মুশতাক আহমেদ বললেন, কিন্তু যদি তোমাদের খবর দিতে হয় কেমন করে দিব?
সবাই একজন আরেকজনের দিকে তাকালো, টিটন বলল, আপনি একটা এস.এম.এস করে বলবেন, আর্ট ক্লাশ ক্যান্সেল আমরা তাহলে বুঝে নিব।
সবাই মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, তাহলেই আমরা বুঝে যাব।
রিতু বলল, তখন আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ করব।
মুশতাক আহমেদ বললেন, ঠিক আছে। তারপর বিশ একুশ বছরের ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললেন, রঞ্জু তুমি মনে রেখো। যদি পজিটিভ কোনো খবর পাই তাহলে একটা এস.এম.এস পাঠাতে হবে, আর্ট ক্লাস ক্যানসেলড!
সবাই যখন বিদায় নিয়ে বের হয়ে আসছে তখন টিয়া হঠাৎ করে মুশতাক আহমেদের কাছে গিয়ে বলল, স্যার। একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
কর।
যুদ্ধের শুরু যুদ্ধের শেষ বইটা কী আপনি লিখেছেন?
মুশতাক আহমেদ একটু অবাক হয়ে টিয়ার দিকে তাকালেন, তারপর বললেন, হ্যাঁ। আমি লিখেছি। তুমি কেমন করে বুঝলে?
আমি বইটা পড়েছি। পড়ে আমি-আমি-
তুমি কী?
আমি অনেক কেঁদেছি। খুব কষ্টের বই।
মুশতাক আহমেদ তার হুইল চেয়ারটা চালিয়ে টিয়ার কাছে এলেন। এসে টিয়ার মাথায় হাত রেখে বললেন, তুমি এত ছোট মেয়ে এত মোটা বই পড়ে ফেলেছ?
তিতু বলল, আমাদের টিয়া অনেক বই পড়ে।
টিয়া বলল, কিন্তু এই বইটা বেশি কষ্টের।
মুশতাক আহমেদ বললেন, বইটা লিখতেও আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। লিখার সময় আমিও কেঁদেছি।
টিয়া বলল, এর পরের বার আমি বইটা নিয়ে আসব, আপনি একটা অটোগ্রাফ দিয়ে দিবেন?
অবশ্যই। অবশ্যই দিব। বাসায় ফিরে আসার সময় কারোরই ফুচকা খাওয়ার কথা মনে পড়ল না।
০৫. যখন সমস্যার শুরু
ছয়দিন পর সকাল বেলা রিতু তিতু তার আম্মু আব্দুর সাথে নাস্তা করছে তখন তার আব্ব তার টেলিফোনটা দেখতে দেখতে হঠাৎ থেমে গিয়ে বললেন, রিতু তোর জন্যে একটা এস.এম.এস।
রিতু খাওয়া থামিয়ে তার আব্দুর দিকে তাকালো, আমার জন্যে?
হ্যাঁ, মুশতাক নামে একজন লিখেছে আর্ট ক্লাস ক্যান্সেলড।
রিতু এবং তিতু এক সাথে গগন বিদারী চিৎকার করে উঠল, আর্ট ক্লাশ ক্যান্সেলড!
রিতুর আম্মু আব্ব খুবই অবাক হলেন। আর্ট ক্লাশ বাতিল হওয়ার জন্যে তারা আগে কখনো কাউকে এত উত্তেজিত হতে দেখেননি। জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো?
রিতু লাফ দিয়ে তার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে, আর্ট ক্লাশ ক্যান্সেলড, আর্ট ক্লাশ ক্যান্সেলড বলে চিৎকার করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল, আম্মু জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাচ্ছিস?
অন্যদের বলে আসি। বলে রিতু ঘর থেকে বের হয়ে গেল, পিছন পিছন তিতু।
আম্মু আর আব্ব কিছুই বুঝতে পারলেন না। শুধু যে রিতু তিতুর আম্মু আব্ব কিছু বুঝতে পারলেন না তা নয় রাহেলা খাতুনের জন্য ছেলে মেয়েরাও কিছু বুঝতে পারলেন না, শুধু অবাক হয়ে দেখলেন আর্ট ক্লাস বাতিল হয়ে গেছে শুনে বাসার সবগুলো বাচ্চা চিৎকার করে ছোটাছুটি করতে লাগল। তারা কারণটা কী জানার জন্যে চেষ্টা করতে পারত কিন্তু এই বাসার এতরকম বিচিত্র ঘটনা ঘটে যে এটাকে সে রকম একটা বিচিত্র ঘটনা বোঝার কোনো কারণ নাই।
.
বিকেল বেলা আবার পাঁচ ভাই বোনকে রাহেলা খাতুনের মেয়ে মিলির কাছে দেখা গেল। রিতু বলল, আম্মুআব্দুর বাসায় আসতে দেরী হবে সেই জন্যে তোমার কাছে এসেছি।
মিলি পরীক্ষার খাতা দেখছিল, চশমাটা ঠেলে নাকের উপরে তুলে বলল, কী ব্যাপার? এক সাথে একেবারে পাঁচজন হাজির?
মিঠুন বলল, থ্যাংকু।
কেন? মিলি জানতে চাইল, থ্যাংকু কেন?
তুমি আমাদের পঞ্চ তাণ্ডব বল নাই সেই জন্যে। আমরা যখন বড় চাচ্চুর কাছে গিয়েছিলাম, বড় চাচ্চু আমাদেরকে পঞ্চ তাণ্ডব বলেছিল।
নিশ্চয়ই টাকা পয়সার জন্যে এসেছিস। কত চাই এবং কেন চাই? টিটন বলল, কত চাই বলা যাবে কিন্তু কেন চাই বলা যাবে না।
মিলি বলল, কেন টাকা দিতে হবে না জানা পর্যন্ত আমি টাকা পয়সা দিতে রাজী না।
রিতু বলল, ঠিক আছে, রিকশা ভাড়া।
মিঠুন বলল, আর ফুচকা।
রিকশা করে কই যাবি?
সেটা বলা যাবে না।
গন্তব্য না জানা পর্যন্ত রিকশা ভাড়া দেওয়া যাবে না।
তিতু বলল, আম্মু, আমরা খুবই ভালো একটা জায়গায় যাব, তুমি যদি শোনো তাহলে অবাক হয়ে যাবে।
গুন্ডা। আমি শুনতে চাই, আমি অবাক হতে চাই।
কিন্তু এটা এখন সিষ্ট্রেট। আমরা কাউকে বলছি না। বড় মামা না শুনেই রিকশা ভাড়া দিয়েছিল দিয়েছিল না?
সবাই জোরে জোরে মাথা নাড়ল। মিলি তবুও নরম হলো না, বলল ভাইজান বোকা সোকা মানুষ, সবকিছু বিশ্বাস করে। আমি এতো বোকা না।
রিতু বলল, আম্মু আমরা এক সময় তোমাদের সবাইকে বলব। তখন যদি তোমাদের মনে হয় আমরা ভুল জায়গায় গিয়েছি তখন তুমি তোমার টাকা ফেরৎ চাইতে পার। কিংবা আমাদেরকে যা ইচ্ছা শাস্তি দিতে পারবে।
মিঠুন বলল, ফাঁসি দিতে পারবে।
মিলি বলল, শুধু আমাকে বল, জায়গাটা কী সেফ?
একশ ভাগ সেফ। আমাদের প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আমাকে এই জায়গাটার কথা বলেছেন।
মিলি এবারে নরম হলো। তারপর জোর করে মুখ শক্ত করে বলল, অন্ধকার হওয়ার আগে ফিরে আসতে হবে। যদি এক মিনিট দেরি হয় তাহলে এর পর থেকে সব সিক্রেট প্রজেক্ট বন্ধ।
ঠিক আছে আম্মু। রিতুর কথার সাথে সাথে সবাই জোরে জোরে মাথা নাড়তে লাগল।
বাসা থেকে বের হওয়ার সময়, টিয়া একটা বই নিয়ে বের হলো, মিলা দেখলো, বইটার নাম যুদ্ধের শুরু যুদ্ধের শেষ। টিয়ার হাতে সব সময়েই কোনো-না-কোনো বই থাকে, কিন্তু এত মোটা একটা বই নিয়ে বের হতে দেখে মিলা কিছু একটা আন্দাজ করার চেষ্টা করল, খুব একটা লাভ হলো না।