আলম পাশ ফিরতে চেষ্টা করল। সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ল তীব্র তীক্ষা ব্যথা। আবার সে ডুবে যেতে শুরু করেছে। সে বিড়বিড় করে বলল, মতিন সাহেব মাথাটা একটু উঁচু করে দিন।
রাত্রি একা একা বারান্দায় বসে আছে। সে তাকিয়ে আছে নারকেল গাছের দিকে। সেখানে বেশ কিছু জোনাকি ঝিকমিক করছে। শহরেও জোনাকি আছে তার জানা ছিল না।
ভাল লাগছে। ওদরে দিকে তাকিয়ে থাকতে।
পাশের বাড়িতে দোতলা ফ্ল্যাটে একটি ছোট বাচ্চা কাঁদছে। তার মা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। একটি দু’টি করে তারা ফুটতে শুরু করেছে। রাত্ৰি লক্ষ্য করল আকাশের তারার সঙ্গে জোনাকিদের চমৎকার মিল আছে।
বাচ্চাটা কান্না থামিয়েছে। হয়ত দুধ বানিয়ে দিয়েছে তার মা। নিশ্চিত হয়ে ঘুমুচ্ছে। আহ শিশুরা কত সুখী।
সুরমা বারান্দায় এসে তাকালেন মেয়ের দিকে। তাঁর বুক ধক কবে একটা একটা ধাক্কা লাগল। রাত্রি!
কী মা?
এক একা বসে আছিস কেন?
রাত্ৰি জবাব দিল না। তাকিয়ে রইল জোনাকিব দিকে। সুরমা ক্লান্ত স্বরে বললেন, ভোব হতে দেরি নেই।
রাত্রি ঠিক আগের মতই বসে রইল। সুরমা বললেন, তুই চিন্তা করিস না। আমার মনে হয় ও সুস্থ হয়ে উঠবে। তোর মনে হয় না?
আমার কিছু মনে-টনে হয় না।
বলতে গিয়ে রাত্রির গলা ধরে গেল। ইচ্ছা করল চেঁচিয়ে কেঁদে উঠতে।
সুরমা বসলেন মেয়ের পাশে। একটি হাত রাখলেন তার পিঠে। অস্বাভাবিক কোমল স্বরে বললেন, দেশ স্বাধীন হয়ে যাবার পর আমি আলমের মার কাছে গিয়ে বলব চরম দুঃসময়ে আমরা আপনার ছেলের কাছে ছিলাম। তার ওপর আমাদের দাবি আছে। এই ছেলেটিকে আপনি আমায় দিয়ে দিন।
দুজনে অনেকক্ষণ কোনো কথা বলল না–রাত্রির চোখ দিয়ে ক্রমাগত জল পড়তে লাগল। সুরমা মেয়েকে কাছে টানলেন। চুমু খেলেন তার ভেজা গালে।
রাত্রি ফিসফিস করে বলল, জোনাকিগুলিকে আর দেখা যাচ্ছে না কেন মা?
জোনাকি দেখা যাচ্ছে না। কারণ ভোর হচ্ছে। আকাশ ফর্সা হতে শুরু করছে। গাছে গাছে পাখপাখালি ডানা ঝাপ্টাচ্ছে। জোনাকিদের এখন আর প্রয়োজন নেই।