সাথে আরো অনেক কিছু নিশ্চয়ই খুঁজে পেয়েছে। সর্বনাশ!
আজহার আলী ঘামতে থাকে। গ্রামের মানুষজন যে হঠাৎ করে ভয়ংকর উত্তেজনায় চিৎকার শুরু করেছে সেটাও সে ভালো করে শুনতে পায় না।
হঠাৎ করে আজহার আলীর বাথরুম পেয়ে যায়।
টিটন এবং মিঠুন তার মহাজনী নৌকায় কী করে এসেছে সেটা জানলে সে নিশ্চিত ভাবেই বাথরুম করেই ফেলতো।
১১. যখন এ্যাডভেঞ্চারের গল্প
১১. যখন মিঠুনের কাছ থেকে সবাই তাদের এ্যাডভেঞ্চারের গল্প শুনেছে।
মাস্টার সাহেবের পুকুর ঘাটে সবাই বসেছে। মাস্টার সাহেব রীতিমতো জোর করে রিতু এবং তার ভাইবোনদের তার নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। মাস্টার সাহেবের স্ত্রী নিজে অনেক কিছু রান্না করেছেন, সবাই সেগুলো হই চই করে খেয়েছে (মাংস অনেক ঝাল ছিল কিন্তু বাচ্চারা সেটা কাউকে বুঝতে দেয় নাই।) খাওয়ার পর সবাই পুকুরের ঘাটে এসে বসেছে। টিটন এবং মিঠুন তারা কীভাবে পালিয়ে এসেছে সবার কাছে সেই গল্প করছে। গল্পটা অবশ্যি এর মাঝে কয়েকবার করা হয়ে গেছে কিন্তু প্রত্যেকবার যেহেতু গল্পের ডালপালা ছড়াতে থাকে তাই নূতন করে শুনতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সবাই আগ্রহ নিয়ে শুনছে। পুকুরঘাটে মিঠুন এবং টিটন যেভাবে ঘটনাটা বর্ণনা দিয়েছে সেটার বিশ্বাসযোগ্য অংশটা এরকম :
মিঠুনকে ইব্রাহীম ডেকে পাঠিয়েছে বলে একটা মানুষ প্রথমে তাদের কাছে এসেছিল, সেই মানুষটা বুঝতে পারে নাই রিতু মিঠুনের সাথে টিটনকেও পাঠিয়ে দেবে। দুইজন হওয়ার কারণে মানুষগুলোর একটু যন্ত্রণা বেশি হয়েছে। তাদেরকে জঙ্গলের ভিতরে ঠেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে দুইজন মানুষ তাদেরকে ধরে ফেলেছে। তারা যেন চিৎকার দিতে না পারে সেইজন্য মানুষগুলো প্রথমেই তাদের মুখ চেপে ধরেছে টিটন ভদ্র ছেলে কিছু করে নাই, কিন্তু মিঠুন মুখ থেকে চিউয়িংগামটা বের করে মানুষটার হাত কামড়ে তার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। মিঠুনকে চিৎকার করতে দেয় নাই কিন্তু মানুষটা নিজে যন্ত্রণায় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছে। মিঠুন তাকে কিল ঘুষি মেরেছে, খামচি দিয়ে চোখে গুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। অসুবিধা জায়গায় লাথি মেরেছে এক কথায় মানুষটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই না, হুটোপুটি করার সময় তার মাথার চুলে চিউয়িংগাম লাগিয়ে দিয়েছে।
মিঠুন একটুও ভয় পায় নাই এবং সে খুব ভালো করে জানে সে তাদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়ে দিবে। শুধু টিটুনের বুড়ো আঙ্গুল রামদা দিয়ে কোপ দিয়ে আলাদা করে দেবে বলার পর সে একটু শান্ত হয়েছে। মিঠুন বলেছে বুড়ো আঙ্গুল খুবই জরুরি আঙুল, এই আঙুল না থাকলে কিছু করা যায় না, সেইজন্য সে ছেড়ে দিয়েছে। অন্য কোনো আঙুলের ভয় দেখালে সে শান্ত হতো না। (গল্পের এই অংশে টিটন খুবই বিরক্ত হয়েছে যে মিঠুন তার অন্য যে কোনো আঙুল কেটে ফেলে দেওয়া নিয়ে মোটেও চিন্তিত ছিল না।)