ম্যানেজার নামক জীবটির এখনো কেন দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। মেয়েটি খবর দিয়েছে কী না কে জানে! নিজের ঘরে গিয়ে হয়ত গান শুনছে কিংবা ভিসিআর-এ আকালের সন্ধানে চালু করে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের চিন্তায় মগ্ন।
ফিরোজ কাপ হাতে নিয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়াল। ছাগল-দাড়ির এক লোক দু’টি অ্যালসেশিয়ানকে গোসল দিচ্ছে। সাবান দিয়ে হেভি ডলাডলি। কুকুর দু’টি বেশ আরাম পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। নড়াচড়া করছে না। লোকটি কুকুর দু’টির সঙ্গে ইংরেজি ভাষায় কথা বলছে। কাম কাম, সিট ডাউন, নটি বয়, বি কোয়ায়েট জাতীয় শব্দ শোনা যাচ্ছে। কুকুররা বিদেশী ভাষা। এত ভাল বোঝে কেন কে জানে! দেশী ঘিয়ে ভাজা কুত্তাকেও কাম হিয়ার বললে কুঁই-কুই করে এগিয়ে আসে। ফিরোজের বাথরুম পেয়ে গেল। কোনো বাড়িতে গিয়ে ফাট করে বলা যায় না। ভাই, আপনাদের বাথরুম কোথায়? মালদার পার্টিদের ড্রইংরুমের পাশেই ব্যবস্থা থাকে। এখানে নেই। ড্রইং রুম নাম দিয়ে কুৎসিত একটা জিনিস বানিয়ে রেখেছে। ছাদ পর্যন্ত উঁচু শো-কেসে রাজ্যের জিনিস। যেন একটা মিউজিয়াম; পয়সার সঙ্গে-সঙ্গে রুচি বলে একটা বস্তু নাকি চলে আসে। ডাহা মিথ্যে কথা। এই জিনিস সঙ্গে নিয়ে জন্মাতে হয়।
একটা পাঁচ বাজে। ম্যানেজার বাবুর দেখা নেই। ফিরোজের উচিত স্নামালিকুম বলে উঠে যাওয়া। স্নামালিকুম বলারও কেউ নেই। অহঙ্কারী মেয়েটি এ-ঘরে আর ঢোকেনি। হয়তো ভেবেছে এ-ঘরে ঢুকলেই থার্ড রেট একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম হয়ে যাবে। আরে বাবা, প্ৰেম এত সস্তা নয়! হুঁট করে হয় না! হুঁট করে প্ৰেম হয় কনজারভেটিভ ফ্যামিলিগুলিতে। ঐ সব ফ্যামিলির মেয়েরা পুরুষদের সঙ্গে মিশতে পারে না, হঠাৎ যদি সুযোগ ঘটে যায় তাহলেই বড়শিতে আটকে গেল। উপরিতলার মেয়েদের এই সমস্যা নেই। কত ধরনের ছেলের সঙ্গে মিশেছে!
ফিরোজ উঠে দাঁড়াল। শো-কেসটির সামনে কিছুক্ষণ কাটানো যায়। ভদ্রলোক দেশ-বিদেশে ঘুরে এত সব জিনিস। এনেছেন, কেউ একজন দেখুক। এই বাড়িতে যারা বেড়াতে আসে তাদের শো-কেস ও এ-রকম জিনিসে ভর্তি। এরা নিশ্চয়ই দেখার ব্যাপারে কোনো উৎসাহ বোধ করে না। আর থাকা যায় না, চলে যাওয়া উচিত। ডেকোবেশনে ব ফার্মটা তার হলে এতক্ষণে চলেই যেত। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, ফার্মটা তার নয়। এক’দিন যে এ-বিকম একটা ফার্ম তার হবে, সে-রকম কোনো নমুনাও বোঝা যাচ্ছে না।
ম্যানেজার বাবু ঠিক দেড়টার সময় এলেন। ফিরোজ প্রথম যে-কথাটি বলল, তা হচ্ছে বাথরুমটা কোথায়, আপনার কী জানা আছে?
অনেকক্ষণ থেকেই টেলিফোন বাজছে
অনেকক্ষণ থেকেই টেলিফোন বাজছে।
অপালা বারান্দায় ছিল, শুনতে পায়নি। ঘরের দিকে রওনা হওয়ামাত্র শুনল। টেলিফোন বেজেই যাচ্ছে, আহা না জানি কে! টেলিফোনের বিং হলেই আপালার কেন জানি মনে হয়, কেউ ব্যাকুল হয়ে ডাকছে। তার খুব একটা বড় সমস্যা। এই মুহুর্তেই তার কথা শোনা দরকার। এক বার সত্যিসত্যিা হলও তাই। রিসিভার তুলতেই ভারি মিষ্টি গলায একটি মেয়ে বলল, সালাম ভাইকে কী একটু ডেকে দেবেন? আমার খুব বিপদ।
অপালা বলল, সালাম ভাই কে?
আপনাদের একতলায় থাকে। প্লিজ, আপনার পায়ে পড়ি।
আমাদের একতলায় তো সালাম বলে কেউ থাকে না।
তাহলে এখন আমি কী করব?
বলতে-বলতে সত্যি-সত্যি মেয়েটি কেঁদে ফেলল। অপালা নরম স্বরে বলল, আপনার রঙ নাম্বার হয়েছে, আবার করুন, পেয়ে যাবেন। আমি রিসিভার উঠিয়ে রাখছি, তাহলে আর এই নাম্বারে চলে আসবে না।
মেয়েটি ফোঁপাতে-ফোঁপাতে বলল, নাম্বার ঠিক হলেও লাভ হবে না। ওরা ডেকে দেয় না।
তাই নাকি? হ্যাঁ।
শুধু যূঁথী বলে একটা মেয়ে আছে, ও ডেকে দেয়। কে জানে, আজ হয়তো যূঁথী নেই।
থাকতেও তো পারে, আপনি করে দেখুন।
আমাকে আপনি-আপনি করে বলছেন কেন? আমি মাত্র ক্লাস টেনে উঠেছে। আমাকে তুমি করে বলবেন।
মেয়েটার সঙ্গে তুমি-তুমি করে কথা বলার আর সুযোগ হয়নি। তার টেলিফোন নাম্বার জানা নেই। মেয়েটিও অপালার নাম্বার জানে না। রঙ নাম্বারের একটি ব্যাপারে অল্প পরিচয়। কত দিন হয়ে গেল, এখনও সেই মিষ্টি গলার স্বর অপালার কানে লেগে আছে। টেলিফোন বেজে উঠলেই মনে হয়, ঐ মেয়েটি নয়ত?
না, ঐ মেয়ে না। সিঙ্গাপুর থেকে অপালার বাবা ফখরুদ্দিন টেলিফোন করেছেন।
কেমন আছ মা?
খুব ভাল।
তোমার মার কোনো চিঠি পেয়েছ?
আজ সকালেই একটি পেয়েছি। মা এখন প্রায় সুস্থ।
সেকেন্ড অপারেশনের ডেট পড়েছে?
সে-সব কিছু তো লেখেননি।
এই মহিলা প্রয়োজনীয় কথাগুলি কখনো লেখে না। তুমি সন্ধ্যা সাতটা-সাড়ে সাতটার দিকে টেলিফোন করে জেনে নিও। এখানে সন্ধ্যা সাতটা মানে লন্ডনে ভোর ছয়টা।
আচ্ছা, আমি করব।
খুব একা-এক লাগছে নাকি?
না, লাগছে না। তুমি আসছ কবে?
আরো দু’দিন দেরি হবে। কোনো খবর আছে?
না, কোনো খবর নেই।
বসার ঘরটা নতুন করে সাজাতে বলে গিয়েছিলাম। কিছু হচ্ছে?
হ্যাঁ, হচ্ছে। ভীষণ রোগা আর লম্বা একটা ছেলে রোজ এসে কি সব যেন করছে। তার সাথে মিস্ত্রি-টিস্ত্রিও আছে।
কাজকর্ম কত দূর এগোচ্ছে?
তা তো জানি না। বাবা! আমি নিচে বিশেষ যাই না।
একটু বলে দিও তো, যাতে আমি আসার আগে-আগে কমপ্লিট হয়ে থাকে।
আমি এক্ষুণি বলছি।
আর শোন, তোমার মাকে কিছু জানিও না। সে এসে সারপ্রাইজড হবে।
আচ্ছা।
ঐ ছেলেটার নাম কী?
কোন ছেলেটার?