২. ডায়মন্ডের নেকলেস।
৩. ফটো তোলা যায় এ রকম মোবাইল ফোন।
৪. বই।
৫. সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে যাওয়া।
৬. ষাটটা কলম।
৭. ষাটটা সন্দেশ না হলে চমচম।
৮. দামি রেস্টুরেন্টে গিয়ে সবাইকে নিয়ে ডিনার।
৯. জন্মদিন উপলক্ষে একটা ওয়াল ম্যাগাজিন।
১০. জম্মদিন উপলক্ষে একটা নাটক লিখে নিজেরা নিজেরা অভিনয় করে দেখানো।
১১. জামদানি শাড়ি।
১২. জন্মদিন উপলক্ষে মিঠুনের ষাট দিন কোনো দুষ্টুমি না করা।
১৩. জন্মদিন উপলক্ষে সবাই মিলে ষাটটা রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্ত করা।
মিটিং শেষে ঠিক করা হলো তারা সবাই মিলে এটা নিয়ে আরো চিন্তা করবে, নতুন নতুন আইডিয়া বের করার চেষ্টা করবে, তার মাঝে যেটা সবচেয়ে ভালো হবে সেটাই হবে মায়ের কিংবা নানির কিংবা দাদির ষাট নম্বর জন্মদিনের উপহার।
.
রাত্রিবেলা তিতু বিছানায় শুয়ে শুয়ে রাহেলা খাতুনের জন্মদিনে তাঁকে কী দেওয়া যায় সেটা চিন্তা করছিল। চিন্তা করতে করতে সে প্রায় ঘুমিয়েই গিয়েছিল হঠাৎ করে তার মাথায় ঝিলিক করে একটা চিন্তা খেলে গেল। সে লাফ দিয়ে উঠে বসল, রাহেলা খাতুনের জন্মদিনে তাকে সবচেয়ে ভালো কী উপহার দেওয়া যায় সেটা তার মাথায় এসেছে। তাদের নানির জন্যে এর চাইতে ভালো আর কোনো গিফট হতে পারে না। সে প্রায় চিৎকার করে উঠল, আপু?
পাশের বিছানায় রিতু শুয়েছিল সে প্রায়ে ঘুমিয়েই গিয়েছিল, চমকে উঠে বলল, কী হয়েছে?
পেয়েছি!
কী পেয়েছিস?
নানিকে জন্মদিনে আমরা কী গিফট দিতে পারি!
কী?
এখন বলব না।
কখন বলবি?
সবাইকে এক সাথে বলব।
এক সাথে বলবি?
তিতু মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। নানি যে কী খুশি হবে চিন্তাও করতে পারবে না।
কী জিনিস, বলে ফেল।
উঁহু। সবাইকে এক সাথে বলব।
রিতু একটু রেগে বলল, যদি আমাকে এখন বলবি না তাহলে ঘুম থেকে ডেকে তুললি কেন?
তিতু কাচুমাচু হয়ে বলল, সরি আপু সরি। বুঝতে পারি নাই তুমি ঘুমিয়ে গেছ। রিতু নরম গলায় বলল, ঠিক আছে। ঘুমা এখন। রিতু নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করল, তিতুর ওপর রাগ করা খুবই কঠিন!
০৪. যখন অসাধারণ আইডিয়া
চার তলার ছাদে অর্ধসমাপ্ত ঘরটিতে আজকে আবার মিটিং বসেছে। এই মিটিংয়ে তিতু সবাইকে বলবে রাহেলা খাতুনের জন্য সবচেয়ে ভালো জন্মদিনের উপহার কী হতে পারে। শোনার জন্য সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে, এমন কী টিয়া পর্যন্ত তার বই পড়া বন্ধ করে তিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
তিতু সবার দিকে তাকিয়ে একটু লাজুক মুখে বলল, আমি চিন্তা করে বের করেছি মাকে- মানে নানিকে জন্মদিনে কী গিফট দিলে নানি সবচেয়ে বেশি খুশি হবে।
রিতু বলল, বলে ফেল, আমরা শুনি।
গিফটটা একটু কঠিন কিন্তু আমরা নানির জন্যে একটু কঠিন কাজ তো করতেই পারি। পারি না?
টিটল বলল, হ্যাঁ পারি। এখন বল সেটা কী জিনিস।
এটা কোনো জিনিস না, এটা একটা কাজ।
টিয়া বলল, কী কাজ। বল তিতু ভাইয়া।
বলছি। তিতু একটা বড় শ্বাস নিয়ে বলল, আমরা তো সবাই নানির সাথে কথা বলেছি। বল দেখি নানি সবচেয়ে বেশি কী চায়?
রিতু বলল, তুই যেহেতু চিন্তা করে বের করেছিস তুইই বল।
নানি সবচেয়ে বেশি কার কথা বলে?
মিঠুন বলল, মানে হয় আমার কথা।
তিতু মাথা নাড়ল, বলল, উঁহু। তোর কথা না। অন্য আরেক জনের কথা।
সবাই একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকালো। টিটন একটু অধৈর্য হয়ে বলল, এতো ধানাই পানাই না করে তুই সোজাসুজি বলে ফেল দেখি।
তিতু বলল, নানি সবচেয়ে বেশি বলে নানার কথা। বলে কী না? সবাই একটু থতমত খেয়ে যায়। কেউ ভাবেনি তিতু আসাদ রহমানের কথা বলবে। তিতু এখন কী বলবে কেউ অনুমান করতে পারে না কিন্তু সবাই একটু ইতস্তত করে মাথা নাড়ল।
তিতু বলল, নানি সব সময় বলে, ইশরে মানুষটা মাটি পেল কী না সেইটাই জানলাম না। যদি কোথায় মাটি দিয়েছে জানতাম তাহলে সেইখানে মাথার কাছে বসে কোরান শরীফটা খতম দিতাম। বলে কী না?
সবাই মাথা নাড়ল, এমন কী মিঠুন পর্যন্ত গম্ভীর মুখে মাথা নাড়ল।
তিতু বলল, সেইজন্যে আমি মনে করি নানির জন্মদিনের জন্যে আমরা নানার কবরটা কোথায় সেটা খুঁজে বের করি। তারপর নানিকে সেইখানে নিয়ে যাই।
সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। তারপর সবাই অনেকক্ষণ চুপ করে রইল। প্রথম কথা বলল রিতু, কিন্তু, কিন্তু আমরা তো কিছুই জানি না। ত্রিশ-বত্রিশ বছর আগে কোথায় নানা যুদ্ধ করেছে- কোথায় মারা গেছে।
তিতু বলল, সেইটা ঠিক।
তাহলে আমরা কীভাবে তার কবর খুঁজে বের করব?
তিতু মাথা নাড়ল, সেইটা আমি জানি না।
তাহলে?
তাহলে কী?
তাহলে মানে- তাহলে আমরা কীভাবে খুঁজে বের করব?
তিতু বলল, সেইটা চিন্তা করে ঠিক কর।
মিঠুন হঠাৎ করে হাসি হাসি মুখে বলল, একটা খুব সোজা উপায় আছে।
সবাই অবাক হয়ে মিঠুনের দিকে তাকালো, সোজা উপায়?
হ্যাঁ। আমরা এমনি এমনি একটা জায়গায় নিয়ে দাদিরে বলব, এইটা দাদার কবর-দাদি কোনোদিন টের পাবে না!
টিটন যথেষ্ট জোরে মিঠুনের মাথায় একটা চাটি মেরে বলল, চুপ কর ছাগল কোথাকার।
মিঠুন মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, আমি কী ভুল কিছু বলেছি? দাদি কেমন করে বুঝবে এইটা আসল না ভূয়া?
টিটন আরেকবার চাটি মেরে বলল, চুপ কর গাধা কোথাকার।
মাথায় চাটি মেরে একটা একটা করে প্রাণীর নাম বলতে থাকলে অনেকক্ষণ ধরে বলা যাবে। মিঠুন মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চুপ করে গেল।