নগরবাসিগণ নব নব সাজে সজ্জিত হইয়া দলে দলে নগরের প্রান্ত সীমা সিংহদ্বার পর্যন্ত যাইয়া বিজয়ী আত্মীয়-স্বজনকে আগু বাড়াইয়া আনিতে উৎসুকনয়নে দণ্ডায়মান রহিয়াছেন।
সময় হইল প্রথম পদাতিকশ্রেণী বিজয় নিশান সহ দেখা দিল,-তৎপশ্চাৎ শস্ত্রধারী যোধসকল শ্রেণীবদ্ধরূপে আসিয়া সিংহদ্বার পার হইল। তৎপরে উষ্ট্রোপরি নকীবদল বাঁশরী বাজাইয়া নবভূপতির জয়-ঘোষণার সহিত আগমন-ঘোষণা অতি সুমিষ্টস্বরে নাকাড়া সহিত বাদ্য করিতে করিতে আসিল। তৎপরে নানারূপ বস্ত্রাভরণে সজ্জিত বীরকেশরীগণ অলঙ্কৃত অশ্বোপরি আরোহণ করিয়া হাসি হাসি মুখে নগরে প্রবেশ করিলেন।-তৎপরে রাজ আত্মীয় ও মহা মহা বীরবৃন্দ রত্নে খচিত জড়িত সাজে সজ্জিত হইয়া বৃহদাকার সজ্জিত অশ্বে আরোহণ ও ভীমকায় রক্ষী দলে পরিবেষ্টিত হইয়া প্রবেশ করিলেন। তাহার পর সুবর্ণ ও রজত দণ্ডে স্থাপিত কারুকার্যখচিত অর্ধচন্দ্র ও পূর্ণতারা সংযুক্ত বহুসংখ্যক নিশানধারী। অশ্বারোহী দলের পশ্চাতে, সুবর্ণদণ্ডে স্থাপিত কারুকার্যখচিত শুভ্র চন্দ্রাতপ শিক্ষিত উষ্ট্রোপরি স্থাপিত হইয়া আতপতাপ নিবারণ করিতেছে-এবং ঐ চন্দ্রাতপ নিন্মে মক্কা মদিনার রাজা, মুসলমান জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মজগতের সর্বপ্রধান ভূপতি, হজরত মোহাম্মদ মোস্তফার বংশধর মহামহিমান্বিত মহারাজাধিরাজ জয়নাল আবেদীন, নিষ্কোষিত অস্ত্রে সজ্জিত, সহস্র অশ্বারোহী রক্ষী পরিবেষ্টিত হইয়া বীর সাজে অশ্বারোহণে মৃদুমন্দ পদবিক্ষেপণে সিংহদ্বার পার হইয়া নগরে প্রবেশ করিলেন। অমনি দর্শক-শ্রেণী-মুখে জয়নাল আবেদীনের জয়, মদিনার সিংহাসনের জয়, জয় নবভূপতির জয় রব তুমুল আরবে বারবার ঘোষিত হইতে লাগিল। পরিবার পরিজনদিগের বস্ত্রাবৃত হাওদা পৃষ্ঠে উষ্ট্রসকল রক্ষিগণ কর্তৃক বিশেষ সতর্ক সাবধানে পরিলক্ষিত হইয়া মহারাজ পশ্চাৎ নগরমধ্যে প্রবেশ করিল। জনস্রোতের সহিত আনন্দস্রোত প্রবাহিত। দেখিতে দেখিতে পবিত্র রওজা সম্মুখে উপস্থিত। অশ্বারোহী উষ্ট্রারোহী স্ব-স্ব বাহন হইতে অবতীর্ণ হইলেন। কাড়া-নাকাড়ার কার্যসকল ক্ষণকালের জন্য বন্ধ হইল, পতাকা সকল অবনতমুখী হইয়া রওজার মর্যাদা রক্ষা করিল।
মহারাজ জয়নাল আবেদীন-যাত্রীদল সঙ্গীদল আত্মীয়স্বজনগণসহ পবিত্র রওজা মোবারক সপ্তবার তওয়াফ-মান্যের সহিত অতিক্রম করিয়া পূর্ব সাজ-সজ্জা ও বাদ্য-বাজনা সহিত জয়নিশান উড়াইয়া রাজপুরী প্রবেশ করিলেন। পরিবার-পরিজনেরা বহুদিনের পর বহু যন্ত্রণা উপভোগের পর ঈশ্বরের নাম করিয়া অন্তঃপুরমধ্যে প্রবেশ করিলেন।
গাজী রহমান এবং ওমর আলী প্রভৃতি কিছুদিন নবীন মহারাজের পরিসেবা করিয়া হরিষে বিষাদ মিশ্রিত মনভাবে স্ব-স্ব রাজ্যে গমন করিলেন। হরিষের বিষয় জয়নাল আবেদীন সপরিবারে বন্দিখানা হইতে উদ্ধার, রাজ্যলাভ। বিষাদের কারণ আর কি বলিব-মোহাম্মদ হানিফা চিরবন্দি!
– সমাপ্ত –