রিতু আরো কিছুক্ষণ বসে থেকে বের হয়ে এল, রাণী জিজ্ঞেস করল, রাজি করাতে পেরেছিস?
নাহ।
রাণী নিজের চুল ঘামচে ধরে বলল, এই ছেলের যন্ত্রণায় আমার জীবনটা একদিন শেষ হবে।
রিতু কিছু বলল না, বলার কিছু নাই, কারণ কথাটা সত্যি। তিতু হঠাৎ করে ফিসফিস করে বলল, আপু।
কী হলো।
মনে হয় আমিও অনশন করে ফেলি।
রিতু অবাক হয়ে বলল, কি বললি?
তিতু বলল, আমিও অনশন করে ফেলব।
রিতু চোখ কপালে তুলে বলল, তুইও অনশন করে ফেলবি?
হ্যাঁ।
রাণী চোখ বড় বড় করে তিতুর দিকে তাকালো বলল, তুইও অনশন করবি?
হ্যাঁ মামি। মিঠুন একলা একলা অনশন করছে, দেখে খারাপ লাগছে।
দেখে খারাপ লাগছে?
হ্যাঁ মামি। যাই মিঠুনকে বলে আসি।
বলে তিতু মিঠুনের ঘরে গেল, মিঠুনের কাছে দাঁড়িয়ে বলল, এই মিঠুন আমিও তোর সাথে অনশন করব।
মিঠুন লাফ দিয়ে উঠে বসল, চোখ বড় বড় করে বলল, সত্যি?
সত্যি।
আমরণ অনশন?
হ্যাঁ। আমরণ।
মিঠুন হাত ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, ইয়েস! তারপর একটু সরে বিছানার জায়গা করে দিয়ে বলল, এইখানে শুয়ে পড় তিতু ভাইয়া।
শুয়ে পড়ব?
হ্যাঁ, অনশন করলে শুয়ে থাকতে হয়।
তিতু মিঠুনের পাশে শুয়ে পড়ল। মিঠুন গম্ভীর গলায় বলল, অনশন করলে শুধু পানি খাওয়া যায়। আমি পানি এনে রেখেছি। তোমার পানি তেষ্টা পেলে বল।
ঠিক আছে।
একটু পরে রাণী আর রিতু এসে দেখল, বিছানায় মিঠুন আর তিতু গম্ভীর হয়ে শুয়ে আছে। চাদরটা তাদের বুক পর্যন্ত টেনে রেখেছে। রাণী হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না কিন্তু রিতু হাসি হাসি মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে রইল।
.
কিছুক্ষণের মাঝেই খবরটা নিচের তলায় টিটন আর টিয়ার কাছে পৌঁছে গেল। তারা মাত্র নাস্তা করতে বসেছিল, নাস্তা না করেই তারা তিতু এবং মিঠুনকে দেখতে গেল। তাদেরকে দেখে নিচে গিয়ে টিয়া তার আম্মু সীমাকে বলল, আম্মু মিঠুন আর তিতু ভাইয়া অনশন করছে। আমরণ অনশন।
এই বাসায় কেউ কোনো কিছু শুনে অবাক হয় না তাই সীমা বেশি অবাক হলো না। জিজ্ঞেস করল, কেন?
মুক্তিযোদ্ধার ইন্টারভিউ নিতে দেয় নাই সেই জন্যে।
তাই নাকি?
টিয়া মাথা নাড়ল, বলল, আমিও অনশন করব আম্মু।
সীমা শীতল গলায় বলল, তুই কী করবি?
অনশন। অনশন ধর্মঘট।
সীমা কোনো কথা না বলে কিছুক্ষণ টিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, কতক্ষণ করবি?।
যতক্ষণ দাবি মানা না হয়।
সীমা আবার কোনো কথা না বলে কিছুক্ষণ টিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, আমাকে রাগাবি না। সকালে উঠেই একটা ঢং।
টিয়া বলল, আম্মু আমি তোমাকে রাগাতে চাইছি না। কিন্তু মিঠুন আর তিতু ভাইয়া যদি অনশন করে তাহলে আমাদের করা উচিৎ।
কেন?
সব সময় সবকিছু এক সাথে করতে হয়।
সীমা টিটনের দিকে তাকিয়ে বলল, আর তুই? তুই অনশন করবি না?
টিটন মাথা চুলকালো, বলল, সবাই যদি করে ফেলে তখন তো আমাকেও করতে হবে।
করতে চাইলে এখনই বলে ফেল, আমি টেবিল থেকে নাস্তা তুলে ফেলি।
টিটন কোনো কথা না বলে আবার মাথা চুলকালো। তিতু আর সে সমবয়সী। একজন অনশন করছে আরেকজন করছে না, ব্যাপারটা কেমন দেখায়?
সীমা মুখ শক্ত করে বলল, তোরা যদি মনে করে থাকিস আমি তোদের খাওয়ার জন্য সাধাসাধি করব তাহলে কিন্তু অনেক ভুল করছিস। আমি কিন্তু একবারও সাধাসাধি করব না। যদি খাওয়ার ইচ্ছা করে নিজেরা খাবার রেডি করে খেতে হবে। বুঝেছিস?
টিটন আর টিটু এক সাথে মাথা নাড়ল, বলল, বুঝেছি।
ঠিক তখন মাসুদ বাথরুম থেকে বের হয়ে একটা তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে ডাইনিং টেবিলে এসে বসল। আশেপাশে কী হচ্ছে সে এখনো কিছু জানে না। একটা প্লেট নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল, সবাই কোথায়? নাস্তা করবে না?
সীমা পাথরের মতো মুখ করে বলল, না। তোমার ছেলে আর মেয়ে অনশন ধর্মঘট করছে।
মাসুদ মাথা ঘুরিয়ে তাকাল, বলল, অনশন ধর্মঘট?
হ্যাঁ।
কেন?
সীমা বলল, সেটা তুমি তোমার ছেলে মেয়ের কাছ থেকে শুনে নাও।
মাসুদ টিটন আর টিয়ার দিকে তাকালো। টিটন ইতস্তত করে বলল, আসলে মিঠুন আর তিতু করছে তো, এখন আমরাও যদি না করি সেটা কেমন দেখাবে।
মিঠুন আর তিতু কী জন্যে অনশন করছে?
ঐ যে কাল রাতের ব্যাপারটা। আমরা যে সবাই যেতে চাচ্ছিলাম একজন মুক্তিযোদ্ধার ইন্টারভিউ নিতে।
মাসুদ এবারে বুঝতে পারল। বলল, ও আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি।
মাসুদকে দেখে মনে হলো বিষয়টা বুঝতে পারার কারণে তার অনেক আরাম হয়েছে। সে মুখ কুঁচালো করে তার প্লেটে রুটি এবং সবজি নিল, তারপর খেতে শুরু করল।
সীমা মুখ শক্ত করে বলল, তুমি কিছু বলবে না?
কী আর বলব? মাসুদ ঘুরে টিটন আর টিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, শুধু কী অনশন নাকি আরো কোনো কর্মসূচি আছে?
টিয়া মাথা নাড়ল, বলল, না নাই।
মানব বন্ধন, গাড়ি ভাংচুর-
না। নাই।
ঠিক আছে। বলে মাসুদ আবার খেতে শুরু করে।
টিটন আর টিয়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে নিজেদের ঘরে চলে গেল। সীমা মুখ শক্ত করে বলল, তুমি লাই দিয়ে এরকম বানিয়েছ।
আমি? আমি কখন লাই দিলাম?
এই যে এখন দিলে।
এখন?
হ্যাঁ, একটা ধমক দেবে তা না করে ঠাট্টা করলে।
মাসুদ হাসি হাসি মুখে বলল, বাচ্চা কাচ্চারা ছেলেমানুষী করছে। করতে দাও। যখন খিদে লাগবে তখন নিজেই এসে খেয়ে যাবে।
সীমা কঠিন মুখে দাঁড়িয়ে রইল।
.
কিছুক্ষণের মাঝেই উপরে খবর পৌঁছে গেল যে টিটন এবং টিয়াও অনশন শুরু করেছে। বাকী আছে শুধু রিতু। সে ঘোষণা দিয়ে অনশন করল না সত্যি কিন্তু কিছু খেল না। মিলি যখন জিজ্ঞেস করল, রিতু বলল, সবাই না খেয়ে আছে, আমি কেমন করে খাই?