এখানে কেউ বক্তৃতা দিচ্ছে না আর কাউকে স্লোগানও দিতে হবে না।
টিটন বলল, আপু ছেড়ে দাও। টেস্টির সাথে কথা বলে তুমি পারবে না। শুধু শুধু সময় নষ্ট।
মিঠুন বলল, টিটন ভাইয়া, ভালো হবে না কিন্তু। আমাকে টেস্টি ডাকবে না। মিঠুনের চোখে মুখে কিন্তু ভালো না হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না, বরং টেস্টি ডাক শুনে তার চোখ মুখ আনন্দে ঝলমল করে ওঠে।
টিয়া বলল, কেন? তোকে টেস্টি ডাকলে সমস্যা কী? তোর জন্ম হয়েছে টেস্টটিউবের ভিতরে, তোকে টেস্টি ডাকব না তো কী ডাকব? যাদের জন্ম টেস্টটিউবের ভিতরে তারা সবাই হচ্ছে টেস্টি।
মিঠুনের চোখ কৌতূহলে চক চক কার ওঠে, সত্যি সত্যি আমার জন্ম হয়েছিল টেস্টটিউবে? তুমি দেখেছিলে?
দেখব না কেন? আমরা সবাই দেখেছিলাম। ছোট চাচি সিঙ্গাপুর থেকে তোকে এনেছেন। ছোট টেস্টটিউবের ভেতর পানি সেইখানে তুই ব্যাঙাচির মতো সাঁতার কাটছিস।
আর কী করছিলাম টিয়া আপু?
টেস্টটিউবের ভিতরে মিঠুন আরো কী কী দুষ্টুমি করেছিল টিয়া তার বর্ণনা দিতে যাচ্ছিল কিন্তু রিতু দুধের কৌটায় চামুচ দিয়ে ঘটাং করে একটা বাড়ি দিয়ে তাদের থামিয়ে দিল, ধমক দিয়ে বলল, তোরা থামবি? একটা কাজের কথা নিয়ে আলাপ করছি, তার মাঝে সারাক্ষণ শুধু ভ্যাদর ভ্যাদর।
রিতুর ধমক খেয়ে সবাই একটু শান্ত হয়ে নড়ে চড়ে বসে, মিঠুন আরেকটা শ্লোগান দিতে গিয়ে থেমে গেল। রিতু বলল, একটু আগে টিটন ঠিকই বলেছে, সে আমাদের বাসার মানুষগুলো একটু অন্যরকম।
মিঠুন জানতে চাইল, সেটা কী ভালো বা খারাপ?
কোনো কোনো সময় ভালো, কোনো কোনো সময় খারাপ। যেমন মনে কর আমার যখন পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ করতে হবে তখন সেখানে আমার ঠিকানা লিখতে হবে। সেই ঠিকানায় যদি বাসায় নাম লিখি খা খা খা বক্কিলারে খা তাহলে সবাই নিশ্চয়ই ভাববে আমি পাগল।
মিঠুন ছাড়া অন্য সবাই মাথা নাড়ল। মিঠুন জিজ্ঞেস করল, কেন? পাগল কেন ভাববে?
কেউ তার প্রশ্নর উত্তর দিল না। তার কারণ উত্তর দেওয়ার কিছু নেই। রিতু বলল, ভালোই হলো আমি আজকে যে জন্যে মিটিং ডেকেছি সেটা নিয়ে কথা বলার আগে এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয়ে গেল। আমরা সবাই স্বীকার করে নিলাম আমাদের বাসাটা হচ্ছে অন্য রকম। সবার থেকে আলাদা।
টিয়া মাথা নাড়ল, ভালো না খারাপ জানি না, কিন্তু অবশ্যই আলাদা।
হ্যাঁ, অবশ্যই আলাদা। কাজেই আমরা যেটাই করতে চাই সেটা হতে হবে আলাদা। সেটা হতে হবে আজিব!
আজিব বলে কোনো শব্দ নেই কিন্তু কেউ সেটা রিতুকে মনে করিয়ে দিত না। তিতু জিজ্ঞেস করল, আমরা কী করতে চাই আপু?
বলছি। সেটা বলার জন্যেই এই মিটিং ডেকেছি।
সবাই এবার নড়ে চড়ে বসল। মিঠুন যে মিঠুন সেও নড়াচড়া বন্ধ করে এই প্রথম শান্ত হয়ে বসল।
রিতু বলল, সামনের নভেম্বর মাসের একুশ তারিখ আমাদের নানির জন্মদিন।
মিঠুন হাততালি দিয়ে বলল, কী মজা! কী মজা!
রিতু মিঠুনের হাততালি শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল তারপর বলল, নানির এই জন্মদিনটা অনেক স্পেশাল।
টিটন জিজ্ঞেস করল, কেন এটা স্পেশাল, আপু?
এটা হচ্ছে নানির ষাট নম্বর জন্মদিন। যার মানে এটা হচ্ছে ডায়মন্ড জুবিলি। হীরক জয়ন্তী।
সবাই ছোট বড় কিংবা মাঝারি বিস্ময়ের শব্দ করল। মিঠুন মুখ শুকনা করে বলল, মায়ের বয়স ষাট বছর হয়ে যাবে? সেটা তো থুরথুরে বুড়ি। মরে যাবে এখন?
রিয়া ধমক দিল, বলল, ধুর থুরথুরে বুড়ি কেন হবে? ষাট বছর কোনো বয়সই না। আমি সেই দিন দেখেছি একজন ষাট বছর বয়সে বিয়ে করেছে।
এবারে মিঠুনকে আরো দুশ্চিন্তিত দেখালো, বলল, তাহলে দাদি কী আবার বিয়ে করবে?
সবাই হাসতে শুরু করল। টিটন মিঠুনের মাথায় চাটি দিয়ে বলল, ধুর গাধা! তুই তো দেখি এক নম্বর বেকুব।
মিঠুন বুঝতে পারল কথাটা একটু বেকুবের মতো হয়ে গেছে তাই আপাতত কিছুক্ষণের জন্যে সে চুপ করল।
রিতু বলল, যেহেতু এটা নানির ষাট নম্বর জন্মদিন তাই সেটা ঠিক করে করতে হবে। যাকে বলে ফাটাফাটি।
সবাই মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, ফাটাফাটি।
তাই আমি মিটিং ডেকেছি, কীভাবে জন্মদিনটা করা যায় সেইটা আলোচনা করার জন্য।
মিঠুন বলল, ষাট কেজি কেক, তার মাঝে ষাটটা মোমবাতি।
রিতু বলল, গুড।
টিয়া বলল, ডায়মন্ড জুবিলি হলে দাদির জন্য কিনতে হয়ে একটা ডায়মন্ডের নেকলেস।
রিতু নিশ্বাস ফেলে বলল, ডায়মন্ডের অনেক দাম। আমরা এত টাকা কই পাব?
টিটন বলল, আজকাল নতুন মোবাইল ফোন বের হয়েছে সেগুলো দিয়ে অনেক সুন্দর ফটো তোলা যায়।
তিতু অবাক হয়ে বলল, সত্যি? ফোন দিয়ে ফটো তোলা যায়? আজিব।
রিতু বলল, এইগুলোরও অনেক দাম হবে। তাছাড়া এই সব ফোন ক্যামেরা এই গুলোতে নানির কোনো উৎসাহ নাই।
টিয়া বলল, বই, আমরা ভালো বই দিতে পারি।
রিতু মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ, বই একটা ভালো গিফট। কিন্তু আমি আরো স্পেশাল কিছু ভাবছিলাম। যেটা আমাদের আজব ফেমিলির সাথে মিলবে।
তিতু বলল, নানিকে নিয়ে আমরা কক্সবাজার বেড়াতে যেতে পারি।
হ্যাঁ। রিতু মাথা নাড়ল। এটাও একটা ভালো গিফট হতে পারে। দেখি আর কোনো আইডিয়া আছে কী না।
রিতু একটা কাগজ আর কলম নিয়ে বসল, এবং যে যেটা বলছিল সেটাই লিখে ফেলল। সব মিলিয়ে তেরোটা আইডিয়া পাওয়া গেল সে গুলো এরকম :
১. ষাট কেজি কেক, তার মাঝে ষাটটা মোমবাতি।